মুয্যাম্মিল হক উমায়ের।।
বয়স্ক একজন লোক হযরত কারী সিদ্দীক আহমাদ বান্দাবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলার কাছে এসে বলেন, হযরত! নামাযে অনেক খারাপ খারাপ খেয়াল অন্তরে চলে আসে। অন্তরে কুমন্ত্রনাও চলে আসে। এই কারণে আমার অন্তরে পেরেশানী কাজ করে। নামাযে মন বসাতে পারি না। হযরত তাকে শান্তনা দিয়ে বলেন,
আপনি পেরেশান হবেন না। কারণ, এই রোগ থেকে কেউ মুক্ত নয়। নামাযে বিভিন্ন ধরনের খেয়াল প্রত্যেকেরই আসে। আর এটি নামাযের খুশুর জন্যে কোন প্রতিবন্ধক না। অন্তরের উপমা হলো রাস্তার সাথে। রাস্তাতে জীব-জন্তুও চলে আবার মানুষও চলে। এখন যদি কেউ যাচাই করতে থাকে, রাস্তা দিয়ে বিড়াল কেনো যাবে? কুকুর কেনো যাবে?
গাধা কেনো যাবে? তাহলে তো সে পথ অতিক্রম করতে পারবে না। আর যদি সে নিজের মতো করে পথ সামনে চলতে থাকে, কে গেলো, কে আসলো, এই নিয়ে জেরা না করে, তাহলে সে পথ পাড়ি দিতে পারবে। অন্তরের ওয়াসওয়াসার বিষয়টিও হুবহু এমনই। অন্তর হলো বড় সড়কের মতো। সব ধরনের খেয়াল অন্তরে আসতে পারে।
যা আসার আসতে থাকুক। আপনি নিজের কাজে ব্যস্ত থাকুন। সেগুলো দূর করার চিন্তায় পড়া যাবে না। দূর করার চিন্তায় পড়ে গেলে, নিজের উপর পেরেশানী পোহাতে হবে। (আর শয়তান- এসব চিন্তা নিয়ে নামায হয় না- কুমন্ত্রনা দিয়ে মানুষকে নামায থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ারও সম্ভবনা আছে। তাই অন্তরে কী খেয়াল আসলো, সেগুলোর দিকে তাকানো যাবে না।
নিজের কাজে মনোযোগী হতে হবে। তবে ইচ্ছে করে অন্তরে কোন ধরনের খেয়াল নিয়ে আসা যাবে না। অনিচ্ছায় খেয়াল চলে আসলে, আমি আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন। নামাযের প্রতিটি রুকুন সুন্নত অনুযায়ী হচ্ছে কী না- এসব খেয়াল নিয়ে আসা। এতেকরেও অন্যসব খেয়াল অন্তর থেকে চলে যাবে-অনুবাদ)
নামাযে যেসব চিন্তা অনিচ্ছায় চলে আসে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা যাবে না। এমনকি সেগুলোকে দূর করার চিন্তাও না করা। কারণ, দূর করতে চাইলে এসব চিন্তা-খেয়াল আরো বেশি আসা শুরু হবে। তাই ঐসব দূর করার চিন্তা না করে, নামাযে যা যা পড়া হচ্ছে, সেগুলোর দিকে নজর দেয়া। অন্য দিকে মনোযোগ দেয়ার কারণে এসব চিন্তা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে।
নামাযের রুকুনগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়ার নামই হলো, খুশু। নামাযে কোন ধরনের খেয়াল না আসার নাম, খুশু নয়। নামাযের মধ্যে অচেতন অবস্থা সৃষ্টি করার নাম, খুশু নয়। একেবারে দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেখবর হয়ে যাওয়ার নাম, খুশু নয়। যদিও এমন অবস্থা আল্লাহ তাআলার কিছু নেক বান্দাদের অনেক সময় নসীব হয়ে যায়। কিন্তু এই অবস্থাকে নামাযের খুশু বলা হয় না। নামাযে যে খুশুর কথা বলা হয়েছে, সেটি হলো, নামাযে যা যা পড়া হয়, সেইদিকে খেয়াল রাখা।
নামাযের রুকুনগুলো সুন্নত তরিকায় আদায় করার চেষ্টা করা। যদি কখনো অন্তর অন্যদিকে চলে যায়, তখন আবার নামাযের রুকুনগুলোর দিকে নিয়ে আসা। মাঝখানে অন্যদিকে অন্তর চলে যাওয়ার দ্বারা যেটুকু ব্যাঘাত হয়েছে, তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ, সেটি অনিচ্ছয় ছিলো। দুই বার নামাযের দিকে খেয়াল রাখার মাঝখানে যে খেয়ালটি অন্যদিকে চলে গিয়েছিলো, সেটিও নামাযের দিকে খেয়াল রাখার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো, অন্যদিকের চিন্তা নিজের থেকে অন্তরে নিয়ে আসা যাবে না।
প্রথমে নামাযের মধ্যে তিলাওয়াত, রুকুনসমূহ ইত্যাদি পালনীয় বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেয়ার পর যদি অন্যদিকে মনোযোগ চলে যায়, অন্যদিকে মনোযোগ চলে গেছে বুঝতে পেরে, যদি দ্বিতীয়বার মনোযোগ নামাযের দিকে নিয়ে আসা যায়- এটিকেই খুশু বলে। এই নিয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত নয়। কারণ, এমন চিন্তা-ভাবনা নামাযে প্রায় সকলের অন্তরেই এসে থাকে। সূত্র: মাজালিসে সিদ্দীক
-এটি