মুফতী আনিছুর রহমান ।।
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। কবির ভাষায়, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই; ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’
যার এক টুকরো সান্ত্বনার বাণী আর হাত বুলানো জগৎসংসারের সকল দুঃখকষ্ট মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় তিনিই হলেন মা। শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম মাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামের দৃষ্টিতে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন গুণ বেশি।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, এক ব্যক্তি নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানতে চান, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে আমার কাছে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার?’ নবী করিম সা. বলেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি পুনরায় জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ লোকটি আবারও জানতে চান, ‘তারপর কার?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতার।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
নারী জীবনের একমাত্র পূর্ণতা ও সফলতাই রয়েছে নারীর মাতৃত্বে। মানব বংশ বিস্তার নারীর মাতৃত্বেরই সুফল। যে নারী মা হতে বঞ্চিত সে যেন পৃথিবীর সবকিছু থেকেই বঞ্চিত।
এজন্যই হজরত আয়শা রাদিআল্লাহু আনহা নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত স্ত্রীদের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় কুমারী হওয়া সত্বেও নিঃসন্তান হওয়ায় আম্মাজান হজরত খাদীজা রাদিআল্লাহু আনহার সমতুল্য হতে পারেননি।
কেননা, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মাতৃত্ব তথা মা হওয়ার সৌভাগ্য একমাত্র খাদীজা রাদিআল্লাহু আনহার'ই নসীব হয়েছিলো।
জান্নাতে মহিলাদের সর্দার হযরত ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা, হযরত খাদীজা রাদিআল্লাহু আনহার'ই মেয়ের নাম। এবং জান্নাতের যুবকদের দুই সর্দার হজরত হাসান ও হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহুমা হযরত ফাতিমা রাদিআল্লাহু আনহার দুই তনয়ের নাম।
নারীর মাতৃত্বের বিকাশ না ঘটলে এমন আরো হাজারো লাখো কোটি মহা মনিষীদের পৃথিবীতে আগমন ঘটতোনা। একমাত্র মাতৃত্ব দ্বারাই একজন নারীর নারীত্ব ও স্ত্রীত্বে পূর্ণতা আসে।
নারীর এই মাতৃত্ব রক্ষার প্রকৃতব্যবস্থাপনা হলো নারীর উদর, যা সর্বজন স্বীকৃত মানুষ তৈরির ‘পবিত্র এক খোদায়ী কারখানা’সে কারখানার পূর্ণ সংরক্ষণ করতে হবে।
পৃথিবীর মেইলফ্যাক্টোরির দামী আসবাবপত্রের সংরক্ষণ যেমনি দেয়ালঘেরা বেষ্টনীর মাধ্যমে করা হয়, তেমনিভাবে সৃষ্টির সেরা মানুষ উৎপাদনের মহামূল্যবান ফ্যাক্টরির আসবাব তথা নারীর মাতৃত্বের সর্বোচ্চ সংরক্ষণ আবশ্যক। আর সেটা হলো একমাত্র ‘ইসলামের পবিত্র বিধান পর্দা।’
পর্দার মাধ্যমেই একজন নারীর মাতৃত্ব যাবতীয় আকর্ষিত ক্ষতিকারক সকল বিষয়াবলী থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত হতে পারে।
পর্দার বিধান পালনে অভ্যস্ত নারীর নিজেদের লাজুকতা ও শালীনতা রক্ষার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদের ঝুঁকিও কমায়। আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে বলেন, ‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আহযাব: ৫৯)।
একজন নারীর বিশুদ্ধ মাতৃত্ব তথা সৎ সন্তান লাভে পর্দার অবদান অপরিসীম। যে সমাজ থেকে পর্দা উঠে যায় সে সমাজে নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা এবং অশান্তি আঁকড়ে ধরে। এবং অবাধ্য সন্তানের বিস্তার ঘটায় যা সমাজের শৃঙ্খলা নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পর্দা শুধু নারীদের জন্য নয়, পুরুষদের জন্য ও পর্দার বিধান রয়েছে। পুরুষরা নন মাহরাম নারীদের থেকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার মাধ্যমে পর্দা মান্য করবে।
আল্লাহ্ ও রাসূলের নির্দেশমত পর্দার বিধান পালনের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের জীবন-যাপন, ব্যক্তি-পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন চলার তাউফীক দান করুন।
লেখক: গবেষক, ইমাম ও খতিব
-এটি