মাওলানা যুবায়ের আহমাদ: বিশ্ব মানবতার পরম বন্ধু মুহাম্মদ সা. এর ‘জন্ম’ ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আওয়ালকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্র রাসুলুল্লাহ সা. এর প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছে, এ ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। কিন্তু ভালোবাসা প্রদর্শনের এ তরিকাটি ভুল। কারণ, জন্মবার (সোমবার) রাসুলুল্লাহ সা. রোজা রাখতেন।
সাহাবায়ে কেরামের কেউই নবীজি সা. এর জন্মবার বা তারিখকে ‘ঈদ’ বলেননি, ঈদ হিসেবে উদযাপন করেননি। তাছাড়া ১২ রবিউল আউয়াল রাসুলুল্লাহ সা. এর জন্ম তারিখ হওয়ার বিষয়টি কেবলই গবেষকদে অনুমাননির্ভর। এ নিয়ে আল বিদায়া ওয়ান নিয়াহাসহ ইতিহাসগ্রন্থগুলোতে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে।
সন্দেহ নেই, রাসুলুল্লাহ এর মিলাদ (জন্মবৃত্তান্ত) আলোচনা করা সওয়াবের কাজ। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সা. এর আদর্শ না মেনে শুধু জন্ম আলোচনা বা উদযাপন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি মিলবে না। মুক্তি পেতে হলে জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতে হবে। মহানবীর সা. দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে কী লাভ যদি রাষ্ট্রের জনগণকে সিরাত অধ্যয়ন ও চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা না হয়, পাঠ্য তালিকায় তাঁর জীবনীকে গুরুত্ব দেওয়া না হয়?
বিশেষ দিবস পালন নয়, মুক্তি পেতে হলে রাসুলুল্লাহ সা. এর আদর্শ, সুন্নাত মানতে হবে জীবনের সব ক্ষেত্রে। আর সিরাত মানতে হলে আগে জানতে হবে।
বিশেষ একটি দিবসকেন্দ্রিক না হয়ে পুরো রবিউল আউয়াল মাসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সিরাত অধ্যয়ন মাস ঘোষণা করা হোক! ইসলামিক ফাউন্ডেশন এজন্য ক্যাম্পেইন করবে, জনগণের মাঝে স্বলপমূল্যে সিরাতগ্রন্থ বিতরণ করবে।
মাসব্যাপী জেলা, উপজেলা ও থানায় সিরাতুন্নবী আলোচনার আয়োজন হবে। সিরাত অধ্যয়ন মাস শেষে জাতীয়ভাবে সিরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হোক! ঘোষণা করা হোক জাতীয় সিরাত স্বর্ণপদকের।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির হাতে রাসুলুল্লাহ সা. এর সিরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার প্রদান করা হোক! তখনই রাসুলুল্লাহ সা. এর প্রতি রাষ্ট্রের ভালোবাসার সুফল রাষ্ট্র পাবে।পাঠ্য তালিকায় সিরাত অধ্যয়নের গুরুত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির মধ্যে ৫ ভাগে গল্পে গল্পে শিশুদের সিরাত পড়ানোর ব্যবস্থা এবং ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণিতে ৫ ভাগে বিস্তারিত সিরাত পাঠদানের ব্যবস্থা রাখা উচিৎ। আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্ম হবে মাদকমুক্ত আলোকিত প্রজন্ম। তাদের আখলাক হবে উন্নত।
আমরা আমাদের সন্তানদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়তে চাই, রাষ্ট্রের শিশুদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়তে চাই। যে আলোকিত জীবনের পরশ পেয়ে আবুবকর, উমর, উসমান, আলী নিজেদের সোনার মানুষে পরিণত করেছিলেন, সে আলোকিত মানুষ মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে পারলেই আগামী দিনে তারা হবে সোনার মানুষ। তাই, প্রতিটি পরিবারের অভিভাবকের উচিত তার পরিবারের সবার জন্য সিরাত অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট, ওয়ায়েজ
-এটি