মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

প্রকৃত মুমিন হতে হলে করণীয় কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আনিছুর রহমান।।

একজন মানুষ ঈমান গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের ছায়াতলে এসে মূলতঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ও অধিনস্থ হয়ে যায়। যেমনটি স্বয়ং আল্লাহ তাঁর কুরআনুল কারীমেই বলেছন।

আল্লাহই হচ্ছেন তাদের অভিভাবক যারা ঈমান এনেছে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা ঈমান গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে তাদের পৃষ্ঠপোষক হলো তাগুত তথা পথভ্রষ্ট শাসকরা যারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়,বস্তুতঃ তারাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে'। (সূরা বাকারা ২৫৭)

উক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, স্রেফ জন্মসূত্রে বা কালিমা পড়ে ঈমান গ্রহণ করলেই প্রকৃত মুমিন হওয়া সম্ভব নয়,বরং মুমিনের যথাযথ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য যতক্ষণ না নিজের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে ততক্ষণ আল্লাহর ভাষায় প্রকৃত মুমিন হওয়া যাবেনা।
অতএব আমাদেরকে যেসব গুনে গুণান্বিত হতে হবে সেগুলোর অন্যতম হলো:- সন্দেহমুক্ত দৃঢ় ঈমান এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম ও সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে উক্ত ঈমানের প্রমাণ উপস্থাপন।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন ‘প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। অতঃপর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। বস্ত্ততঃপক্ষে তারাই হ’ল সত্যনিষ্ঠ’ (হুজুরাত ১৫)

উল্লেখ্য:-‘জিহাদ’ অর্থ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। যা কথা, কলম, সংগঠন তথা সার্বিকভাবেই হয়ে থাকে। সশস্ত্র জিহাদও এর মধ্যে শামিল। যুগে যুগে উদ্ভূত শিরকী দর্শনচিন্তা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাওহীদভিত্তিক দর্শনচিন্তা ও সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশ সাধনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করাই হ’ল ইসলামের চিরন্তন জিহাদ। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যা সর্বদা সর্বত্র প্রযোজ্য। সেদিকে ইঙ্গিত করেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা জিহাদ করো মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের মাল দ্বারা, জান দ্বারা ও যবান দ্বারা’।(আবুদাঊদ ২৫০৪) কুরআনের সর্বত্র জিহাদের বর্ণনায় আল্লাহ প্রথমে মালের কথা এনেছেন। কারণ জিহাদে প্রথম মালের প্রয়োজন হয়।

মুমিনের আরোও সাতটি গুণ বর্ণনা করে সূরা মু'মিনুনে আল্লাহ বলেন, ‘সফলকাম হলো ঐসব মুমিন’ (১) ‘যারা তাদের সালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’ (২) ‘যারা অনর্থক ক্রিয়া-কর্ম এড়িয়ে চলে’ (৩) ‘যারা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে’ (৪) ‘যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ (৫) ‘নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না’ (৬) ‘অতঃপর এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হলো সীমা লংঘনকারী’ (৭) ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে’ (৮) ‘যারা তাদের সালাত সমূহের হেফাযত করে’ (৯) ‘তারাই হলো উত্তরাধিকারী’ (১০) ‘যারা উত্তরাধিকারী হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (মুমিনূন ১-১১)।

উপরোক্ত আয়াতগুলিতে মুমিনের ৭টি গুণ বর্ণিত হয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ হলো ‘তারা সালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’। তারা খুশূ-খুযূর সাথে তন্ময়-তদ্গতভাবে সালাত আদায় করে। এর বিপরীতে কুরআনের অন্যত্রে আরও দু’প্রকার মুসল্লীর কথা এসেছে। একদল মুসল্লী হলো ‘উদাসীন’ আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ ঐসব মুছল্লীর জন্য, যারা তাদের সালাতে উদাসীন’ (মাঊন৫)। অন্য একদল মুসল্লী হলো ‘অলস’ এটা হলো মুনাফিকদের সালাত।

আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে দাঁড়ায়’ (নিসা১৪২)। আয়াতদৃষ্টে বুঝা যায় যে, উদাসীন ও অলস মুসল্লীরা জাহান্নামী হবে এবং কেবল মনোযোগী মুসল্লীরাই জান্নাতী হবে। আর তারাই হলো সফলকাম মুমিন।
কেননা হৃদয় মনোযোগী হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মনোযোগী হয়। আর উভয়ের সহযোগে কর্ম সফল হয়। হৃদয়ের টান ও আকর্ষণ না থাকলে কোন কর্মই যথার্থ হয় না। আর আল্লাহর কাছেও তা কবুল হয় না।

সাতগুণের আরোও একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো লজ্জাস্থানের হেফাজত করা এবিষয়ে রাসূল সাঃ বর্ণনা করেছন,'যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্‌বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তাঁর জান্নাতের যিম্মাদার।(সহীহ বুখারী৬৪৭৪)

দুনিয়াতে যত ফিতনা ফাসাদ ও অপকর্ম সংঘটিত হয় তার অধিকাংশই হয়ে থাকে জিহ্‌বা ও লজ্জা স্থানের দ্বারা । এ দুটোকে যে সংযত করবে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ।

কাফিরদের সাথে শক্ত দিল আর মুমিনদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরন করবে। যেমন: মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল৷ আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ৷ (সুরা ফাতহ ২৯)

অন্যদের উপাস্যকে গালি না দেয়া:- আর ( হে ঈমানদারগণ!) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না৷ (আনআম ১০৮)

সঠিকভাবে ওজন করা ওজনে কম না দেয়া। আল্লাহ বলেন, ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়৷(মুতাফ্ফিফীন-১)
তোমরা ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো (আনআম ১৫২)

মানুষকে সৎ কাজের উপদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া: আল্লাহ বলেন 'তোমরা সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে বাঁধা দিবে,আর আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। (আলে ইমরান ১১০) আল্লাহ তাআ'লা আমাদের এসকল গুণে গুণান্বিত করুন।

লেখক: গবেষক,ইমাম ও খতীব।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ