রফিকুল ইসলাম জসিম>
নিজস্ব প্রতিবেদক>
সেতু আছে, সংযোগ রাস্তা নেই, চার বছর আগে চার কোটি টাকা ব্যয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শুকুর উল্লার গ্রামের এই ধলাই সেতুটি নির্মিত হয়। তবে সেতুটির সংযোগ সড়ক এখনো তৈরি করেনি। ফলে সংযোগ রাস্তা না থাকায় চলাচল করতে অসুবিধা হওয়ায় সেতুটি তাদের কপালে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জনস্বার্থে সেতুর সংযোগ সড়ক পাকাকরণ কাজ জরুরি ভিত্তিতে করার দাবি জানান এলাকাবাসী।
বর্তমানে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কয়েক হাজার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার বেহাল দশা থাকলেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও সড়কের দু’পাশে অপ্রয়োজনীয় গাছপালা গজিয়ে উঁচু জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। যেটা রাতের বেলায় ডাকাতসহ দুষ্টু প্রকৃতির মানুষের কাজে সহায়ক। যে কারনে শিক্ষার্থীদের চলাফেরা ও গভীর রাতে সড়কের পাশের ঝোপঝাড় সৃষ্টিতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। এমন চিত্রটি দেখা মেলে সেতু সংলগ্ন হইতে ঘোরামারা সকড় পর্যন্ত। প্রায়ই ঘটে ডাকাতির মত ঘটনা। পথচারীদের হারাতে হয় কাছে থাকা মালপত্র। তাই অনেকের কাছে এটা আতঙ্ক বিরাজ করে।
রাস্তায় দুই পাশে জঙ্গলের কারণে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা এবং ছিনতাইয়ের মতো অসামাজিক ঘটনা ঘটছে এমন অভিযোগ করে সংযোগ সড়ক তৈরি করে দ্রুত পাকা করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, দুই ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস। সংযোগ সড়ক না থাকায় ২০ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হচ্ছে তাদের। এই সেতু পার হয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। সড়কটি কাঁচা হওয়ায় কেউ অসুস্থ হলে অনেক কষ্ট করে তাকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে স্কুল, কলেজে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তাটি নির্জন হওয়ায় ঝুঁকি যাতায়াত করতে হয় তাদের।
মাধবপুরের বদলের গাঁও, বামনগাঁও, ঝাপের গাঁও, শিমুলতলা, দঃ তিলকপুর, ছয়ছিড়ি শুকুর উল্লার গ্রামর সহ অনেক অভিভাবক আতঙ্কে ভুগছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে। আদমপুর বাজারে তেতই গাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও রানীবাজারে দয়াময় উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছেন৷ অনেক শিক্ষার্থী ভোর বেলায় টিউশনির জন্য একা যেতে হয়৷ সাম্প্রতিক কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কারণে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের একা যেতে দেইনি৷ এখন অনেক অবিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের এগিয়ে দেন ঘোরামারা পাকাসড়ক পর্যন্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ জুম্মা মিয়া আওয়ার ইসলামকে বলেন, সংযোগ সড়ক তৈরি করে দ্রুত পাকা করা এখন সময়ের দাবি। গত বছর সেতু ও সড়কটি পরিদর্শন করেছেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ রফিকুর রহমান। তিনি একাধিকবার আশ্বাস দেওয়ার পরও সংযোগ সড়ক হয়নি।
মোঃ জুম্মা মিয়া আরও বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা হেঁটেও চলাচল করা যায় না। শুকনো মৌসুমেও ভোগান্তির শেষ নেই। আরেক বাসিন্দা জুয়েল আহমেদ আওয়ার ইসলামকে বলেন, এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা। আমাদের এলাকার মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে হচ্ছে না সড়কের কারণে। আমাদের এখানে কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না। সড়কটির জন্য আমাদের কষ্টের শেষ নেই।
এই রাস্তায় জঙ্গলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা এবং ছিনতাইয়ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে বাঁচাতে এবং নিরাপদ সড়কের পরিবেশ সৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় গাছ ঝোঁপঝাড় কাটার উদ্যোগ নিয়েছেন আদমপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত তিনি নিজে থেকে এ কাজে সহযোগীতা করেন।
মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, সড়কের পাশের জঙ্গলের কারনে তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন কেটে নিরাপদ সড়কের জন্য। রাতে এ জঙ্গলের মধ্যে ডাকাতরা বসে থাকলেও বোঝার উপায় থাকে না। যে কারনে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। প্রতি বছরের মতো এবারেও রাস্তার প্রায় অর্ধ- কিলোমিটারের মত জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে। বাকিটাও তাড়াতাড়ি শেষ হবে।
মোঃ হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, ‘ সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় ও সড়কের বেহাল অবস্থা থাকায় এলাকাবাসীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অতি দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে দুই ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও একধাপ এগিয়ে যেত।’
-এটি