।।কাউসার লাবীব।।
সবাইকে অবাক করে মাত্র পাঁচ মাসে কোরআনুল কারীম হিফজ সম্পন্ন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নরসিংদী সদরে অবস্থিত মাদরাসাতুল মাদীনার শিক্ষার্থী হাফেজ মুহাম্মদ মাজেদুল ইসলাম।
মাজিদুলের পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়। তার বাবা একজন প্রবাসী। মায়ের দিক-নির্দেশনাতেই সে ভর্তি হয় মাদরাসাতুল মাদীনায়। এখানে হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসাইনের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।
[caption id="" align="aligncenter" width="436"] মায়ের সঙ্গে হাফেজ মাজিদুল ইসলাম।[/caption]
পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘নিশ্চয়ই আমিই কোরআন নাজিল করেছি এবং অবশ্যই আমিই তা সংরক্ষণ করব।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৯)।
এই জমিনে আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতের মাধ্যমে কীভাবে পবিত্র এ মহাগ্রন্থকে সংরক্ষণ করবেন? এ নিয়ে মোফাসসিরিনে কেরামের অনেক মতামত রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, তিনি মুমিনের হৃদয়ে কোরআন গেঁথে দেয়ার মাধ্যমে সংরক্ষণ করবেন। সেই ধারাবাহিকতায় নবী করিম সা. এর যুগ থেকে আজ অবধি চলে এসছে পবিত্র কোরআনুল কারীম হিফজ বা মুখস্থ করার এ ধারা।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তো কোরআন শেখার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সুরা ক্বামার, আয়াত: ১৭)। বিশ্বব্যাপী কোরআন গবেষকগণ বিভিন্ন পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন, যেন সহজেই কালামুল্লাহকে মুমিনদের হৃদয়ে বসিয়ে দেয়া যায়। তাই বিশ্বে নানা পদ্ধতিতে কোরআন মুখস্থের ধারা অব্যাহত আছে। আমাদের সবুজ এ মাতৃভূমিও এর ব্যতিক্রম নয়।
[caption id="" align="aligncenter" width="292"] বইটি সংগ্রহ করতে ছবিতে ক্লিক করুন অথবা কল করুন- 01918-188085 নাম্বারে।[/caption]
একটা সময় ছিল আমাদের দেশে কোরআনুল কারীম হিফজ করতে ছাত্রদের প্রায় একযুগের মতো সময় লেগে যেত। কারো লাগতো সাত থেকে আট বছর। কিন্তু কোরআন গবেষকগণ দিনরাত এক করে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে এখন অতি অল্প সময়ে সে কাজটি করছেন। যার ফল আজকের হাফেজ মুহাম্মদ মাজিদুল ইসলাম।
মাজিদুল ইসলামের উস্তাদ হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসাইন একজন চিন্তক শিক্ষক। তিনি সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত ও দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে দেখেছেন কীভাবে সেসব দেশে ছাত্রদেরকে কোরআনুল কারীম হিফজ করানো হয়। দীর্ঘ সময় গবেষণা ও নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি লিখেন, সহজ কোরআন শিক্ষা পার্ট-১, পার্ট-২ ও পার্ট-৩।
[caption id="" align="aligncenter" width="402"] নরসিংদীর মাদরাসাতুল মাদীনার হিফজুল কোরআন বিভাগের প্রাণজুড়ানো দৃশ্য।[/caption]
তার রচিত এ বইগুলোর মাধ্যমে মাদরাসায় ভর্তি হওয়া একজন নতুন ছাত্র মাত্র ১৫০টি ক্লাসে পবিত্র কোরআনুল কারীমের নাজেরা (রিডিং) কমপ্লিট করতে সক্ষম হোন। আর হিফজুল কোরআন বিভাগে যাওয়ার পর হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসাইনের বুদ্ধিদীপ্ত ও অক্লান্ত পরিশ্রমে ছাত্ররা খুব স্বল্প সময়েই হিফজুল কোরআন সম্পন্ন করতে সক্ষম হোন। তার অসাধারণ শিক্ষকতায় ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী আলো ছড়াচ্ছেন নরসিংদীর মাদরাসাতুল মাদীনা।
মাজিদুল ইসলামের হিফজ সম্পন্ন ও মাদরাসাতুল মাদীনার সাফল্য বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসাইন আওয়ার ইসলামকে বলেন, নরসিংদীতে মাদরাসাতুল মাদীনা ভিন্ন একটি ধারা ও স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মাজিদুল ইসলামের মতো অনেকেই অল্প সময়ে হিফজ সম্পন্ন করছেন। তবে আমরা চেষ্টা করছি আরো কম সময়ে কীভাবে ছাত্রদেরকে হিফজ সম্পন্ন করা যায়।
মাওলানা বেলাল হোসাইনের মতো অন্যান্য কোরআনের খাদেমগণ নিজেদের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হিফজুল কোরআন বিভাগ নিয়ে কাজ করে গেলে, আশা করা যায় বাংলাদেশে কোরআন হিফজের এক অনন্য বিপ্লব সাধিত হবে। দেশের প্রধান প্রধান শহরের মতো মফস্বল শহরগুলোতেও ছড়াবে পবিত্র কোরআনের নির্মল আলো। আমরা পাবো লাখো মাজিদুল ইসলাম।
-কেএল