সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা
গোয়াইনঘাটে সিলেট থেকে>
প্রকৃতিতে যখন শরৎ কাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় তার আগমনী বার্তা। সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে পিয়াইন নদী ঘেঁষে সংগ্রামপুঞ্জির মায়াবী ঝর্ণার খাসিয়া পুঞ্জির নিচে সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো কয়েক একর জায়গা জুড়ে সাদা কাশফুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের মাঝে। বর্তমান সময়ে জাফলং পর্যটন স্পটে পর্যটক-আর দর্শনার্থীদের কাছে প্রধান আকর্ষণ প্রখর রোদ আর মেঘের লুকোচুরিতে আদ্র বাতাসে দোল খাওয়া সাদা কাশফুল।
সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণ ভাবে মোহাবিষ্ট করে। এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন জাফলং পর্যটন স্পটে। ভ্রমন পিয়াসীদের কাছে জাফলং এর আকর্ষণই যেন আলাদা। সিলেট ভ্রমণে এসে জাফলং না গেলে ভ্রমণই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।
জাফলংয়ে শীত ও বর্ষা মওসুমের সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন। বর্ষায় জাফলং এর রূপ লাবণ্য যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। ধূলি ধূসরিত পরিবেশ হয়ে উঠে স্বচ্ছ। স্নিগ্ধ পরিবেশে শ্বাস-নি:শ্বাসে থাকে ফুরফুরে ভাব। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজাভ চূড়ায় তুলার মত মেঘরাজির বিচরণ এবং যখন-তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পাহাড়ি পথ হয়ে উঠে বিপদ সংকুল-সে যেন এক ভিন্ন শিহরণ। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে নেমে আসা সফেদ ঝর্ণাধারার দৃশ্য যে কারোরই নয়ন জুড়ায়।
প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রাণী- এসব নামেও পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে জাফলং এর আকর্ষণই যেন আলাদা।
প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো সাদা কাশফুল জাফলং এর সৌন্দর্য আরো বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পর্যটক পিয়াসীদের কাছে টানছে। সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণায় এখন পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সাদা কাশফুল। মায়াবী ঝর্ণায় পানি না থাকলেও আগত পর্যটকদের সেই অভাবটা পূরণ করছে নীল আকাশের নীচে রোদ আর মেঘের মিতালীতে, আদ্র বাতাসের গলাগলিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই কাশফুল। একটু দূর হতে দেখলে মনে হবে বরফ জমেছে, নতুবা মনে হবে সাদা বক পাখিদের অভয়ারণ্য।
সবুজ প্রকৃতিতে বাতাসের সঙ্গে খেলা করে সাদা কাশফুল দর্শনার্থীদের রশদ যোগাচ্ছে। সবুজ আর সাদা দু’টিই শান্তির প্রতিক। আর এই দুইটি ঘিরেই কাশফুল। তাই খুব সহজেই এটি মানুষের মনকে সাজিয়ে তোলে। যা দেখে মুগ্ধ হয়ে উঠছে দর্শনার্থীরা। কাশফুলকে ঘিরে দর্শনার্থীদের পদচারণা ঘটে। স্মৃতি হিসেবে সবাই ক্যামেরায় ধারণ করে কাশফুলের ছবি।
নিজেদের ছবি তোলাও বাদ যায় না। বন্ধুমহল, স্বামী-স্ত্রীসহ অনেককেই কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে। আবার তরুণীরা গাছ থেকে ছিঁড়ে কাশের গোছা সঙ্গে করেও নিয়ে যায়। শরৎ মানেই স্নিগ্ধতা এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়।
প্রকৃতিতে শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি।
জাফলং ইনচার্জ ইউনিটের ওসি রতন শেখ জানান, কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। জাফলংয়ে প্রতিবছরই প্রাকৃতিকভাবে কাশবন জন্মায়। জাফলং আসা পর্যটকর ও দর্শনার্থীরা মায়াবী ঝর্ণা, জাফলং পর্যটন কেন্দ্র এবং এই কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।তিনি বলেন, যারা জাফলং আসলো আর কাশবন দেখলোনা তারা সৌন্দর্যের অনেক কিছু মিস করলো। তিনি আরো জানান, জাফলং পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সেবার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশ সদা সোচ্চার। পর্যটকদের যেকোনো সমস্যায় টুরিস্ট পুলিশের সরকারি নাম্বারে কল দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
-এটি