মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ।।
যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার সব পরিচয় মুছে যায়। মৃত্যু মানুষের সব পরিচয় মুছে দেয়। তখন শুধু ঈমান ও আমলে ছালেহ-এর পরিচয় বাকি থাকে। আখেরাতে অন্য কোনো পরিচয় কাজে আসবে না। একমাত্র এই পরিচয়ই কাজে আসবে যে, সে মুসলমান, সে ঈমানদার।
সুতরাং মুসলমান পরিচয়টা যেহেতু আমাদের সবসময় কাজে আসবে সেহেতু এ পরিচয় আমাদের থেকে কখনো যেন ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আর দুনিয়াতেও যদি কেউ বাস্তব অর্থে সুখী হতে চায়, তাহলে তার জন্য এ পরিচয় অপরিহার্য।
এই যে আমাদেরকে ইহ-জীবনে এবং পরজীবনে শ্রেষ্ঠদের সাথে মিলিত হতে হবে; সেই মিলার জন্য আমাদের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল নামায। এই সামান্য একটা কাজ এটা আমাদেরকে একেবারে সেরাদের সাথে মিলিয়ে দেয়। আখেরাতে সর্বপ্রথম হিসাব হবে নামাযের। এখন তো তোমাদের জীবনটা মাত্র শুরু। এখন থেকে যদি তুমি নামায ধরে নাও তাহলে তুমি একটা সময় বলতে পারবে- আলহামদু লিল্লাহ, আমার জীবনে কোনো নামায কাযা নেই। যদি এখন থেকে ত্রিশ বছর পর তুমি নামায ধর তাহলে ত্রিশ বছরের কাযা নামায আমাকে পরে পড়তে হবে। এক বছরের কাযা নামায পড়াই তো মুশকিল। হিসাব তো আমাকে দিতেই হবে। তো এই হিসাবের বোঝাটাকে বড় করে কী লাভ? ঈমান নিয়ে যাব। ঈমান একটা গাছ। এই গাছের ফল হল, আমলে ছালেহ- নেক আমল। এর ফুল হল, নামায। অনেক কাজ করলাম জীবনে, কিন্তু ফল হল না। আমার ঈমানের বৃক্ষ কোনো ফল দিল না। আমি ঈমানদার এটা তো আমাকে প্রমাণ দিতে হবে। যদি আমি নামায না পড়ি তাহলে কিন্তু সেটা প্রমাণ হল না। পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিক মত পড়ো। নামায পড়তে কতক্ষণ সময় লাগে? এত প্রস্তুতিও লাগে না। নামায হল সবচেয়ে সহজ।
আমার কোচিং আছে, ক্লাস আছে, আমি স্কুলে যাচ্ছি, আমার পড়াশুনা আছে, সব ঠিক আছে, কিন্তু নামায যেন যথা সময়ে হয়ে যায় এটা খেয়াল রাখতে হবে। এখন থেকে এই মজলিস থেকে যদি তোমরা নামাযের বিষয়ে যত্নবান হয়ে যাও, যদি তোমাদের জীবনের একটা অভ্যাস গড়ে নাও যে জীবনে কোনো নামায কাযা করবে না। নামাযের সময় হলে আমি যেখানেই থাকি নামায পড়ে নেব। বাসায় আছি নামায পড়ে নেব। স্কুলে আছি, কলেজে আছি ওখানেই নামায পড়ে নিব। নামায ছাড়ব না। নামায কাযা হবে না। তাহলে জীবনে একটা সময় বলতে পারবে, আমার ষাট সত্তর বছর বয়স। কিন্তু আলহামদু লিল্লাহ, আমার নামায কাযা হয়নি।
এখন নামাযের কথা যখন মসজিদে বলি বয়স্ক লোকেরা হা হুতাশ করে, কাঁদে- নামাযের কারণে আল্লাহ্র কাছে হিসাব দিতে হবে। এখন কেন কাঁদে? কারণ তোমাদের মত থাকা অবস্থায় তারা নামাযের প্রতি মনোযোগী হয়নি। এখন একেকজনের অনেক বছরের নামায কাযা। কারো পাঁচ বছর, কারো দশ বছর। কারো আরো বেশি। হিসাব করো তো, পাঁচ বছরে মোট কত ওয়াক্ত নামায কাযা হয়। এত ওয়াক্ত নামায কীভাবে পড়বে? এখন তোমাদের জন্য সহজ। যখনকার কাজ তখন সেরে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র কাছে তোমাদের অনেক মূল্য হবে। জীবনভর আল্লাহ্কে স্মরণ করেছ বলে গণ্য হবে। এভাবে আল্লাহ তাআলার সাথে তোমাদের একটা সম্পর্ক হবে, বন্ধুত্ব হবে।
অনুলিখন: এনামুল হাসান।
এনটি