মুহাম্মাদ আবূ মূসা কাসেমী ।।
আমাদের ভরসা হোক একজনই। তার কাছেই আমাদের চাওয়া-পাওয়া হোক। মহান আল্লাহর কাছে ফিরতে পারলেই মানুষের সফলতা। আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার কারণেই হেরে যাচ্ছে। একটি প্রবাদ আছে, ‘মালিক যার সবকিছু তার।’ আল্লাহ খালেক, বান্দা মাখলুক। আল্লাহ মাবুদ, বান্দা তার আবেদ। আল্লাহ সামি তথা সবকিছু শুনেন। আল্লাহ বাসির তথা সবকিছু দেখেন। আল্লাহ আলিম তথা সবকিছু জানেন। আল্লাহ খাবির তথা সব খবর রাখেন। আল্লাহ কাদির তথা সব ক্ষমতা রাখেন।
একজনকে ফাঁকি দেয়া যায় না। তবে মানুষ একজন আরেকজনকে ফাঁকি দিতে পারে। কিন্তু আল্লাহকে কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। ফাঁকি দিতে গিয়ে নিজেই ফাঁকে পড়ে যায়। ধরা খেয়ে যায়। কেউ দুনিয়ায় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাময়িক বেঁচে যেতে পারে কিন্তু পরপারে নিশ্চিত আটকে যাবে। মিথ্যা অনেক বড় অপরাধ। মিথ্যা বা ধোঁকায় সমাজ নষ্ট হয়।
দুনিয়ার সামান্য লোভে যারা বিভোর থাকে, অন্ধ হয়ে যায়, সত্যকে মিথ্যা মনে করে, আর মিথ্যাকে নাজাত মনে করে, সবকিছু জেনে শুনেও সত্য গোপন করে, আর জ্বলন্ত মিথ্যাকে আপন মনে করে, মহান আল্লাহর পথভুলে মনমতো জীবনযাপন করতে ভালোবাসেÑতারা পরকাল হারায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে সংমিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না (সূরা বাকারা : আয়াত ৪২)।
কখনও নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলতেন না। সত্যবাদি হওয়ার কারণে তিনি মক্কার মানুষের কাছে আল আমিন উপাধি পেয়েছিলেন।
কেবল মিথ্যা নয়, সামান্য হাস্য-রসিকতার ছলেও মিথ্যা বলতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
সামান্য লোভে যারা নিজের সুন্দর জীবনকে বিলীন করে দেয়। আপনকে পর মনে করে। আর পরকে আপন মনে করে। সর্বত্রই দ্বিমুখী মনোভাব পোষণ করে। রাববে কারিমের কাঠগড়ায় তাদেরকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে।
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জবাবদিহি করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি)
বান্দা কীভাবে তার রবকে ভুলে যায়। কিন্তু রব তার বান্দাকে কখনও ভুলেন না, ভুলতে পারেন না। বরং তাকে আশ্রয় দেন। ভালোবাসেন, মর্যাদার আসনে সমাসীন করেন। আল্লাহ ছাড়া বান্দার আপন আর কেউ নেই। মূলত পর কখনো আপন হয় না, আপন ভাবাও যায় না। এ-ই জন্য আল্লাহকে আপন বানাতে হবে। যা চাওয়ার আছে তাঁর কাছেই চাইতে হবে। যা পাওনা তার থেকেই নিতে হবে। আল্লাহই আমাদের একমাত্র আশ্রয়।
লেখক: শাইখুল হাদিস ও সদরুল মুদাররিসীন, জামিয়া আফতাবনগর, ঢাকা
-এটি