মুফতি জিলানি: (উস্তাদে মুহতারাম আল্লামা মুফতী তকী উসমানী আসলেই তিনি হাদীসের বাস্তব নমুনা। ( من تواضع لله رفعه الله যিনি আল্লাহর জন্য বিনয় হন আল্লাহ তাকে উঁচু মর্যাদা দান করেন।)
১৯৯৯ সালে দারুল উলুম করাচীর শাইখুল হাদীস যুগশ্রেষ্ট বুযর্গ আল্লামা সাহবান মাহমুদ রহ, ইন্তিকাল করেন আমরা তখন দারুল উলুম করাচীতে ইফতা ১ম বর্ষে।
[caption id="" align="aligncenter" width="333"] বইগুলো সংগ্রহ করতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]
স্বভাবতই মাদরাসার শুরা কমিটি মুফতী তকী সাহেবকে বুখারীর দরসের দায়িত্ব দেন। কিন্তু হযরত এ কথা বলে সাফ নিষেধ করে দেন যে, তিরমিযী শরীফের দায়িত্ব পালনে আমার থেকে পুরা হক আদায় হচ্ছেনা, তাই আমার দ্বারা এতবড় দায়িত্ব আদায় করা সম্ভব নয়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে হযরতের ভাতিজা দারুল ইফতার মুশরিফ হযরত আল্লামা মুফতী মাহমুদ আশরাফ উসমানীকে বুখারী শরীফ এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও এ বলে এড়িয়ে যান যে, ' আমার দুই চাচাজান ( মুফতী তকী সাহেব ও দারুল উলুমের মুহতামিম মুফতী রফী উসমানী সাহেব) জীবিত থাকাকালীন আমার উপর বুখারীর দরস, এটা একেবারে বেমানান। তা হতে পারেনা। কতৃপক্ষ বাধ্যহয়ে আবারো হযরত তকী সাহেবকে বুখারী দরসের সিদ্ধান্ত দেন।
এবার হযরত বললেন, তাহলে তিরমিযীর দরস অন্য কাউকে দিতে হবে। দ্বিতীয় বৈঠকে হযরতকে অনেক অনুনয় বিনয় করা হলো যে, ৩৫ বছরের তিরমিযীর এই দরস ( যা' দরসে তিরমিযী' হিসাবে উপমহাদেশে উলামাদের নিকট সবচেয়ে বেশী সমাদৃত কিতাব ) এখন আপনি তিরমিযী না পড়ালে ছাত্রদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে। কিন্তু হযরত কোনভাবেই রাজী হলেন না।
তাই বাধ্য হয়ে হযরত থেকে তিরমিযী নিয়ে শাইখুল হাদীস হিসাবে বুখারীর দরসের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। হ্যাঁ, এমনই আমাদের আকাবির।
যারা পদপদবী বাগিয়ে নিবেন তো দুরের কথা, জোর করে দিতেও কষ্ট। যার কারনে জগতের সমস্ত পদমর্যাদা উনাদের পদতলে আসতে থাকে। আল্লাহ আমাদেরকেও এমন সিফাতের অধিকারী বানান।
পাকিস্তানের সর্বদলীয় সর্ববৃহৎ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসের সদর নির্বাচিত হয়েছেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী।
দারুল উলুম করাচির জামে মসজিদে যোহরের সময় তাকে ছাত্র-শিক্ষকের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এই মুবারকবাদের সিলসিলা জারি হয়েছে। শুধু পাকিস্তান না, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও লোকেরা মুবারকবাদ জানাচ্ছে।
অতঃপর তিনি বলেন-
লোকেরা আমার ব্যাপারে বেশি সুধারণা করে ফেলে। বাস্তবতা হল আল্লাহ আমার ওপর তাঁর 'ছাত্তার' গুণের মুয়ামালা করছেন। যদি রব আমার দোষ গোপন না করতেন তাহলে আমি জমিনের বুকে চলতেই পারতাম না। আমি আপনাদের সকলের দুআর বড় ভিখারি।
[caption id="" align="aligncenter" width="334"] বিশাল মূল্যছাড়ে বইটি সংগ্রহ করতে ছবিতে ক্লিক করুন।[/caption]
উপস্থিত কেউ একজন জিজ্ঞেস করল, হযরত! ঐ মজলিসে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আপনি বক্তব্য দিয়েছিলেন নিশ্চয়? জবাবে শাইখুল ইসলাম বললেন, হ্যাঁ, নির্বাচিত হওয়ার পর বক্তব্য দিয়েছিলাম।
একজন উস্তাদ জিজ্ঞেস করলেন, সম্পূর্ণ বয়ান তো (রেকর্ড না হওয়ায়) আমরা পাইনি, কিছু যদি বলতেন। শাইখুল ইসলাম বললেন, আমি-ই কী, আমার বয়ানই বা কী! আমার আকাবির থেকে শুনা ও শেখা কথাগুলোই সেখানে দাঁড়িয়ে আরজ করেছি।
সেখানে বলেছি, দ্বীনী মাদরাসাগুলো চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। এ থেকে সুরক্ষিত থাকার একটিই পথ। তা হল আকাবিরের মানহাজ, তাঁদের এখলাস ও লিল্লাহিয়তের আঁচল আঁকড়ে ধরে রাখা এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার অবশ্যই আমরণ চেষ্টা করা।
দুশমনরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন আমাদের মাঝে সর্বদা ফেরকাবাজির বিষ ছড়িয়ে থাকে। কারণ এই ফেরকাবাজিতে ফেলে তারা আমাদেরকে দুর্বল করে রাখতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই আকাবিরের পথ, তাঁদের পাহাড়সম এখলাস ও লিল্লাহিয়তের সিফত আমাদের মধ্যে আনতে হবে। ইন শা আল্লাহ, দুশমনরা কিছুই করতে পারবে না।
-কেএল