মুফতি মানসুর আহমাদ।। গাড়িতে আপনার পেছনের সিট থেকে হঠাৎ কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। একটি অপরিচিত শিশুর কান্না। পিপাসায় কাতর হয়ে পানির জন্যে কাঁদছে। মায়ের সাথে নেই কোনো পানি। ব্যাকুলকন্ঠে মা বাচ্চাটির কান্না থামাবার চেষ্টা করছেন।
আপনার ব্যাগে হাফ লিটারের বোতলটিতে অর্ধেকটা পানি আছে। একটু পরে আপনিই যা পান করবেন। ছোট্ট শিশুটির কান্না শুনে আপনারও খারাপ লাগছে। একবার ভাবছেন, আপনার পানিটা শিশুটিকে দিয়ে দেবেন। আবার ভাবছেন, নিজেরই তো লাগবে। ভ্রমণকালে কিছুক্ষণ পর পর পানি পানের একটা অভ্যাস আছে। তাছাড়া কেউ তো আপনাকে পানিটা দিতে বলেনি।
মূহুর্তকাল চিন্তা করে হাত বাড়িয়ে মায়ের হাতে বোতলটা তুলে দিলেন। অবুঝ শিশুটির পিপাসা মিটুক। কান্না থামুক। সেই মা হয়তো আপনাকে ধন্যবাদটাও দিতে ভুলে গেছেন। লাজুকতার কারণে কিংবা অস্থিরতার কারণে।
আপনার একাজটা কি একেবারেই সামান্য কিছু। যা একদম প্রাপ্তিহীন। এমনটা মনে করলে নিশ্চয় আপনি ভুল চিন্তা করছেন।
এখানে আপনার প্রাপ্তি আপনার ধারণার অতীত। তাৎক্ষণিকভাবেই তো একটা বেনিফিট পেয়ে গেছেন। দুটি প্রাণের ব্যাকুলতা দূর করে একটু আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করেছেন। কিন্তু আপনার প্রাপ্তিটা এখানেই শেষ নয়। ঈমানদার হয়ে থাকলে আপনার জন্য রয়েছে অপার্থিব বিশাল দুটি পুরস্কার। মাগফিরাত ও জান্নাত।
কী, আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? হাদীস শরিফে বর্ণিত (বুখারি: ২৪৬৬, ৬০০৯; মুসলিম: ২২৪৪), এই ঘটনাটি হয়তো আপনি অনেক বার শুনেছেন। এক ব্যক্তি একটা কুকুরের পিপাসা নিবারণ করে মাগফিরাত লাভ করেছিলেন। আপনি তো পিপাসা নিবারণ করেছেন আদম সন্তানের।
আরেকটি হাদিস শুনুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে মুসলিম অপর পিপাসার্ত মুসলিমকে পানি পান করাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের মোহরকৃত অমৃত পান করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ ১৮৮২)
ছোট কোনো নেক-আমলকেও তুচ্ছ মনে করতে নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো নেক-আমলকে তুচ্ছ মনে করো না। হোক না সেটা তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করা। (মুসলিম: ২৬২৬)
-এটি