মাওলানা শামসুল আরেফীন।। আমাদের জীবনটা আসলেই সুন্দর কিন্তু এ সুন্দর জীবনটা আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলার প্রয়োজন অত্যাধিক।
জীবনের পরতে পরতে কোন পদ্ধতির নিমিত্তে জীবনকে আমরা উপভোগ করলে জীবন আরো উপভোগ্য হয়ে উঠবে। আর জীবনের রূপ এবং রঙ শিল্পীর তুলিতে কীভাবে আঁকতে পারলে জীবনের বাঁকে বাঁকে আমরা শান্তির সেই আমৃত সুধা খোঁজে পাবো।সেই বিষয়টা ইসলাম আমাদেরকে শেখাতে চাচ্ছেন নিরন্তর।
কিন্তু যারপরনাই শয়তান এবং অন্তর এ দুটো আমাদেরকে বার বার গুনাহের দিকে আকৃষ্ট করতে চায়।ডুবিয়ে দিতে চায় আমাদের অঙ্গ পতঙ্গকে গুনাহের অতল দরিয়ায়।শয়তান আমাদেরকে কোনো ভালো কাজে সফল হতে দিতে চায় না! কখনোই না।কোনো ভালো কাজে গেলে নানা রকম বাহারি সুরতে ধোঁকা দিয়ে আমাদেরকে ভালো কাজ থেকে বিমুখ রাখতে চায় শয়তান। একথাটা নিতান্তই মন, মনন এবং মস্তিষ্কে উপস্থিত রাখতে হবে।
অনেক সময় দেহের একটু স্বাদ অনুভব করার জন্য অনেক বড় গুনাহ আমরা করে ফেলি কিন্তু এর খানিক পরে ইচ্ছে করেও আমরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নেককাজও করি না।
আমরা অন্তরের আনুগত্য ষোলআনায় করি।এটা কিন্তু মৃত্যুর পরের জগতের জন্য বিশাল এক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমাদের অন্তরের মধ্যে প্রতিনিয়তই শয়তান বাসা বাঁধার চেষ্টা করে।সে চায় গুনাহের হরেক রকম জাল পেতে সেখানে তার রাজ প্রাসাদ কায়েম করতে।
শয়তানের ধোঁকা বুঝা খুবই কঠিন ব্যাপার। যেমন ধরা যাক বিয়ের আগেই কেউ প্রেমের নাম করে অথবা বন্ধুর নাম দিয়ে পর নারীর সাথে ফোনালাপ করে কিংবা তাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যায়।
অথচ হাদিস শরীফে এমনটি এরশাদ হয়েছে যে,হজরত ওমর রা. হতে বর্ণিত আছে। তিনি নবী কারীম সা. হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সা. বলেছেন,যখনই কোনো পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে, তখনি শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়। তিরমিযী।মিশকাত শরীফ।
উপরের হাদিস শুধু পাঠ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নই। রাসুল সা. এর বাণীকে আমাদের অন্তরে ধারণ করতে হবে। মানতে হবে একেবারে অন্তরের গভীর থেকে এবং এর মর্মকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারলে আমরা একজন মুসলমান হিসেবে সফল হতে পারবো।
বিভিন্ন পেপার পত্রিকায় অথবা আশেপাশের খবরের মাধ্যমে আমরা শুনতে পারি যে, অমুকের বউ নাকি অমুকের সাথে চলে গেছে।অথবা অমুকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে গিয়ে ধরা খেলো।এমনটা হওয়ার পেছনে কারণ কী হতে পারে যা নিচের হাদিস দ্বারা আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি
হজরত জাবির রা. হতে বর্ণিত আছে যে। তিনি নবী কারীম সা. হতে বর্ণানা করেন যে, রাসুল( সা.) বলেন গৃহ স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রীদের গৃহে তোমরা প্রবেশ করো না।কেননা, রক্ত সঞ্চালনের ন্যায় শয়তান তোমাদের মাঝে অবাধে চলাচল করে।আর প্রতি মুহূর্তে তোমাদের প্রত্যেককে বিপদগামী করার কুমন্ত্রণা প্রদান করে।
এতদশ্রবণে আমরা বললাম -হে আল্লাহর রাসুল সা. আপনার ভেতরেও কী এভাবে অবাধে শয়তান চলাচল করে।উত্তরে তিনি বললেন হ্যাঁ, তবে আল্লাহ তায়ালা শয়তানের মোকাবেলায় আমাকে সাহায্য করেছেন বলে আমি তার কুমন্ত্রণা হতে নিরাপদে আছি।অথবা,সে আমার অনুগত হয়ে গেছে। সে পাপের পরোচনা দিতে পারে না,ফলে আমার কোনো পাপ করার আশংকা নেই।তিরমিযী।মিশকাত শরীফ।
নারী পুরুষ দুজন এরূপে সাক্ষাৎ করলে তখন তাদের মধ্যে পাপ সংঘটিত হওয়ার মধ্যে কোন বাধা থাকে না। ফলে তারা বিপদগামী হয়ে পড়ে। আর শয়তানই তাদেরকে সে পাপে উদ্ধুদ্ধ করে।
হজরত শায়খুল আদব মাওলানা ইজাজ আলী (রহ.) বলেছেন হাসান বসরী আর রাবেয়া বসরী তাদের মত দুজন বুজর্গ নর - নারীরও নির্জনে একত্রিত হওয়া জায়েজ নেই।
অথচ সেই যুগে তাকওয়া ও খোদা ভীতির দিক দিয়ে তারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ আর এ দুজন ব্যক্তিই নিজেদেরকে অবিরাম পরকালের ভাবনায় বিভোর রাখতেন।ছগিরা গুনাহ করার ব্যাপারে অনেক ভয় সঞ্চার হতো তাদের মনে।
তাদেরকে যেখানে শরীয়ত একত্রিত হওয়ার অনুমতি দেয় না। সেখানে তো কোনো পুরুষের জন্যই পর নারীর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেখে যাওয়া জায়েজ নেই।আমরা আসলে এখনো নিগুঢ় ঘোরের মধ্যে পড়ে আছি অথচ কোনো এক অজানা সময়ে মৃত্যু এসে আমাদের আত্মাকে ছুঁ মেরে নিয়ে যাবে। তার ব্যাপারে আমরা আসলেই উদাসীন এবং বেপরোয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিবেককে সজাগ করে দিক। আমীন।
লেখক: শিক্ষক জামিয়া আনওয়ারিয়া মাদরাসা শ্রীপুর, গাজীপুর। সদস্য নবীন লেখক ফোরাম।
-এটি