ফরহাদ খান নাঈম।। দুগ্ধপোষ্য শিশুকে অবশ্যই বুকের দুধ পান করাতে হবে। এটি শিশুর অধিকার। যতোদিন পর্যন্ত শিশুর বুকের দুধ পান করা প্রয়োজন এবং শিশুর দুধ পান করার বয়স থাকে, ততোদিন পর্যন্ত উক্ত শিশুকে দুধ পান করানো আবশ্যক। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।
শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে, (এটা) তার জন্য যে দুধ পান করাবার সময় পূর্ণ করতে চায়। সুরা বাকারা: ২৩৩
তবে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোতে যদি মায়ের স্বাস্থ্যহানি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাহলে অন্য কারো দ্বারা বাচ্চাকে দুধ পান করানো যাবে। তবে এক্ষেত্রে কোনো কাফির-মুশরিক কিংবা অশ্লীল নারীকে দুধ পান করানোর জন্য নিয়োজিত করা যাবে না।
যে নারীর কোনো সংক্রামক ব্যাধি আছে, তাকেও শিশুকে দুধ পান করানোর দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। কেননা বুকের দুধের মাধ্যমে উক্ত রোগ শিশুর শরীরে অনুপ্রবেশ করতে পারে।
তাই স্বাস্থ্যহানি কিংবা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য কারণে মা যদি তার বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে অপারগ হয়, তাহলে দুধ পান করানোর জন্য এমন মহিলাকে বেছে নিতে হবে, যার চরিত্র ও নৈতিকতা ভালো। কেননা বুকের দুধ পান করার মাধ্যমে শিশু উক্ত নারীর স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়।
শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর উপকারিতা
১. মায়ের বুকের দুধ সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত। তাই বুকের দুধ পান করার মাধ্যমে শিশুর শরীর সুস্থ থাকে এবং পেশি মজবুত হয়।
২. মায়ের দুধের সাথে পৃথিবীর অন্য কোনো দুধের তুলনা হয়না। কারণ মায়ের বুকের দুধ আল্লাহ তায়ালা শিশুর ধারাবাহিক গঠন ও বৃদ্ধির চাহিদা অনুসারে সৃষ্টি করেছেন।
৩. মায়ের বুকের দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। অন্যদিকে গরু-ছাগল কিংবা মহিষের দুধে যে প্রোটিন রয়েছে তা হজম করা শিশুর পাকস্থলীর পক্ষে কষ্টকর। কারণ গরু-ছাগল-মহিষের দুধ তাদের বাচ্চা বা বাছুরের জন্য উপযোগী করে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৪. বুকের দুধ পানকারী শিশুদের দৈহিক এবং মানসিক বিকাশ অন্য উৎস থেকে পাওয়া দুধ পানকারী শিশুদের চেয়ে অনেক বেশি হয়।
৫. বুকের পান করার ফলে মা ও শিশুর মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং মানসিক সুসম্পর্ক তৈরি হয়।
৬. মায়ের বুকের দুধের পুষ্টি গুণাগুণ শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়, যা দুধ পানকালীন পুরো সময়টা জুড়ে শিশুর জন্য উপকারী এবং উপযোগী।
৭. বুকের দুধের তাপমাত্রা শিশুর চাহিদা অনুযায়ী সহনীয় পর্যায়ে থাকে, যার ফলে শিশু যেকোনো সময় তা পান করতে পারে।
৮. বুকের দুধ পান করানো মায়েদের প্রাকৃতিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পূর্ণ দু'বছর দুধ পান করালে কোনো ধরনের জন্ম নিরোধক পদ্ধতি গ্রহণ করা ছাড়াই ওই দুই বছরে মায়েদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না।
-এটি