আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: কোনো কোনো মানুষকে একথা বলতে শোনা যায়Ñ ‘যারা দাওয়াতের কাজ করবে তাদের ইলম না থাকলেও আল্লাহ নিজ ইলম থেকে তাদের ইলম দেবেন, নিজ হিল্ম থেকে হিল্ম দেবেন।’ কেউ কেউ আবার এ কথার সাথে মূসা আ. কেন্দ্রিক এ বানোয়াট কিসসাও জুড়ে দেয়।
মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ বললেন, শেষ নবীর উম্মত নবীওয়ালা কাজ করবে। তখন তিনি বললেন, নবীওয়ালা কাজের জন্য তো ইলম ও হিল্ম দরকার। তখন আল্লাহ বললেন, আমি নিজ ইলম থেকে তাদের ইলম দিব এবং নিজ হিল্ম থেকে হিল্ম (ধৈর্য ও সহনশীলতা) দিব।
অর্থাৎ আলাদাভাবে ইলম অর্জনের প্রয়োজন নেই; দাওয়াতের কাজ করলেই স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলম হাসিল হয়ে যাবে। এটি সম্পূর্ণ বাতিল কথা। দ্বীন ও শরীয়তের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসলামে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রথম ওহীই হল, اِقْرَاْ পড়, ইলম অর্জন কর। ইলম ছাড়া ইসলাম পালন সম্ভব নয় এবং দ্বীনের কোনো কাজও সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। তাবেয়ী উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহ. বলেন,
من عمل على غير علم كان ما يفسد أكثر مما يصلح
যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া কোনো কাজ করবে সে সংশোধনের চেয়ে বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি করবে বেশি। তারীখে তাবারী ৬/৫৭২
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলম অর্জনের জন্য উম্মতকে জোর তাকিদ করেছেন এবং একে ফরয সাব্যস্ত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন।
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অর্জন করা ফরয। মুসনাদে আবু হানীফা (হাছকাফী), হাদীস ১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৪
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমের গুরুত্ব বর্ণনার সাথে সাথে ইলম শেখা-শেখানোর প্রতি অনীহা প্রকাশকে অপরাধ সাব্যস্ত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন,
مَا بَالُ أَقْوَامٍ لَا يُفَقِّهُونَ جِيرَانَهُمْ، وَلَا يُعَلِّمُونَهُمْ، وَلَا يَعِظُونَهُمْ، وَلَا يَأْمُرُونَهُمْ، وَلَا يَنْهَوْنَهُمْ. وَمَا بَالُ أَقْوَامٍ لَا يَتَعَلّمُونَ مِنْ جِيرَانِهِمْ، وَلَا يَتَفَقّهُونَ، وَلَا يَتّعِظُونَ. وَاللهِ لَيُعَلِّمَنّ قَوْمٌ جِيرَانَهُمْ، وَيُفَقِّهُونَهُمْ وَيَعِظُونَهُمْ، وَيَأْمُرُونَهُمْ، وَيَنْهَوْنَهُمْ، وَلْيَتَعَلّمَنّ قَوْمٌ مِنْ جِيرَانِهِمْ، وَيَتَفَقّهُونَ، وَيَتَفَطّنُونَ، أَوْ لَأُعَاجِلَنّهُمُ الْعُقُوبَةَ .
قال الهيثمي : رَوَاهُ الطّبَرَانِيّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ بُكَيْرُ بْنُ مَعْرُوفٍ، قَالَ الْبُخَارِيّ: ارْمِ بِهِ. وَوَثّقَهُ أَحْمَدُ فِي رِوَايَةٍ، وَضَعّفَهُ فِي أُخْرَى. وَقَالَ ابْنُ عَدِيٍّ: أَرْجُو أَنّهُ لَا بَأْسَ بِهِ.
ওই স¤প্রদায়ের কী হল যে, তারা প্রতিবেশীদেরকে দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করে না; দ্বীন শিক্ষা দেয় না, উপদেশ দেয় না। তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করে না, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে না!
ওই সম্প্রদায়েরই বা কী হল যে, তারা প্রতিবেশী থেকে দ্বীন শেখে না, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ গ্রহণ করে না। উপদেশ গ্রহণ করে না!
আল্লাহর কসম! হয়ত তারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে দ্বীন শেখাবে, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করবে, দ্বীনের বিষয়াদি বোঝাবে, সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর যারা জানে না, ওরা তাদের থেকে দ্বীন শিখবে, দ্বীনের সঠিক বুঝ গ্রহণ করবে, দ্বীনের বিষয়াদি ভালোভাবে বুঝে নেবে এবং সচেতনতা অর্জন করবে। নতুবা আমি তাদেরকে নগদ শাস্তি দিব। Ñআলমুজামুল কাবীর, তবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/১৬৪, হাদীস ৭৪৮
যাইহোক, দাওয়াতের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়েই উল্লিখিত ভিত্তিহীন কিসসা ও অমূলক কথার অবতারণা করা হয়েছে। অথচ শরীয়তে দাওয়াত ও তালীম উভয়টির গুরুত্ব আপন স্থানে। কুরআন-হাদীসে উভয়টির গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। কুরআন-হাদীসে দাওয়াতের ফযীলত বিষয়ক অনেক আয়াত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা রয়েছে। আমরা সেগুলোই বলব; এজাতীয় অমূলক কথা বা বানোয়াট কিসসা বলব না।
আল কাউসার-এর সৌজন্যে
এনটি