নাঈম উদ্দীন জামী।।
হজ্ব ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির সমুজ্জ্বল নিদর্শন। হজ্ব পালনে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের প্রয়োজন হয়। প্রতি বছর বিশ্বের ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ মানুষ হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَ لِلّٰہِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡہِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ.
সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্ব করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। {সূরা আল ইমরানঃ ৯৭}
হজ্বের সওয়াব ও ফজিলাত সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্ব করে এবং অশ্লীল ও গিনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিস্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুলকৃত হজ্বের পুরস্কারজান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। (বুখারী, খন্ডঃ০১, পৃষ্টাঃ২০৬)
আমাদের সমাজে অনেকেই রয়েছেন যাদের হজ্ব বা উমরাহ পালন করার সামর্থ্য নেই। কিন্তু তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হজ্ব বা উমরাহ পালনের সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে। যে সকল আমলের মাধ্যমে এ সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে তা হলো
এক. পিতা-মাতার সেবা ও তাঁদের সাথে সদাচরণ করা: আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর নিকট এসে বললো, আমি জিহাদে-সংগ্রামে অংশ নিতে চাই, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। তখন রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন?’ লোকটি বলল, আমার মা জীবিত।
তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর নিকট যুদ্ধ-সংগ্রামে যেতে না পারার অপারগতা পেশ কর। এভাবে যদি করতে পার এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তবে তুমি হজ, ওমরাহ এবং যুদ্ধ-সংগ্রামের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো। ’ (মাজমাউজ জাওয়াইদঃ ১৩৩৯৯)
দুই. ইশরাকের নামাজ আদায় করাঃ ইশরাক অর্থ ‘আলোকিত হওয়া’। শরিয়তের পরিভাষায়, সূর্যোদয়ের পর সূর্যের পূর্ণ কিরণ বিচ্ছুরিত হওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয় তা-ই ইশরাক। আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করলো, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করলো, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরাহর সওয়াব নিয়ে ফিরলো। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৫৮৬)
তিন. সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর জিকির করা: আবুদ্দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা একবার রাসুল (সাঃ) কে বলি, হে আল্লাহর রাসুল! ধনী ব্যক্তিরা সওয়াবের ক্ষেত্রে আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা হজ করেন, আমরা হজ করি না। তারা সংগ্রাম-যুদ্ধে শরিক হন, আমরা শরিক হতে পারি না। আরো আরো।
তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমালের কথা বলবো যেটা তোমরা করলে তোমরা তারা যে আমল করে তারচেয়ে বেশি সওয়াব পাবে? আর সেটা হলো- প্রতি নামাজের পর তোমরা ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুল্লিাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়ো। (মুসনাদে আহমদ: ১১১৫৪)
চার. জামাতের সাথে সালাত আদায়: আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করলো, সে যেন হজ করে আসলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেলো, সে যেন ওমরাহ করে আসলো। ’ (তাবারানি: ৭৫৭৮)
পাঁচ.ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে গমন করা: আবু উমামা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে নিজের ঘর থেকে ওজু করে (মসজিদের দিকে) বের হয়, সেই ব্যক্তির সওয়াব ইহরাম বাঁধা হাজির মতো হয়। ’ (আহমাদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২১২; আবু দাউদঃ ৫৫৮; তারগিবঃ ৩২০)
ছয়.ভালো কথা শিখা বা শিখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়া: আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কথা শিখা বা শিখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে গেল, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে। ’ (তাবারানি: ৭৪৭৩)
সাত. রমজানে ওমরাহ পালন করা: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, রমজানে ওমরাহ আদায় করলে আমার সঙ্গে হজ্জ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। ’ (বুখারি: ১৭৮২; মুসলিম: ২২২)
আট. মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়: রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে কুবায় এসে কোনো নামাজ আদায় করল, সে ওমরাহর সওয়াব হাসিল করল। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪১২)
নয়. জুমার নামাজ আদায়ঃ আবু উমামা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে ইহরাম বেঁধে হজে গমনকারীর মতো সওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি শুধু সালাতুদ্দুহা (পূর্বাহ্নের নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে কষ্ট করে বের হয়, সে ওমরাহ আদায়কারীর মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (আবু দাউদঃ ৫৫৮)
দশ. মুসলমানের প্রয়োজন মেটানোঃ হাসান আল-বসরি (রহ.) বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটানো তোমার বারবার হজ করার থেকে উত্তম। ’
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
-এটি