আল আমীন আজহার।।
মানুষ যে ধর্ম আর যে দর্শনেই বিশ্বাসী হোক - এ কথা তাকে স্বীকার করতেই হবে - মানবিক সকল দায়-দায়িত্বের উৎস- জ্ঞান-বুদ্ধি অনুভব উপলব্ধি এবং চিন্তা ও ইচ্ছাশক্তি।
যেগুলো ছাড়া কোন মানুষের জীবনকে পূর্ণতার নিক্তিতে পরিমাপ করা অর্থহীন।কোন মানবের জ্ঞান-বুদ্ধি অনুভব উপলব্ধি এবং চিন্তাও ইচ্ছাশক্তির পূর্ণতা বিধান এবং অভিষ্ট লক্ষ্য পানে পৌঁছাতে-একটি নিষ্পাপ পবিত্র শাশ্বত জীবনাদর্শের পূর্ণ অনুসরণ আবশ্যক। যেই শাশ্বত জীবনাদর্শটি তার চলার পথে অন্ধকারে আলোর ফেরি করে চলবে।
দিকভ্রান্তিতে দেখাবে মুক্তির পথ। করবে সত্য ও সঠিক পথের রাহনুমায়ী।কোন জীবনাদর্শের পূর্ণ অনুসরণ ছাড়া জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্য পানে ছুটে চলা-বুকের ভিতর জিইয়ে রাখা সোনালী স্বপ্নগুলোর রঙিন কফিনে নির্মমতা আর ব্যর্থতার আখেরি পেরেক বৈ অন্যকিছুর মুলাকাত নয়।
যেই শাশ্বত জীবনাদর্শকে জীবনের আদর্শ বা আইডল বানানো হবে;জীবনাদর্শরূপে গ্রহণ করা হবে- অবশ্যই তাতে চারটি গুণ- ঐতিহাসিকতা মানবিক গুণাবলির পূর্ণতা সার্বজনীনতা এবং বাস্তবিকতা থাকতে হবে। এই চারটি গুণ ছাড়া কোন জীবনচরিতকে নিষ্পাপ পবিত্র এবং শাশ্বত জীবনাদর্শ বলা চলে না।
শাশ্বত জীবনচরিতের মানদণ্ড:
১. ঐতিহাসিকতা: একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে যে জীবন ও জীবনেতিহাস উত্থাপিত হবে ইতিহাসে ও বর্ণনার বিচারে সেটা হতে হবে প্রমাণসিদ্ধ। হবে সনদ ভিত্তিক।
ঐতিহাসিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ জীবনাদর্শ হলো- একমাত্র মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ। অন্য সকল ঐতিহাসিক ব্যক্তির জীবনে রয়েছে -সংশয় সন্দেহ। যেমন প্রাচীন এশিয়ার বিশাল ধর্মটি হলো "বৌদ্ধধর্ম" যার জনক হলেন- গৌতম বুদ্ধ।
তাঁর জীবন ইতিহাস -দুয়েক গল্প কাহিনী ছাড়া পুরোটাই গালগপ্প। ঐতিহাসিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়।
সুতরাং যে জীবনেতিহাসের পুরো গ্রন্থপঞ্জি অসার গল্পে পূর্ণ তা কিভাবে একটি জীবনাদর্শ হতে পারে? শুধু দুয়েকটি অনির্ভরযোগ্য ঘটনার ভিত্তিতে কিভাবে তা অন্যের জীবনের জন্য আইডল হতে পারে?
অন্যদিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন "বিন্দু থেকে সিন্ধু" পুরোটাই সংরক্ষিত এবং ঐতিহাসিক বিচার-বিশ্লেষণ ও মানদণ্ডে উত্তীর্ণ।
সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ। তার জীবনের প্রতিটি অংশ স্পষ্ট সংরক্ষিত এবং ঐতিহাসিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। কোন অপূর্ণতার ছোঁয়া নেই।
২.মানবিক গুনাবলীর পূর্ণতা:কোন মানবচরিত শাশ্বত জীবনাদর্শ হতে হলে তার জীবনের সকল দিক অবশ্যই সামনে থাকতে হবে। কোন অংশ রহস্যাবৃত কিংবা অজানার অন্ধকারে হারিয়ে যেতে পারবেনা। জীবনের সামগ্রিক অবস্থা দিবসের সূর্যের মতো পৃথিবীবাসীর সামনে উপস্থিত থাকতে হবে।
হাজারো লাখো নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং দ্বীনের মহান সংস্কারকদের মধ্যে কেবল তিন-চার জনকেই ঐতিহাসিক বলা যায়। কিন্তু পূর্ণতার মাপকাঠিতে তারাও সকলে উত্তীর্ণ নন।
পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মানুষ গৌতম বুদ্ধের অনুসারী। কিন্তু গৌতম বুদ্ধের জীবনের ঐতিহাসিক কয়েকটি ঘটনা ছাড়া পুরো জীবনেতিহাস অজানার অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। আর যে কয়েকটি ঘটনা প্রসিদ্ধ তার কয়টি দলিলের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ - তা ইতিহাসবেত্তা যারা- তারাই ভালো জানেন।
ধর্মপ্রবর্তক ঐতিহাসিক যরথ্রুষ্টের জীবন এর ব্যতিক্রম নয়। কিছু ধারণা আর অনুমান ছাড়া তার জীবনচরিত অনুসন্ধানের কোন পথ নেই। তার জন্ম স্থান নির্ধারণ সম্পর্কিত দলিল-প্রমাণও পরস্পরবিরোধী। এছাড়া যরথ্রুষ্টের কাল সম্পর্কে ইতিহাসে কিছুই জানা যায় না।(বিশ শতকের নির্ভরযোগ্য তথ্য নির্যাস "এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা যরথ্রুষ্ট"শীর্ষক নিবন্ধ)এছাড়াও যরথ্রুষ্টের আবির্ভাব কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত এবং বর্তমানকালের গবেষকদের ধারণা সম্পূর্ণ আলাদা।
পূর্ববর্তী কালের নবীগণের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম। তাওরাত নির্ভরযোগ্য নাকি ভিত্তিহীন সেই প্রসঙ্গ এখন আপাতত থাক। তাওরাতের পাঁচ কিতাবের সব বিবরণ বিশুদ্ধ ধরে নিলেও তাঁর জীবন ইতিহাসের সামান্য অংশই আমাদের সামনে অস্পষ্টভাবে স্পষ্ট হয়। আর পুরো জীবনেতিহাস অজানার অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।
সমাজের আদর্শ হিসেবে মানবজাতির জন্য যে সকল মৌলিক অধ্যায় প্রয়োজন -আখলাক চরিত্র জীবনের যাপিত নিয়ম-নীতি লেনদেনের পথ ও পন্থা- হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নববী জীবনে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
তাওরাত গ্রন্থে-কিছু বিচ্ছিন্ন অবস্থা ব্যক্তিগত বংশ পরিচয় কিছু জায়গার ঠিকানা পরিসংখ্যান কিছু আইনি আলোচনা ছাড়া অন্য কোনো তথ্য নেই। আর যা কিছু উল্লেখ আছে-সেগুলো জীবনাদর্শ বা বাস্তব জীবনের নমুনা হওয়ার বিচারে অর্থহীন। তাই এধরনের জীবনচরিতকে পূর্ণতার মানে ভূষিত করা যায় না।
ইঞ্জিলের সমস্ত ভিত্তিহীন বর্ণনার মাঝে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর ৩৩ বছরের জীবনের মাত্র শেষ তিন বছরের কিছু অনির্ভরযোগ্য বর্ণনা মিলে।সুতরাং ঐতিহাসিক বিচারে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর জীবনকেও একটি আদর্শ জীবনাদর্শ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না।
পৃথিবীতে আগমনকারী সকল ধর্মপ্রবর্তক এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠাতাদের জীবনচরিত - পূর্ণতার মাপকাঠিতে বিচার করা হলে একমাত্র মহামানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিত ব্যতীত আর কারো জীবনচরিত ঐতিহাসিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হবার নয়। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয় যে তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী।
একমাত্র তাঁর জীবনচরিতই হতে পারে মানব সমাজের অন্ধকার পথে আলোর প্রদীপ। একমাত্র তাঁর জীবনচরিতই হতে পারে শাশ্বত জীবনাদর্শ। যার জীবনের কোন অংশ কল্পনাপ্রসূত বা রহস্যাবৃত নয়। অন্ধকারে হারিয়ে যায়নি তার জীবনের কোনো একটি মুহূর্ত অংশ বা খন্ডাংশ। তার জীবনের প্রতিটি পাঠ প্রতিটি অধ্যায় দিবসের সূর্যের মতো পৃথিবীবাসীর সামনে উপস্থিত।
তিনি মানুষের জন্য আলো ও প্রদীপ। আল্লাহ তাআলার হেদায়াত'এর শিক্ষা ও সাক্ষী। সফলতা ও সৌভাগ্যের বার্তাবাহী। সতর্ককারী ও জাগ্রতকারী। পথহারা পান্থদের রাহবার। তিনি উম্মাহর অতন্দ্র প্রহরী। বরং তার জীবন ও সত্ত্বাই আলো ও প্রদীপ।
৩. সার্বজনীনতা; কোন জীবনাদর্শ আমলি এবং বাস্তব নমুনা হতে হলে তার জন্য আবশ্যক বিস্তৃতি এবং ব্যাপকতা।
বিভিন্ন শ্রেণী গোষ্ঠির মানুষের জন্য-তাদের হেদায়াত; পথ চলার জন্য যে আদর্শ বা নমুনার প্রয়োজন কিংবা প্রতিটি মানুষকেই জীবনের বিভিন্ন সম্পর্ক ও নানাবিধ কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের জন্য যে আদর্শ নমুনা প্রয়োজন হয় তার সবকিছুই আইডিয়াল জীবনে পাওয়া যেতে হবে।
বিস্তার ও ব্যাপকতার দৃষ্টিকোণ থেকে সবিস্তারে দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অধিকার ও হুকুক অনুসন্ধান করলে-একমাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিত ব্যতীত আর কারো জীবন চরিত সার্বজনীনতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ নয়। সুতরাং বিস্তার ও ব্যাপকতার বিচারে মুহাম্মাদী আদর্শই একমাত্র শাশ্বত জীবনাদর্শ হওয়ার উপযুক্ত।
অ- চিকিৎসা রকমের বাস্তবতা হলো-বৌদ্ধ ধর্ম এবং জৈন ধর্মে-আল্লাহ তাআলা-তাঁর সত্ত্বা ও গুণাবলী এবং তার অন্যান্য অধিকার সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। তাই এসব ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাদের জীবন পাতায়-আল্লাহ প্রেম ও মহব্বত এবং একত্ববাদের আলোক সন্ধান অর্থহীন।তাওরাতের পাঁচকিতাব তল্লাশির পরও কোথাও মূসা আলাইহিস সালাম এর আত্মিক সম্পর্ক আনুগত্য ও ইবাদত, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও তাওয়াক্কুল,তাঁর অন্তরে আল্লাহতালার গুণাবলীর বিকাশ ও দীপ্তির কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর কয়েকটি ভিত্তিহীন কল্পকাহিনী এবং অসার গালগপ্প ছাড়া আর কোন তথ্য ইঞ্জিল আমাদের সামনে উপস্থিত করতে পারেনা। খ্রীস্টবাদে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার সম্পর্ক সুস্পষ্টরূপে অনুপস্থিত।
অদ্যাবধি পৃথিবীর কাছে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক ঈসা আলাইহিস সালাম এর জীবন চরিত এক জটিল রহস্য হয়ে আছে। অনন্তর ঈসা মসীহের জীবনচরিত দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে উদ্ধার করা- তাঁর পুনঃগমনের পূর্ব পর্যন্ত অসম্ভবই থেকে যাবে। একমাত্র তাঁর আগমনের মাধ্যমেই এই রহস্যের উদঘাটন হতে পারে।
এসব ধর্মের প্রবর্তকদের জীবনচরিতের ভিত্তিহীনতা এবং অসারতা থেকেই প্রতীয়মান হয় যে-এসব ধর্ম এবং ধর্মপ্রবর্তকদের জীবনচরিত সার্বজনীন নয়। প্রমাণিত হয়- এসব ধর্ম চিরন্তন এবং সর্বশেষ ধর্ম নয়।
যদি চিরন্তন এবং সর্বশেষ হতো তাহলে তার সংরক্ষনও আবশ্যক হত। সুতরাং এসব ধর্ম এবং ধর্মের প্রবর্তকদের জীবনচরিত কোন শাশ্বত জীবনচরিত হতে পারে না।আদৌ এইসব ধর্ম এবং ধর্মের প্রবর্তকদের জীবনচরিত চিরন্তন হতে পারে না।যা হবে মহাকালাবধি অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়।কিন্তু দলিলের অসারতা এবং প্রমাণের ভিত্তিহীনতা নিয়েই এসব ধর্ম এবং ধর্মপ্রবর্তকদের জীবনচরিত পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে।
অন্যদিকে ইসলামই একমাত্র ধর্ম এবং এর প্রবর্তক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই চিরন্তন।মোহাম্মদী জীবনচরিত দলীলের বিচারে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য। সুতরাং মোহাম্মদী জীবনাদর্শই একমাত্র শাশ্বত জীবনাদর্শ।
৪.বাস্তবিকতা বা বাস্তব জীবন: ধর্মপ্রচারক এবং প্রতিষ্ঠাতার শিক্ষা ও দর্শন-তার ব্যক্তি জীবন এবং কর্মজীবনের উপমা এবং নমুনা বাস্তবতার আলোকে উপস্থিত থাকতে হবে।
কর্ম এবং অবদান ছাড়া শুধু নিস্পাপ সুন্দর চিন্তা এবং চারিত্রিক ও দার্শনিক মতবাদ এর মাধ্যমে কোন মানবচরিত সুন্দর শ্রেষ্ঠ ও পূর্ণতার বিচারের শাশ্বত জীবনাদর্শের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারে না।
কেননা অতি চমকপ্রদ কোন দর্শন নন্দিত কোন চিন্তা চিত্তাকর্ষকতর কোন মতবাদ যে কোন সময় যে কোন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রচার ও প্রসার লাভ করতে পারে।কিন্তু অভাব শুধু কর্মের মাধ্যমে নমুনা উপস্থাপন এবং অবদানের মাধ্যমে পথ প্রদর্শন। আর তখন ধর্মপ্রচারকের ধর্ম দার্শনিকের দর্শন এবং নান্দনিকের নন্দনতত্ত্ব মুখ থুবড়ে উপুড় হয়ে পড়ে। পৃথিবী হয়ে পড়ে কথার শিল্পিদের নিবাস।
জীবনচরিতের বাস্তব জীবন ও কর্ম ধারার বিচারে একমাত্র মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিতই আইডিয়াল লাইফ বা অনুকরণীয় জীবনাদর্শ হতে পারে।
জীবনের বিচিত্র প্রাঙ্গণের সমূহ পরিস্থিতিতে-যুদ্ধ সন্ধি দারিদ্র প্রাচুর্য সংসার কৌমার্য আল্লাহ ও বান্দার সঙ্গে নানা সম্পর্ক শাসক ও শাসিত স্বস্তি ও ক্রোধ প্রীতি ও লড়াই নির্জন ও মজলিস-উত্তরণের পথ পাই তার শাশ্বত জীবনচরিত থেকে। খুঁজে পাই আদর্শ উপমা। সমাধান পাই আকণ্ঠ ডুবে থাকা সংকটের। যে সমাধান বাস্তব মৌলিক এবং বাণীভিত্তিক।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিত ছাড়া অন্যান্য নবী এবং মনিষীদের জীবনচরিত-তাদের বিদায়ের পর পরই কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে অজানার অন্ধকারে। তাদের স্ব স্ব কালের বিচারে তারা ছিলেন যুগের রাহবার। দীপ্তিমান আলোর মিনার। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর তাদের রেখে যাওয়া আদর্শের ও মৃত্যু ঘটেছে। যুগের ঝটিকাবর্তে রহস্যাবৃত হয়ে পড়েছে তাদের দ্বীপ্তিমান জীবনাদর্শ।
তাদের জীবনের যে খন্ডাংশ আমাদের কাছে পৌঁছেছে-দলিলের ভিত্তিতে এবং যুক্তির নিরিখে-সে গুলোকে আমরা অসার কল্পকাহিনী এবং ভিত্তিহীন গালগপ্প ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারি না। শাশ্বত জীবনাদর্শের মানে উত্তীর্ণ করতে পারিনা। জানা নেই-এর মধ্যেই হয়তো খোদা কোন মঙ্গল রেখেছেন।
অন্যদিকে মোহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায়ের চৌদ্দশ বছর পরও তার জীবন আদর্শ মানব সমাজে আলোর ফেরি করে চলছে। অবিরাম। অন্তহীন।
তাঁর জীবনাদর্শে কেউ কলঙ্কের কালিমা লেপন করতে পারেনি। দিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।তার শাশ্বত জীবনচরিত পূর্বে যেমন নিষ্পাপ পবিত্র ছিল ভবিষ্যতেও তেমনই থাকবে।
এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। তার শাশ্বত জীবনে আমরা খুঁজে পাই-নূহের প্রচার উদ্দীপনা, ইব্রাহিমের তাওহিদী চেতনা ইসমাইলের বিসর্জন চিন্তা, মুসার অন্তহীন সাধনা, হারুনের সত্য প্রীতি, ইয়াকুবের সমর্পণ, দাউদের অনাথ সত্যের জন্য মাতম, সোলায়মান এর তত্ত্বজ্ঞান, জাকারিয়ার ইবাদত-বন্দেগী, ইয়াহইয়ার স্বভাব শুদ্ধতা, ঈসার দুনিয়া বিমুখতা, ইউনূসের ভুল স্বীকার, লূতের অস্থিরতা, আইয়ুবের ধৈর্যের রূপ ও নকশা।তাঁর এই বিরাট জীবনচরিতের মাধ্যমে আমরা সজ্জিত করি আমাদের আত্মিক ও চারিত্রিক জগতের প্রসাদ।
তাঁর শ্বাশত জীবনের চিরন্তনতা এবং অবিনশ্বরতাই প্রমাণ করে যে-তাঁর জীবনচরিতই একমাত্র শাশ্বত জীবনাদর্শ এবং তিনিই সর্বশেষ নবী। আর এটাই কোরআনের অম্লান বাণী: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন পুরুষের পিতা নন। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।
সুতরাং কোরআনের এই নিষ্পাপ পবিত্র অম্লান শাশ্বত স্পষ্ট বাণীর পরেও যদি কেউ নতুন করে নবুওয়াত দাবি করে অথবা কোন নতুন ধর্ম প্রসব করে অথবা মুহাম্মাদী শাশ্বত জীবনচরিতকে অবমূল্যায়ন করে এবং অসভ্যতার কবরে দাঁড়িয়ে তাকে "সেকেলে" বলে উড়িয়ে দিতে চায় তাহলে শুধু এতোটুকুই বলবো "পাগলের মাথা খারাপ"।
মুহাম্মাদী ধর্মই ধর্ম হিসেবে বাকি থাকবে কিয়ামত অবধি। স্বয়ং ধর্ম প্রণেতা আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার হেফাজত এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এবং মুহাম্মাদী জীবনচরিতই একমাত্র শাশ্বত জীবন আদর্শ হিসেবে বাকি থাকবে।মুহাম্মাদী ধর্ম এবং মুহাম্মাদী জীবনচরিতই একমাত্র গ্রহণযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য। প্রমাণের ভিত্তিতে এবং যুক্তির নিরিখে। একমাত্র মুহাম্মাদী জীবনাদর্শই আলো বিলি করে যাবে মহাকাল অবধি।
লেখক: কবি লেখক ও অনুবাদক নালিতাবাড়ী শেরপুর ময়মনসিংহ
-এটি