মুফতি মামুন মুজাহিদ
তাওবাহ এটা আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা। শরিয়তের পরিভাষায় তাহবাহ বলা হয় জীবনের রেখে আসা দিনের পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে পবিত্র করার মানসে অনুসূচনা করা।
মহামহিয়ান আল্লাহ সুবহানাহু তাআ'লার সামনে নিজের অপরাধ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এবং অনাগত ভবিষ্যতে এ রকম পাপকাজ করা থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করা।
মানুষ ভুল করে। মানবপ্রকৃতির কারণে পাপাচারে জড়িয়ে যায়। তবে যখন অনুভূতি জেগে যায় তখন অনুতপ্ত হয়ে ভাবতে থাকে আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি। এই অনুতপ্ত হওয়ার নামই তাওবা। রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-বলেন
‘অনুতপ্ত হওয়ার নামই তাওবা’ এ জন্য বান্দা যখন পাপাচারে জড়িয়ে যায় তখন ও আল্লাহ তাঁর উপর রাগেননা। ভুলের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ দেন।
বনিইসরাইলের এক বাদশাহর সামনে এক আবেদের(ইবাদতকারী) আলোচনা করা হচ্ছিল। বাদশাহ তাঁকে ডেকে পাঠালেন। অনেক আদর আপ্যায়ন করে হাদিয়া তোহফা দিলেন। নিজের রাজদরবারে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। আবেদ বললেন বাদশাহ মহোদয়! কথাতো ভালো!
আচ্ছা বলুনতো আমি যদি আপনার দরবারের কোন ক্রীতদাসীর সঙ্গে ব্যভিচার করি তাহলে আমার সাথে কেমন ব্যবহার করবেন? বাদশাহ রাগান্বিত চেহারায় উত্তর দিলেন আমার রাজ্যে এমন অপকর্ম আমি কোন ভাবেই মেনে নিবনা! আবেদ লোক নিশ্বাস ছেড়ে বললেন বাদশাহ মহোদয় রাগ করবেননা!
আমার আল্লাহ সুবহানাহু তাআ'লা কতইনা দয়ালু! আমি প্রতিনিয়ত কতো অপরাধ করি,তিনি কখনো তাঁর রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাননা। তাঁর হুকুম অমান্য করি কিন্তু তিনি আমার রিজিক বন্ধ করেননা। তাঁর দরবার থেকে তাড়িয়ে দেননা। তাই আমি কিভাবে তাঁর দরবার ছেড়ে আপনার দরবারে চলে আসবো!
যেখানে আমি পাপ করার আগেই আপনার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। রাগের অগ্নশীখার বহ্নি বের করে ফেললেন। আমাকে সত্যি সত্যি পাপে দেখলে না জানি আপনি কী করবেন! এ কথা বলেই আবেদ লোকটি বাদশার দরবার থেকে চলে এলেন।
এছাড়া কুরআন হাদিসের অসংখ্য জায়গায় বলা হয়েছে আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার কথা। এ মর্মে হযরত আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে হাদিস বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) চাচা হামযা (রাদিআল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী ওয়াহসি মক্কা থেকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চিঠি লিখলেন,আমি ইসলাম গ্রহণ করতে চাই কিন্তু আমার জন্য কুরআনের এই আয়াতটি বাধা- আর তাঁরা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকেনা। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তারা তা হত্যা করেনা। আর ব্যভিচার করেনা। যে এগুলো করবে সে শাস্তি ভোগ করবে। [সুরা আল ফুরকান,আয়াতঃ৬৮]
ওয়াহসি বলেন আয়াতে উল্লেখিত আল্লাহর সাথে শরিক,হত্যা আর ব্যভিচার এই তিন অপরাধই আমি করেছি। আমার জন্য কী তাওবার সুযোগ আছে? তখন ওয়াহসির জন্য এ আয়াত লেখে পাঠানো হলো- তবে তারা নয় যারা তাওবা করে,ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপ পূণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন।
ওয়াহসি চিন্তায় পরে গেলেন,আয়াতে সৎকর্মের কথা বলা হয়েছে। আমি সৎকর্ম করতে পারবো কী-না কে জানে! তখন রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওয়াহসির সন্দেহ দূর করার জন্য চিঠি লিখে পাঠালেন আরেকটি আয়াত- নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেননা। এ ছাড়া যা ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন।"[সুরা নিসা,আয়াতঃ১১৬]
ওয়াহসি জবাব দিলেন এ আয়াতে ক্ষমা শর্ত।আমার ক্ষমাপ্রার্থনা করা হবে কী-না এটাতো জানা নেই।তখন আয়াত অবতীর্ণ হলো- ‘বলো হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের উপর অবিচার করেছো আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়োনা, আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ [সুরা যুমার,আয়াতঃ৫৩]
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত লিখে পাঠিয়ে দিলেন। এখানে ক্ষমার জন্য কোন শর্তারোপ করা হয়নি। ওয়াহসি মদিনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। হয়ে গেলেন সাহাবিদের আসনে সমাসীন। এতে জানা যায়, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বান্দার কখনো নিরাশ হওয়া ঠিক নয়। ইসলাম নৈরাশ্যকে কুফুর বলেছে। আল্লাহ বলেন- ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে কাফেররা ছাড়া আর কেউ নিরাশ হয়বা।’ [ সুরা ইউসুফ, আয়াতঃ৮৭]
তাই কেউ যদি বারবার ব্যভিচারে লিপ্ত ও হয় তবুও তার জন্য তওবার পথ খোলা। সে যখন ইচ্ছা তার প্রভুকে খুশি করতে পারবে।
লেখক: লেখক ও গবেষক
-এটি