মুহাম্মদ হাসান মুরাদ।।
সময় আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামতের অন্যতম। সময় পরিবেষ্ঠিত রাত দিনের আবর্তনে। সময় মানুষের অস্তিত্বের প্রমান। সময় না হলে আমাদের অস্তিত্ব অসম্ভব ছিল। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা ব্যস্ত।নানান কাজে আমরা সময় ব্যয় করি। ইমাম শাফি র. বলেন সময় হল তরবারি;তুমি যদি তাকে না কাট ,সে তোমাকে কেটে ফেলবে।(কিমাতুয যামান ইনদাল উলামা-২৫)
অর্থাৎ তুমি যদি নেক কাজে নিজেকে ব্যস্ত না রাখ তাহেল সময় তোমাকে অপদস্থ করবে।হাদীস শরীফে এসেছে ইবনে আব্বাস রা.বলেন, রাসুল স. ইরশাদ করেন. দুটি নিয়ামতের ব্যপারে অনেক মানুষ প্রতারিত হয়,সুস্থতা ও অবসর(বুখারি শরিফ-৬০৪৯)।
অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ সময়ের সৎ ব্যবহার করেনা।বরং তা অপাত্রে নষ্ট করে। ফলে তা নিয়ামত না হয়ে আপদ হয়ে যায়। জীবনে চলার পথে অনেক সময় আমরা অপচয় করি।ইচ্ছে করলেই আমরা সে সময়গুলো কাজে লাগাতে পারি।
পরিণত করতে পারি সময়গুলোকে ইবাদতে। স্টেশনে- বাস-ট্রেনের জন্য। এয়ারপোর্টে বিমানের জন্যঅপেক্ষাতে বসে থাকি। দূর যাত্রা হলে গৌন্তব্যে পৌছাতেও অনেক অলস সময় পার করি। কেউবা আবার কাজ শেষে বিকেল থেকে রাত অবদি চায়ের দোকানে, বন্ধুদের আড্ডাতে বুদ হয়ে থাকি। অবশ্য কর্পরেট দুনিয়াতে প্রায় সব বয়ষের মানুষই সময় পার করছে, ফেসবুক আর ইউটিউবে।যদওি এগুলোর উপকারও আছে,তবে অপকারের দিকেই মানুষের প্রবনতা বেশি। তাই এক্ষেত্রেও প্রয়োজন সময় সচেতনতার।
ধরুন আমরা কোথাও সফরে যাব। ট্রেন,বাস,বিমান,লঞ্চ,ফেরি নৌকা ইত্যাতি আসতে দেরি। অথবা বাহনে বসে আছি।গৌন্তব্যে পৌছতে সময় লাগবে।সাধারণত এসময় আমরা কি করি?সঙ্গী থাকলে গল্প করি। না থাকলে নিশ্চয় মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অথচ এ সময়টুকু আমরা যবানের ইবাদতে কাটাতে পারি। দরুদ শরীফ পড়তে পারি। আস্তে আস্তে যিকির করতে পারি। ইস্তগফার পড়তে পারি।পাশের ছিটে বসা মানুষটির সাথে দ্বীনি-দাওয়াতি আলোচনা করতে পারি।তাহলে সময়টা কাজে লাগলো।
হাদীস শরীফে এসেছে রাসুল স. ইরশাদ করেন ‘ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তার উপর দশবার দরুদ পড়েন। (সহি মুসলিম-১/১৬৬) অন্য বর্ণনায় এসেছ আল্লাহ তার উপর ১০টি রহমত বর্ষণ করেন এবং ১০টি গোনাহ মাফ করে দেন এবং ১০টি মর্যাদা বুলন্দ করে দেন। (নাসায়ী শরীফ-১/১৪৫) হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, আমার উপর দরুদ পাঠ কারী যত সময় দরুদ পাঠ করতে থাকে, তত সময় ফিরিশ্তা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।( ইবনে মাজাহ হাদীস নং-৯০৭) আর যিকিরের ফযিলত তো শতাধিক।
পাবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “আর আল্লাহর যিকিরই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট,তিন জানেন তোমরা জানো না। (সুরা আনকাবুত- ৪৫) হাদীস শরীফে আছে হযরত আবুদ দারদা রা. বলেন রাসুল সা.বলেন,আমি কি তোমাদের রবের নিকট তোমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম,প্রিয়, মর্যাদা উন্নতকারী,আল্লাহর রাস্তায় সোনা-রুপা দান করা,শত্রুর মুখোমুখি হয়ে শত্রু হত্যা করা এবং শত্রুর হাতে শহীদ হওয়া থেকেও উত্তম আমলের কথা বলব না? সাহাবাগণ বললেন অবশ্যই ইয়া রাসুল আল্লাহ! তখন তিনি বললেন তা হচ্ছে আল্লাহর যিকির। (তিরমিযী শরীফ- ৩৩৭৭) রাসুল সা. আরো ইরশাদ করেন দুটি কালিমা পড়তে সহজ, দয়াময়ের নিকট সেগুলো প্রিয় এবং মিঝানের পাল্লায় হবে ভারি।
তা হল ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদীহি সুবহানাল্লাহিল আযীম’ (সহি বুখারী-৬৪০৫) এই তাসবীহের আরো একটি ফযিলত আছে, যে ব্যক্তি দিনে একশ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদীহি ’পড়বে তার সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হয়। (সহি মুসলিম- ১৯০৮) সাথে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়তে পারি। আমাদের কথা-বর্তাতে কত রকম গোনাহ হয়ে যায়। ইস্তেগফারে মাধ্যমে তা ক্ষমার আশা করতে পারি।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে‘ আর আপনি যখন অবসর হন তখন কঠোর পরিশ্রম করুন এবং আপনার রবের নিকট কাকুতি-মিনতি করুন’-(সুরা আলাম নাশরাহ-৭,৮) তাফসীরে আসান তরজমায়ে কোরআনে এ আয়াতের আলোচনাই বলেছেন রাসুল সা. জিহাদ, সালত, তাবলিগের কাজ করতেন।
যেগুলোও ইবাদত। তারপরও অতিরিক্ত নফল সালাত,যিকির ইত্যাদি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বোঝা যায়, যারা দ্বীনের খেদমতে আছেন তাদেরও কিছু সময় শুধু আল্লাহ তায়ালার সাথে নিরিবিলি কাটানো উচিত।
এতে অন্য কাজে বরকত হয় এবং আল্লাহর সথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।রাসুল স. এর জন্য যদি এমন আদেশ হয় তবে আমাদের জন্য আরো গুরুত্ব বহন করে।সুতরাং অবসর সময়গুলো যদি আমরা যবানের আমলগুলো করতে পারি তাতে আমরা দুনিয়া আখিরাতে লাভবান হবো ।আল্লাহ তায়ালাই উত্তম তাওফিক দাতা।
লেখক: শিক্ষক, দারুস সুন্নাহ মাদরাসা, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া।
-এটি