শায়েখ আহমাদুল্লাহ।।
আমাদের সমাজে অনেকেই ধারণা করে থাকেন বাবা-মা কোন পাপ করলে তাদের পাপের ফল হিসেবে প্রতিবন্ধী শিশু জন্মগ্রহণ করে থাকে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং কুসংস্কারচ্ছন্ন।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ হলো; যদি কেউ কোন অপরাধ করেন তাহলে তার বোঝা সে নিজেই বহন করবে, সন্তান বা অন্য কেউ নয়।
কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবে না’।
আমরা বলতে পারি, যদি কোন সন্তান বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে এটি সন্তান এবং বাবা-মায়ের জন্য পরীক্ষা। বাবা মা যদি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন, এতে ধৈর্য ধারণ করতে পারেন, তাহলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে বড় পুরস্কার।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই কারো প্রতি যদি পরীক্ষা অনেক বড় হয়, তাহলে তার প্রতিদানও অনেক বড়, যদি তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন, সবর করতে পারেন।
তিরমিজি শরীফের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন ঈমানদারকে আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা করে থাকেন বিপদ দিয়ে, তার নিজের মধ্যে, তার সন্তানের মধ্যে, তার সম্পদের মধ্যে।
অর্থাৎ সন্তানের মধ্যে কোন ধরনের ত্রুটি বা সমস্যা এটি সন্তানের জন্য যেমন পরীক্ষা; বাবা মার জন্যও পরীক্ষার। তারা যদি সবর করতে পারেন, তাহলে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাদের সাথে এমন অবস্থায় দেখা করবেন যে তাদের কোনো পাপ থাকবে না।
হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায়, বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী সন্তান বাবা মায়ের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে যদি তারা এতে সবর করতে পারেন। এভাবে একটি সন্তানের জন্য কল্যাণ বহন করতে পারে।
মুসনাদে আহমাদের একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, কোন মানুষের মধ্যে কোন রোগ বালাই-ত্রুটি থাকলে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে বলেন,আমার বান্দা অসুস্থ শরীরে যেটুকু আমল করতে পারে সেটুকু তোমরা লিপিবদ্ধ কর। তাকে সুস্থতা দান করার আগ পর্যন্ত সে যত কষ্ট করবে এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার ছোটখাটো ভুল ত্রুটি কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করবেন। অসুখ এবং ত্রুটি নিয়ে যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি রহমত-অনুগ্রহ করবেন, তাকে মাগফেরাত নসিব করবেন।
তাহলে বুঝা গেল বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী হওয়া শিশু বা বাবা-মা কারো জন্য অভিশাপ নয়। এ সম্পর্কের সমাজে যে ভুল ধারণা বা কুসংস্কার আছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
শ্রুতি লিখন: জুলফিকার জাহিদ।
এনটি