মাওলানা শামসুল আরেফীন।।
আজান শুনতে কার না ভালো লাগে। আজান আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরকালের কথা। যেখানে আমারা অবস্থান করবো যুগের পর যুগ। যার কোনো শেষ নেই। সেই অসীম অনন্তের পথে আমাদের পারি জমাতে হবে এ-দুনিয়ার সকল পাঠ চুকিয়ে। আর আমরা পরকালের কথা ভুলে গিয়ে ছোটোছুটি করছি। আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতা করছি।
আমরা রোজ পাঁচবার রবের সাক্ষাতে ধন্য হই। সিক্ত হয় আমাদের মন। স্বস্তি অনুভব করি আমরা। মুয়াজ্জিন সুমধুর কণ্ঠে আহ্বান করে- রবের দিকে মনকে ঘুরিয়ে ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন করার নিমিত্তে।
আল্লাহর স্মরণ হতেই অন্তরে কম্পন সৃষ্টি হয়। এটা যে দুনিয়ার কোনো রাজা-বাদশার ডাক নয়। এটা যে মহান সত্ত্বার ডাক। যার হুকুমে বয়ে চলে মেঘমালা এবং প্রবাহিত বাতাস, এমনকি সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। এ ডাক যে সেই স্রষ্টার পক্ষ থেকে।
সেই আজানের ধ্বনি নিরন্তর আমাদের মনে রেখাপাত করে। বাক্যগুলো ভেতরে লুকায়িত আছে আমাদের সফলতার চাবিকাঠি। আজানের বাক্যাংশের মাধ্যমে ইহকালীন জীবনে কার আনুগত্য করবো আর কার ইবাদত করবো এর শিক্ষা পাই। কত চমৎকার শিক্ষা আমরা রোজ পাঁচবার পাই।
মুয়াজ্জিন আমাদের বলে যে, নামাজের জন্য এসো, এটাতেই সুখ এটাতেই। দুনিয়া ও পরকালের যত প্রাপ্তি তাই নামাজের মাধ্যমে যত চেয়ে নিতে পারো।
আজান দুনিয়ার কোন বানানো কথা নয়। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করেছেন।
নামাজের সময়ের কথা জানান দেয়া যায় কীভাবে। তা নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সাথে পরামর্শ সভায় বসলেন। তখন কেউ আগুন জ্বালানোর মাধ্যমে লোকদিগকে আহ্বানের কথা বললেন। কেউ শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার জন্য বললেন, কেউ কেউ বললেন ঘন্টা বাজানোর জন্য। কিন্তু আগুন জ্বালানো অগ্নিপূজকদের রীতি। শিঙ্গায় ফুঁকানো ইহুদিদের নীতি। ঘন্টা বাজানো খৃস্টানদের পন্থা। ফলে সেসব প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় এবং ঐদিন কোনো সমাধান ছাড়াই সবাই সবার ঘরে ফিরে যায়।
সে রাতে একজন সাহাবি স্বপ্নে দেখেন- এক ব্যক্তি তার পাশ্ব দিয়ে অতিক্রম করছেন তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো, এই শিঙ্গাটি আমার কাছে বিক্রি করবে? তিনি বললেন, আপনি এটা দিয়ে কি করবেন! আমি বললাম মানুষকে নামাজের জন্য ডাকবো। তিনি বললেন তার চেয়ে ভালো হবে আমি আপনাকে কিছু চমকপ্রদ বাক্য শিখিয়ে দেই। তিনি সেই সাহাবিকে আজানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দেন।
যিনি স্বপ্নে এমনটি দেখে ছিলেন তার নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন আব্দে রাব্বি। সেখান থেকেই আজানের প্রচলন ঘটে।
আজান প্রবর্তনের বেশ কিছু হেকমত আছে তার মধ্যে অন্যতম- আজানের দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ, মাহাত্ম্য, শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা হয়। আজানের মাধ্যমে রাসূল সা. এর স্বীকারোক্তি এবং প্রমাণ মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়। আজানের মাধ্যমে নামাজ যে ইসলামের একটি অত্যাবশকীয় বিধান তা বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সকল মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যায়।
আজানের মাধ্যমে গণ মানুষের মাঝে ইসলামি জাগরণ সৃষ্টি হয়। আজানের মাধ্যমে উভয় জাহানের কল্যাণের ঘোষণা করা যায়।(সূত্র বোখারী, মুসলিম, তিরমিজি।)
লেখক: শিক্ষক জামিয়া আনওয়ারিয়া মাদরাসা শ্রীপুর গাজীপুর।
-এএ