নাহিদ হাসান
জিলহজ্ব হিজরী বারোতম মাস। এই মাস আশহুরে হুরুম অর্থাৎ সম্মানিত চার মাসের অন্তর্ভুক্ত। এই মাস অত্যান্ত ফযিলতপূর্ণ মাস বিশেষ করে তার প্রথম দশ দিন।
এই মাসেই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিধান অর্থাৎ হজ্ব ও কুরবানী পালন করা হয়।কুরবানী শব্দটি মুলত আরবী কুরব অথবা কুরবান থেকে ফার্সিতে কুরবানী নামে রুপান্তরিত হয়েছে যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ইত্যাদি।ইসলামী পরিভাষায় শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় নির্দিষ্ট দিনে পশু জবাই করে আল্লাহ সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করাকে কুরবানি বলে।
কুরবানীর ইতিহাস বাবা আদম (আঃ) এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের যুগ থেকে পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা তাদের দুজনকে কুরবানী করার করার আদেশ দিলেন কিন্ত আল্লাহ তায়ালা হাবিলের কুরবানী কবুল করলেন কাবিলের কুরবানী কবুল করলেননা।
এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন, হে নবী! আপনি কিতাবিগণকে আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা ভালোভাবে বর্ণনা করুন।তখন একজনের কুরবানি কবুল হলো অপরজনের কুরবানী কবুল হলোনা। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বলল আমি তোমাকে খুন করবো। অপরজন বলল প্রভু তো শুধু আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন। (সুরা মায়েদা আয়াত ২৭)।
কুরবানীর বর্তমান যে পন্থা তা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর রীতিনীতি।এজন্য কুরবানীকে সুন্নতে ইবরাহীম বলা হয়।
ইবরাহীমের ত্যাগ ও উৎসর্গ আল্লাহ তায়ালার কাছে এতোটাই গ্রহণীয় হয়েছে যে,পরবর্তী জাতির উপর কুরবানী করার একটি বিধান রেখে দিয়েছেন।
সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্ত বয়স্ক মুমিন নর-নারী, যিনি ১০ জিলহজ্বের ফজর থেকে ১২ জিলহজ্বের সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মৌলিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যাতিত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি।এবং অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে এর বাজার মুল্য সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ ও সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মুল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যেই নামাজ পড়ো ও কুরবানী দাও।(সুরা কাউসার আয়াত-২)
হযরত জাবের রাযি. বলেন আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ সা. এর সাথে বের হলাম ।তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন আমরা যেন প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি। (সহীহ মুসলিম ১/৪২৪)
যে সামর্থ থাকার পরেও কুরবানী করলনা সে গুনাহগার হবে। হযরত আবু হুরায়রা রাযি.থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন যার সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানী করলোনা সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।( মুসনাদে আহমাদ,মুসতাদরেকে হাকেম)
কুরবানী এটি শরীয়তের নিদর্শন। কুরবানীর অর্থ এই নয় যে বড় বড় পশু জবেহ করা বরং কুরবানীর উদ্দেশ্য হলো মনের ভিতর যে পশু জন্মেছে অর্থাৎ আমিত্ববোধ ও হিংসা বিদ্ধেষ মন থেকে ঝেড়ে ফেলা। কুরবানী করতে হবে আল্লাহ তায়ালার জন্য নিছক গোশত খাওয়া অথবা মানুষকে দেখানোর জন্য যত বড় পশুই কুরবানী করা হোক না কেন তা আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হবেনা।কেননা কুরবানীর পশুর রক্ত,মাংস কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌঁছায়না আল্লাহ পশু দেখেননা তিনি মানুষের দিল দেখেন।
কুরআনুল কারীমে ইরশাদ আল্লাহ তায়ালা বলেন, কুরবানীর রক্ত,মাংস আল্লাহর কাছে পৌঁছায়না আল্লাহর কাছে পৌঁছায় তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ ভীতি।এই লক্ষেই কুরবানীর পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেওয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন সেজন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো।হে নবী! আপনি আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন যে,আল্লাহ তায়ালা বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সুরা হজ্ব আয়াত ৩৭,৩৮)
কুরবানী যেন পশু জবাইয়ের প্রতিযোগিতা না হয় তা যেন হয় শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে যেন রিয়ামুক্ত ও খালিস নিয়তে কুরবানী করার তাওফিক দান করেন। আমিন
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক
-এটি