আব্দুল্লাহ সা’দ।।
গত তিন বছর আগের পৃথিবীর সাথে আজকের পৃথিবীর তফাৎ আকাশ-পাতাল। তখন মানুষ মুক্ত ছিল, স্বাধীন ছিল। যখন তখন বেরুতে পারার, যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবার আনন্দ ছিল। এখন মানুষ বন্দি। করোনা নামের এক অদৃশ্য শত্রু সর্বদা সকলকে তাড়িয়ে ফেরে। যানবাহন বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা। অফিস আদালত, কলকারখানা, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব বন্ধ।
করোনায় সবচে' বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এতোদিন যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো, তাদের পাতে এখন পান্তাই জুটে না। নুন তো দুরে থাক। সারাদিনের আয় দিয়ে রাতের বেলায় যাদের চুলোয় আগুন জলতো, এখন দিনের পর দিন আগুন জালানোর লাকড়ীই তারা পায় না। ক্ষুত পিপাসায় কাতর কতোগুলো চেহারার সামনে করোনায় মৃত সর্বোচ্চ সংখ্যার রেকর্ডও নিতান্তই গৌন। বস্তি, ফুটপাত, রাস্তায় এই অসহায় চোহারাগুলোতে বারবার ভেসে উঠছে একটু বাঁচার আকুতি। একমুঠো খাবারের হাহাকার। করোনার এই দুঃসময়ে দরিদ্র মানুষগুলো হয়ে পড়েছে সমাজের অপাংক্তেয়।
এমনই যখন গরিবদের অবস্থা চরমে, তখন একদল বিত্তশালীর বেপরোয়া বিলাসী জীবন যাপন, ক্ষুধায় কাতর অসহায় লোকগুলোকে ফেলে দিচ্ছে মানসিক যন্ত্রণায়। তাদেরকে হতাশ করে তুলছে নিজেদের জীবন নিয়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা সাহায্য নিয়ে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর পাশে দাঁড়াবার কথা, তাদের আয়েশী ব্যাসন-ভূষণ দুস্থদেরকে ক্ষুধার যন্ত্রণার মতোই পীড়িত করবে।
জলে-স্থলে যেসব দুর্যোগ দেখা দেয়, সব মানুষের কৃতকর্মেরই ফল। দুনিয়ার এই নাযুক হালতের জন্যও আমরাই দায়ী। আমাদের আমলই করোনা রূপে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে। অতএব আমাদেরই আমলের ফলস্বরূপ আজ অসহায় মানুষেরা অনাহারে ক্লিষ্ট।
আল্লাহ তাআলা মহান। সর্বদা সব কাজে তার বড়ত্ত্ব ও মহত্ত্ব প্রকাশ পায়। এর অন্যথা হয়নি এখানেও। তিনি আমাদেরকে অপরাধের শাস্তি যেমন দিয়েছে, তেমনই তা থেকে বাঁচার উপায়ও এমনকি শাস্তি দেয়ার আগেই বাতলে দিয়েছেন।
হাদীসের ভাষ্যমতে সাদাকায় বালা মুসিবত দুর হয়। বিপদের ঘনকালো আঁধার কেটে গিয়ে মুক্তির সোনালী সুর্য হেসে ওঠে। সুতরাং এই মারীকালে সাদাকা হতে পারে আমাদের আপদ মুক্তির ওসিলা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস কখনো মিথ্যা হতে পারে না। বেশী বেশী সাদাকার ওসিলায় আল্লাহ আমাদের ওপর থেকে করোনার আযাব তুলে নেবেন, এই বিশ্বাস আমরা অবশ্যই রাখতে পারি।
অতএব এখন আমাদের উচিৎ সামর্থ্যানুযায়ী অধিক পরিমাণে সাদাকার প্রতিযোগিতা করা। যাতে সকল অভাবীর মুখে হাসি ফোটে। এতে করে যেমন দরিদ্র মানুষগুলো ক্ষুধার যাতনা থেকে মুক্তি পাবে, তেমনই সাদাকার মাধ্যমে আমাদের ওপর থেকে করোনার আযাবও দুর হবে।
আবার উপরি হিসেবে সাদাকাগুলো আল্লাহর কাছে জমা থাকবে করজে হাসানাহ রূপে। যা কর্মফল দিবসে আমাদের আমলনামাতেই ফিরে আসকে দ্বিগুন হয়ে। করোনা থেকে মুক্তি মিলবে, অভাবও দুর হবে, আর সাওয়াব তো আছেই। লাভই লাভ।
সুতরাং সাদাকাই হোক আমাদের বিপদ মুক্তির মাধ্যম।
এনটি