মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

মহাগ্রন্থ আল কোরআন বাস্তবতার নিরীখেই আল্লাহর অনন্য সৃষ্টি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাজী ওয়াদুদ নওয়াজ।।। আল-কোরান সূরা আয্-যারিয়াতের ২০ থেকে ২৩ নং আয়াতের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছে যে আল্লাহ পৃথিবীর বুকে মানুষের উপলব্ধির জন্য তার চোখের সামনে দুইটি গ্রন্থ সুস্পষ্ট ভাবে মেলে ধরেছেন। তার একটি হলো বিশ্ব-প্রকৃতি; আকাশ, ভূ-মণ্ডল ও মানুষ সহ সকল কিছু, আর অপরটি হলো আল-কোরান সহ তাঁর সমস্ত নাজিল-কৃত গ্রন্থ সমূহ।

বিশ্ব-প্রকৃতিতে পরিস্ফুটিত বিভিন্ন নিদর্শন ও কোরানের আয়াত সমূহের মধ্য দিয়েই আল্লা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন- তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। উভয়ই হলো স্রষ্টার সংগে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি মানব-জাতির যোগাযোগ রক্ষা করার মাধ্যম। কোরানের আয়াত সমূহের সংগে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আল্লার নিদর্শনাবলীর যথেষ্ঠ সাদৃশ্য বিদ্যমান।

এই উভয়ের মধ্য দিয়েই আল্লাহ বস্তু ও আধ্যাত্মিক জগতের অন্তর্নিহিত বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করেছেন। এর সব-টুকুই বাস্তব সত্যের বহিঃপ্রকাশ-এখানে অলৌকিকত্ব খোঁজার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না।

বিশ্ব-প্রকৃতির দৃশ্য-অদৃশ্য সকল কিছুর সঙ্গে মানব মনের একাত্মতার অনুভূতিকে অর্থাৎ ‘অতীন্দ্রিয়বাদকে’(Mysticism) অনেক বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তি ভাব-বিলাসিতার বহিঃপ্রকাশ বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। আসলে তা নয়। অতীন্দ্রিয়বাদ হলো বিজ্ঞানের সম্প্রসারিত রূপ – যা বিশ্ব-জগৎ ও চেতনার ঐক্য অনুধাবনের চাবি-কাঠি।

আলবার্ট আইন্স্টাইন তাঁর “ The Merging of Spirit and Science নামক গ্রন্থটিতে বলেছেন “মানব মনের সব চেয়ে সুন্দর ও গভীরতম উপলব্ধি তার অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মধ্যেই নিহিত। এটাই সমস্ত বৈজ্ঞানিক সত্যের উৎস।অতীন্দ্রিয় অনুভূতিহীন মন যা সৃষ্টি-জগতের সৌন্দর্য্য ও বিশালত্বে বিস্মিত ও অভিভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখেনা তা মৃতের সমতুল্য। সর্বোচ্চ জ্ঞান ও সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে মানুষের ক্ষুদ্র বুদ্ধির অগম্য বস্তুর অস্তিত্ব অনুধাবন ও উপলব্ধির মধ্যেই চূড়ান্ত ধার্মিকতা নিহিত।

“কিছু উগ্র নাস্তিক আছেন যাঁদের অসহিষ্ণুতা ধর্মীয় উগ্রবাদীদেরকেও হার মানায়। উভয়ের অসহিষ্ণুতার উৎস মূল কিন্তু একই তারা এমন এক জীব, মহা-বিশ্বের সুর-তরঙ্গ যাদের কর্নমূলে প্রবেশ করতে পারেনা। মহা-বিশ্বে বিরাজমান ঐক্যতান আমার মতো সীমিত বুদ্ধির লোকের কাছে প্রকাশিত হলেও কিছু মানুষ তা বুঝতে পারেনা-তারা অন্ধ ভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।

কিন্তু আমার সব চেয়ে বেশী রাগ হয় যখন দেখি তারা তাদের মতের সমর্থনে আমার উদ্ধৃতি দেয়।মহা-বিশ্বের অন্তর্নিহিত এই সুরের ঐক্যতান ও ভারসাম্য কি স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমান করার জন্য যথেষ্ঠ নয়?”

আল-কোরানের সূরা বাকারার ২থেকে ৪ নং আয়াত [২:২-4], সূরা আল-হাকক্বাহর ৪১-৪৬ও ৫১নং আয়াত সমূহ [৬৯: ৪১-৪৬ ও ৫১] পর্যালোচনা করে একথা নির্বিধায় বলা যায় যে কোরান কখনও বাস্তবতা বহির্ভূত অলৌকিকত্বে বিশ্বাস করেনা।

কোরানের মধ্যে অনুমান বা অলীক কল্পনার কোনো স্থান নাই।কোরানের মধ্যে আল্লাহ যা কিছু বলেছেন তা সবই সত্য ও বাস্তব। মানব-জীবন ও বস্তু-জগতের অন্তর্নিহিত সত্য ও বাস্তবতাই হলো কোরানের মূল আলোচ্য বিষয়।সমগ্র বিশ্ব-প্রকৃতি, তার বিকাশ-প্রক্রিয়া ও ইতিহাসকে কোরান মানুষের জন্য উপদেশ ও স্রষ্টার সৃষ্টি নৈপুণ্যের বাস্তব নিদর্শন হিসাবে চোখের সামনে তুলে ধরেছে।

বাস্তবতা-বিবর্জিত অলৌকিকত্বের আলোকে কোরানকে দেখার প্রচেষ্টা ভুল ও এক জন সত্যিকার মুসলিমের কাছে ইমানের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র ।ইসলামের শত্রুরা এই দুর্বলতাকে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে এবং কোরানকে জীবন ও সৃষ্টি জগতের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াস পায়।

মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির অগম্য কোনও বিষয়-বস্তু যত বাস্তবই হোকনা কেন মানুষ তাকে অলৌকিক বলে মনে করে।আল্লাহ চিরন্তন সত্য।তাঁর সৃষ্ট দৃশ্য-অদৃশ্য সকল বস্তুই সেই সত্যের বহিঃপ্রকাশ।এখানে বাস্তবতা বিবর্জিত অলৌকিকত্বের কোনো সুযোগ নাই।আল্লাহ সত্য ও বাস্তব, সৃষ্টি ও ধ্বংসের চিরন্তন প্রক্রিয়ার আলোকে জীবন- মৃত্যুও বাস্তব সত্য,পরকাল ও বিচার দিবসের ঘটনাও বাস্তব,ফেরেস্তা বাস্তব,শয়তানও বাস্তব, বেহেস্ত-দোযখ, শাস্তি ও পুরস্কার সবই সত্য ও বাস্তব। জীবনের চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান জীবন-মৃত্যু, পাপ-পূণ্য, সৃষ্টি ও ধ্বংসের পরস্পর বিরোধী ঘুর্ণাবর্ত। এর মাঝে বাস্তবতা-বিবর্জিত অলৌকিকত্বের স্থান কোথায়?

কোরানের কোথাও এর স্থান নাই। কোরানে উল্লেখিত কিছু কিছু ঘটনা ও কাহিনী- সূ্ত্র আপাত দৃষ্টিতে অলৌকিক বলে মনে হলও আসলে তা নয়। সেই সমস্ত ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে আল-কোরান সত্য ও মিথ্যার চিরন্তন লড়াই এর বাস্তবতাটিই প্রতিফলিত করেছে। এবং সেই সংঘাতে সত্যের বিজয়ের পক্ষে কোরানের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা ক্রম-বিকাশের এক অনিবার্য্য বাস্তবতা ও বিশ্বজনীন সত্যকেই সবার উর্দ্ধে তুলে ধরেছে।

কোরান বাস্তব, অহি বাস্তব, বিশ্ব-জগতে প্রকাশিত আল্লার নিদর্শন সমূহ বাস্তব, কোরানে আলোচিত সমস্ত বিষয়-বস্তুই বাস্তব। এই সকল বাস্তবতার আলোকে একথা নিঃশংকোচে বলা যায়যে, জ্ঞানের অভাব ও ইমানের দুর্বলতা হেতু কোরানে অবাস্তব অলৌকিকত্ব খোঁজার প্রয়াস তার সম্মান বৃদ্ধি না করে বরং তার মহিমাকেই খর্ব করে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ