মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

ফরজ গোসলে সতর্কতা কাম্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উসমান বিন আব্দুল আলিম

মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। সব মাখলুকাতের জন্য আল্লাহর বিধান মানা অপরিহার্য। আল্লাহ তায়া’লা বান্দাদের পরিচালনা করার জন্য নিয়ম-নীতি তৈরি করে রেখেছেন । বান্দার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা আবশ্যক।

একজন মুসলমান কী খাবে, কীভাবে চলবে,কী করবে, ইত্যাদি দিকনির্দেশনা আল্লাহ তায়া’লা আল্লাহর প্রিয় হাবীবের মাধ্যমে মাখলুকাতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।আমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিয়েছেন।যা মানা আমাদের জন্য জরুরি।

আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে বিভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। তন্মধ্যে আল্লাহর একটি আদেশ বান্দার জন্য রয়েছে। তা হল; তোমরা সবসময়ই পবিত্র অবস্থায় থাকবে।যদি কোন কারণে অপিত্র হয়েও যাও, তাহলে তৎক্ষণাৎ তোমরা পবিত্র হয়ে নেবে।

যেমন আল্লাহ তায়া'লা কোরআন শরীফে বলেন; ‘তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাক, তবে নিজেদের শরীর (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা : ৬)

এজন্য আমাদেরকে সর্বদা পবিত্র অবস্থায় থাকার চেষ্টা করতে হবে।আর এই অপবিত্র থেকে পবিত্র হওয়ার মাধ্যম হচ্ছে অপবিত্র জায়গাটিকে পরিষ্কার করে নেওয়া। পরিষ্কারের অন্যতম উপায় (ক্ষেত্র বিশেষ) গোসল,ওযু অথবা শুধু জায়গাটা পরিষ্কার করে নেয়া।

তবে গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হবারও বিভিন্ন ধরণ আছে।যেমন_ফরজ, সুন্নাত ও মুস্তাহাব গোসল ।এই পার্থক্য ক্ষেত্র বিশেষ হয়ে থাকে। যেমন; সহবাসের পর (সূরা মায়েদা-৬), স্বপ্নদোষ হবার পর ,মহিলাদের রক্তস্রাবের পর (বোখারী -৩০৯),সন্তান ভূমিষ্ঠ করার পর(কানযুল উম্মাল-৯/১১০৯) গোসল ফরজ হয়ে থাকে এবং মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের ওপর ফরজ। (বুখারি, হাদিস : ১১৭৫)

আবার কখনো গোসল আমাদের জন্য সুন্নাত হয়। যেমন ; জুমার নামাজ(তিরমিজি -৪৮৬),দুই ঈদে নামাজের জন্য (ইবনে মাজাহ-১৩০৬)ইহরাম পরিধানের জন্য (তিরমিজি-৭৬০),ইত্যাদি।

কখনো বা গোসল মুস্তাহাব হয়ে থাকে। যেমন ; কদরের রাতে(বোখারী-৩৪),সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের আগে(তিরমিজি-২৭২৩),শিঙা লাগানোর পর। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৯৪)মাতাল বা বেহুঁশ ব্যক্তির স্বাভাবিক জ্ঞান ফেরার পর (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬), ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সময়, যদি সে পাক থাকে তবু গোসল করা মুস্তাহাব। কিন্তু সে যদি নাপাক থাকে, তবে তো গোসল করা ফরজ, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানকারীর জন্য (আবু দাঊদ -২৭৪৯)ইত্যাদি।

পৃথীবির যেকোন কাজের একটা সিস্টেম বা রুলস আছে। সিস্টেম ছাড়া কাজ হয় না।এমনিভাবে ফরজ গোসলেরও কিছু শর্ত আছে,নিয়ম আছে।কিন্তু অজ্ঞতার কারণে আমরা পবিত্রতা অর্জন করতে পারি না। আমরা ঠিকই বর্ণিত কারণ গুলোর পর ফরজ গোসল করে থাকি, কিন্তু গোসলের নিয়ম না জানার কারণে বা ফরজ গোসলে কী কী কাজ করতে হয় তা অজ্ঞতার ফলে আমাদের গোসল হয় না।আমরা পবিত্র হতে পারি না,অপবিত্র রয়ে যাই।তাই আমাদের নামাজ-ও হয় না,কেননা আপনি তো অপবিত্র হওয়ার পর পবিত্র-ই হননি!

এইযে আমরা আমল করলাম, নামাজ পড়লাম,এগুলো আমাদের কিছুই কবুল হচ্ছে না। সাওয়াব হচ্ছে না বরং উল্টো গুনাহ হচ্ছে।কারণ, আমরা পবিত্রতাই অর্জন করতে পারিনি।অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সামনে হাজির হচ্ছি।যদি আমাদের উপর গোসল ফরজ হয়, তাহলে সেসময় নিয়ম মেনে ফরজ গোসল সম্পূর্ণ করতে হবে। তখন আমাদের আমল কবুল হবে।

এরজন্য আমাদের জানতে হবে ফরজ গোসলের পদ্ধতি। কীভাবে গোসল করলে আমরা অপবিত্র থেকে পবিত্র অর্জন করতে পারবো,আমাদের ফরজ গোসল সম্পূর্ণ হবে।

আমরা জানি গোসলের ফরজ তিনটি_কুলি করা(বোখারী -২৫৭),নাকে পানি দেয়া(বোখারী-২৬৫),পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো(আবু দাউদ -২১৭। অথচ দেখা যায় যখন আমরা সহবাসের পর বা যেসবের পর গোসল ফরজ হয়,তখন আমরা গোসল করে থাকি।কিন্তু আমরা নাকেও পানি দিচ্ছি না।কুলিও করছি না।আবার বলা হয়েছে পুরো শরীরে পানি পৌঁছাতে,কিন্তু আমাদের অসতর্কতার কারণে পুরো শরীর ভিজছে না।

তাই সবাইকে বলবো; আমাদের উপর যখন গোসল ফরজ হয়ে যায়,তখন আমরা নিম্নোক্ত পন্থা গুলো অবলম্বন করার চেষ্টা করবো, খুব গুরুত্ব সহকারে খেয়াল করবো।একটু সতর্ক থাকলেই আপনি হবেন পবিত্র। অন্যথায় এতো কষ্ট করে আমরা যেই আমল গুলো করছি_একটুখানি অজ্ঞতার কারণে, অসতর্কতার ফলে জান্নাত কামানোর পরিবর্তে জাহান্নাম কামিয়ে ফেলছি।যা একজন সচেতন মুসলমান কখনোই করতে পারে না।

ফরজ গোসলের সময় যেই বিষয় গুলো খেয়াল করবেন; সহবাস বা স্বপ্নদোষ হওয়ার পর প্রথমে প্রস্রাব করবেন।তারপর গোসলের জন্য আসলে লেগে থাকা শুকরাণুর জায়গা গুলো পরিষ্কার করে নেবেন।লজ্জা স্থান ধৌত করে নেবেন।ভালোমতো গরগর করে কুলি করবেন।নাকের ছিদ্রের ভেতর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দ্বারা ভালো করে পানি পৌঁছাবেন। হাত ভিজিয়ে কানের ছিদ্র মুছবেন। নাভির ভেতর পরিষ্কার করে পানি দেবেন।নারীরা তাদের নাকফুল নেড়ে ভেতরে পানি পৌঁছাবেন।খেয়াল করতে হবে পুরষদের জন্য_যেনো দাড়ি,চুল,গোফের গোড়া সমূহ ভালোভাবে পানিয়ে ভিজে।অথবা কারো হাতে যদি ঘড়ি বা আন্টি থাকলে তা নেড়ে ভেতরে পানি পৌঁছাতে হবে।

তবে নারীদের চুল বাঁধা অবস্থায় না খোলে গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হলে পুরো চুল ভেজানো জরুরি নয়।আর যদি আগ থেকেই খোলা থাকে, তাহলে পুরো চুল ভেজানো জরুরি।

অনেক মেয়েদের দেখা যায় তারা হাতে নেইলপালিশ, রঙ বা ইত্যাদি ব্যবহার করে,তাহলে তাদেরকে এগুলো উঠিয়ে তারপর পানি পৌঁছাতে হবে। (রদ্দুল মুহতার-১/১৪২)

পরিশেষে আবার বলছি,এই বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে,সচেতন হতে হবে।এই বিষয়টি অনেককেই হেয়ালি করতে দেখা যায়। অনেককেই দেখতে পাই যারা এগুলো খুব একটা গুরুত্ব দেয় না।অথচ এটা মোটেই কাম্য নয়। একটুখানি অসতর্কতার কারণে আপনি জাহান্নাম কামাচ্ছেননা তো? আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে সঠিক বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক, আমীন।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামি'য়া ইসলামিয়া আরাবিয়া বলিয়ারপুর, সাভার, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ