কেফায়াতুল্লাহ ফাহিম।।
ইদুল আযহার আনন্দ ও উদ্দেশ্য হলো নিজের পশু জবেহ করে তা গরীব, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিলিয়ে সৃষ্টির স্রষ্টাকে খুশি করা এবং তার নৈকট্য লাভ করা।
আল্লাহ কখনোই দেখেন না, কে কত লাখ টাকার পশু জবেহ করলো। বরং তিনি এই কুরবানি দ্বারা পরীক্ষা করেন যে, তার বান্দাদের মধ্যে কোন বান্দা একনিষ্ঠভাবে কুরবানি দিয়ে তার আদেশ পালন করছে।
তাই তো বিচার দিনের স্বামী তার মহা গ্রন্থে বলেছেন,
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ ۚ
অর্থ: প্রভুর কাছে কুরবানির পশুর গোস্ত, রক্ত কোন কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় কেবল তোমাদের আত্মশুদ্ধি।
এই আয়াতে কুরবানি কি উদ্দেশ্যে দিতে হবে তা একদম স্বচ্ছ পানির মত স্পষ্ট। হাদিসে কুরবানির ফজিলত সম্পর্কে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: (ما عمل آدمي من عمل يوم النّحر أحبُّ إلى الله من إهراق الدّم، إنّها لتأتي يوم القيامة بقرونها وأشعارها وأظلافها، وأن الدم ليقع من الله بمكان قبل أن يقع من الأرض، فطيبوا بها نفسا
অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কুরবানির দিন মানুষের আমল সমূহের মধ্যে অন্য কোনো আমলই আল্লাহর নিকট কুরবানি অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় নয়।
অবশ্যই কিয়ামতের দিন কুরবানির পশু তার শিং, লোম ও খুর নিয়ে উপস্থিত হবে। যে কুরবানি শুধু আল্লাহর জন্য করা হয়, নিশ্চয় সেই কুরবানির রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা একনিষ্ঠতা ও আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে কুরবানি আদায় কর।’ (তিরমিজি)
কুরবানি আল্লাহ কেবল তাঁর বান্দাদের জন্য একটা লটারি হিসেবে ওয়াজিব করেছেন। এই লটারি যে জিতবে সেই তো আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে। আর যে প্রিয় হবে সে তো হবে দুনিয়ার রাজা।
কিন্তু,পরিতাপের বিষয় হলো যখনি ঈদুল আযহার সময় ঘনিয়ে আসে তখনই একদল সুশীল সমাজের পোশাক পড়া একদল মানুষ পশু হত্যা নামক আন্দোলন করে কুরবানি বন্ধ করতে চায়। অথচ এই কুরবানি একটি অত্যাবশকীয় বিধান।
ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি দিবে না তার ব্যাপারে হুজুর সাঃ অভিসম্পাত করে বলেছেন:
عن ابي هريرة رضي الله عنه قال ان رسول الله صلي الله عليه و سلم قال: من وجد سعة فلم يضح فلا يقربن مصلانا
অর্থ: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন, ‘যার সামর্থ্য আছে কিন্তু সে কোরবানি করল না (অর্থাৎ কোরবানি করার সংকল্প তার নেই) সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।
স্বয়ং নবীজীর এই অভিসম্পাতের পর যারা এই ওয়াজিব পালন করে না, তারা বড় গুনাহের ভাগীদার। সম্পদশালী ব্যক্তি যদি এ হুকুম অমান্য করে তার বড় গুনাহ হবে।
সময়টা এখন মহামারি করোনার। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এটি হলো পরীক্ষা। কিন্তু সুশীল সমাজের চাদর গায়ে দেয়া কিছু লোক এই বলে হুংকার দিচ্ছে পশু জবাই করলে করোনা বেড়ে যাবে।
আহ! এই সমস্ত নির্বোধদের অমূলক কথা আজকাল সরলমনা মুসলমানরা বিশ্বাস করা শুরু করে দিয়েছে।এর ফলে তারা কুরবানির মত ওয়াজিব কাজকে পরিত্যাগ করে দিচ্ছে। অথচ এই কুরবানি হলো আল্লাহ প্রদত্ত লটারি। এই লটারি যে জিতবে সেই হবে দুনিয়া আর আখেরাতের সফলকামী।
তাছাড়া এই কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহ করোনা নামক আজাবকে আমাদের থেকে উঠিয়ে নিবেন ইনশাআল্লাহ। তাই পরিশেষে বলতে চাই, কুরবানির মত একটি ওয়াজিব কাজ যেমনি ভাবে নিজে আদায় করবো তেমনি অন্যদেরকেও আদায় করতে উৎসাহিত করবো। কোনো সামর্থ্যবান ব্যক্তি যেনো এবার কুরবানি না দিয়ে বাসায় বসে না থাকে। মনে রাখতে হবে আপনার কুরবানির মাধ্যমে শুধু আপনিই উপকৃত হচ্ছেন এমন নয়, বরং কুরবানির গোশত বিতরণের মাধ্যমে অসহায় মানুষের কিছু বেলা খাবারেরও ব্যবস্থা হচ্ছে। একে তো কুরবানি করার সওয়াব তার উপর অসহায় মানুষের মুখে আহার দেয়ার সওয়াব। এ যেনো এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত।
আল্লাহ তা'য়ালা এই কুরবানির মাধ্যমে আমাদের কে করোনার ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত করুন। সুন্দর সজীবতার সাথে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
এনটি