মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

পাত্রী দেখার বিষয়ে শরিয়তের যে নির্দেশনাগুলো মানা জরুরি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মদ রাশেদ ডাসকাওয়ি

বিয়ে শাদি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিবাহের বিষয়টি আমাদের সমাজে একটি কঠিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের প্রায় প্রত্যেকের পরিবারেই এ বিষয়টি নিয়ে আগুনে জ্বলছে। কেমন যেনো আমাদের হাত বাধা। আর আমরা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছি। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ীই চলে আসছি আমরা।

যতই সহজ করার চেষ্টা করছি সমাজ আমাদের ততই কঠিণ বাগডোরে বেধে ফেলছে। আমরা এর থেকে বের হতে পারছি না। অতএব, বিয়ের বিষয়ে জটিলতা কাটাতে সর্বপ্রথম সমাজের মুরব্বিদের এগিয়ে আসতে হবে।

সাহসিকতার সঙ্গে বিষয়টির সমাধান করতে হবে। বাবা যেনো এ কথা না ভাবে, আমার ছেলেই তো। চলো এবার সমাজের রুসুম অনুযায়ী বিবাহের অনুষ্ঠান করা হোক। আনন্দ তো আর বারবার আসবে না। ছেলেও চিন্তা করে বিবাহ তো আমরই চলুক যেভাবে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে কখনোই এ সমাজের পরিবর্তন সম্ভব নয়।

এ জাতীয় পরিস্থিতিতে এই অবৈধ সামাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসার পথ হল ঈমানী শক্তি ব্যবহার করা। সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণের চেতনা হৃদয়ে জাগ্রত করা। হযরত রাসুলে আকরাম সা. এর জীবনে ১১টি বিবাহের কথা পাওয়া যায়। রাসুল সা. এ ১১ জন নারীকে বিবাহ করেছেন। তাদের মধ্যে নয় জন স্ত্রী রাসুল সা. এর ইন্তেকালের সময় জীবিত ছিলেন। আর দু’জন স্ত্রী রাসুল সা. এর জীবত থাকাবস্থাতেই ইন্তেকাল করেন। (অর্থাৎ হযরত খাদিজা রা. ও উম্মুল মাসাকিন হযরত জয়নব বিনতে খুযাইমা রা.)।

এ ছাড়াও আরও দু'জন নারী আছেন যাদেরকে রাসুল সা. বিবাহ করেছেন কি না এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। তবে ঐতিহাসিকগণ সম্মত হন যে তাদের কে রাসুল সা.এর কাছে প্রেরণ করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশিরভাগ স্ত্রী বিধবা ও বয়স্ক ছিলেন। আরবে সেসময় বয়স্ক ও বিধবাদের বিবাহ প্রচলিত ছিলো। ঐতিহাসিকদের মতে, বেশিরভাগ বিবাহ বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে ঐক্য গড়ার জন্য বা তাদের সম্মান জানাতে হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, সুতরাং বহুবিবাহের জন্য যারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অভিযুক্ত করেন তাদের যুক্তি অবৈধ হয়ে যায়। এর মধ্যে কেবল হযরত খাদিজা ও হজরত মারিয়া রা. এর সন্তান ছিল। এ আলোচনার উদ্দেশ্য হলো আমাদের সামনে নবী আকরাম সা. এর বিয়ের দৃষ্টান্ত থাকা। আমাদের সমাজ ও ঘরে ঘরে সেগুলি আলোচনা করা, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমেই মাজিক এ কুপ্রথাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করি।

সর্বোপরি এ সামাজিক দুর্দশা থেকে উত্তরণের উপায় চিন্তা করে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বিবাহ আপনার। আপনি যদি সিদ্ধান্ত নেন তবে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। আপনি যদি হুমকি দেন, এভাবে না হলে আমি বিয়ে করব না। তবে প্রত্যেককেই আপনার হুমকির সামনে মাথা নত করতে হবে। আর বিয়ে যতি অন্যের হয় তবে তাদেরকে হেকমত ও সুকৌশলে সুন্নাতি বিবাহের দিকে আকৃষ্ট করুন। যদি তারা না মানে তবে আপনি তাদের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। মনে রাখবেন সমস্ত সমস্যা একবারে দূর হয়ে যাবে না, ধীরে ধীরে এই সমস্ত সমস্যাগুলি দূর করা সম্ভব, তবে পদক্ষেপ নিতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করদে হবে। আল্লাহ কে বলতে হবে হে আল্লাহ, আপনি আমাকে সাহায্য করুন, আমাকে শক্তি দিন। আস্তে আস্তে সবকিছু পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহয্য চাওয়া একান্ত জরুরি। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন।

সামাজিক রীতি রেওয়াজ সংস্কারে সাধারণ শর্তাদি

এটি সত্য যে প্রতিটি রীতি রেওয়াজিই মন্দ ও নাজায়েজ নয়। তবে প্রত্যেক ঐ সামাজিক রীতি-নীতি যা সাওয়াব মনে করে করা হয় তা নাজায়েজ। রীতি-নীতির থেকে বের হয়ে আসতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি জিনিস জেনে রাখতে হবে।
১. বিয়ের অনুষ্ঠানে সব ধরণের ফটো ও ভিডিও করা থেকে বিরত থাকা।
২. অনুষ্ঠানে বেপর্দা যেনো না হয়
৩. বিবাহের কোনও পর্যায়ে পুরুষ নারীর মেলা মেশা অনুচিত।
৪. জোর করে বা মনে কষ্ট নিয়ে বিয়ের কোনো পর্যায়ে কোনো কাজ না করা।
৫. বিয়ের কোনো পর্যায়ে কোনো জিনিসের লেনদেন করা থেকে বিরত থাকা।
৬. মানুষ দেখানোর জন্য কোনো কিছু করা যাবে না।
৭. খাওয়া দাওয়ায় অপচয় করা যাবে না।
৮. কোনো জিনিসের অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
৯. কোনো ধরণের ঋণ বা সুদি ঋণ থেকে বিরত থাকা।

আজকের নিবন্ধটির বিষয় হলো শরিয়তে বিয়ে করার ক্ষেত্রে কোন ধরণের মেয়ে ও তার বৈশিষ্ট কী থাকবে সে বিষয়ে। এ কাজটি বিয়ের একদম প্রধান একটি কাজ। এ আলোচনার পর আস্তে আস্তে আমরা আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উল্লেখ করবো। ইনশাআল্লাহ।

শরিয়তের দৃষ্টিতে কনে কেমন হওয়া চাই?

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‌নারীদেরকে চারটি জিনিসের জন্য বিয়ে করা হয়। ১. সম্পদের জন্য, ২. বংশ-বুনিয়াদের জন্য, ৩. সৌন্দর্যের জন্য এবং ৪. দ্বীনদারীর জন্য। অতএব দ্বীনদারকেই অগ্রাধিকার দাও। তোমারা সফল হয়ে যাবে। (বুখারি-৪৮০২ )

আবূ উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন- কোন মু’মিন ব্যক্তি আল্লাহ্ভীতির পর উত্তম যা লাভ করে তা হলো পুণ্যময়ী স্ত্রী। স্বামী তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা পালন করে; সে তার দিকে তাকালে (তার হাস্যাজ্জ্বল চেহারা ও প্রফুল্লতা) তাকে আনন্দিত করে এবং সে তাকে শপথ করে কিছু বললে সে তা পূর্ণ করে। আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে তার সম্ভ্রম ও সম্পদের হেফাযত করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮৫৭)

ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমাদের কাছে এমন ব্যক্তির বিয়ের সংবাদ আসে যার দিনদারি ও চরিত্র তোমার পছন্দ। তাকে বিয়ে কর। চাই সে যেই হোক না কেনো। তুমি যদি এমন কর তাহলে পৃথিবীর মধ্যে প্রচুর ফেতনা ফাসাদ কলহের সৃষ্টি হবে। (মুসান্নিফে ইবনে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস নম্বর-১০৩২৫।

পবিত্র কুরআন ও অনেক হাদিসের আলোকে সুখী জীবনের জন্য যে নারী কে বিয়ের জন্য নির্বাচন করা আবশ্যক। সে হবে ফরহেজগার মুত্তাকি। পবিত্র, সম্ভ্রান্ত ও বাড়ির সীমানায় বাস করা, অনৈতিকতা থেকে বেঁচে থাকা নারী। পুরুষদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করা থেকে বিরক থাকা নারী। একজন সতী কুমারী নারী। যার ঈমান ও আমল রয়েছে। এমন নারী যে সর্বাস্থায় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকে। এমন নারী যে তার স্বামীর সম্মান, সম্পদ ও জীবন রক্ষা করেন। এমন নারী যে বেশি বেশি মেহনত করতে পারে ও বেশি সন্তান প্রসবের যোগ্যতা রাখে। কুমারী নারীকে বিয়ে করা।

কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত এই গুণাবলীগুলো আলোচনা করে একটি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, যেনো প্রত্যেক পিতা তার কন্যাদের এভাবে শিক্ষা দেয়। এ গুণাবলীগুলো অর্জনের জন্য ঘরের পরিবেশও সেরকমভাবে তৈরি করে। ঘরে নিয়মিত তালিমের ব্যবস্থা করবে। আর সন্তানদের মাদরাসায় পাঠায়।

কনে দেখতে যেতে করণীয়

কোনো কনে দেখতে যাওয়ার আগে অবশই ইস্তেখারা করে যাবে। এরপর এলাকার মানুষের কাছ থেকে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তার চরিত্র আদব কায়দা চাল চলন দীনদারী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবে। যদি এতে সন্তুষ্ট হওয়া যায়, তবে বাবা-মা বড় ভাই বোনদের কনে দেখতে পাঠাবে। এজন্য বড়সর অনুষ্ঠান করে খাওয়া দাওয়া তাদের বাড়িতে বিভিন্ন জিনিষ নেয়ার কোনো দরকার নেই। এ কারণে পরবর্তিতে নাযুক পরিস্থিতিরে তৈরি হয়। প্রত্যেক কনের বাবা-মা আত্মীয় স্বজন পরিবার কনেকে নিয়ে চিন্তিত থাকে। তাদের কাছে বিয়ের কথা বলে কনে দেখে বাতিল করে দেয়া এটা অনেক কঠিন একটা বিষয়। পছন্দ অপছন্দের বিষয়টি খুব শালিনতার সাথে বুদ্ধি বিবেচনা করে জানিয়ে দেয়া উচিত। সরাসরি কোনো সিদ্ধান্তে গেলে তারা কষ্ট পেতে পারে সেটা অবশ্যই খেয়াল করা উচিৎ।

কনে পছন্দ না হলে তাদের দোষারূপ না করা

বেশিরভাগ মানুষকে দেখা যায়, মেয়ে পছন্দ না হলে তাদের দোষ ইত্যাদী বলে কেটে পড়ার চেষ্টা করে। পছন্দ নাই হতে পারে, তাই বলে তাদের দোষারূপ করা, তাদের নানান বিষয়ে কটাখ্য করা এটা অনকে বড় গুনাহ। এসব নিন্দনীয় কাজ তেকে বেঁচে থাকতে হবে। আর অপছন্দ হলে নিজেদের বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সরে আসতে হবে। তাদের কোনো দোষ বর্ণনা করে আপনি চলে আসবেন এটা অনুচিত।

কনে কে এক নজর দেখা

যদি কোনো মেয়েকে বিয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়। তখন তাকে এক নজর দেখা জায়েজ আছে। কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বাণী থেকে এটা বুঝা যায়। তবে কিভাবে দেখবে সে তরিকা কোথাও সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে লজ্জা ও শালিনতার মানদণ্ডে শরিয়াকে সামনে রেখে এক নজর দেখা যেতে পারে। তবে এটা মনে রাখতে হবে কনে কে দেখা এটা ছেলের জন্য আবশ্যকীয় কোনো বিষয় নয়। যদি মেয়ের পরিবার এতে রাজি থাকে তো সহজে বিষয়টি সেরে নিতে হবে। আর যদি মেয়ের পরিবার এতে রাজি না থাকে, তাদের সঙ্গে জোড়াজুড়ি ঝগড়া-ঝাটি করা যাবে না। তখন ছেলের পরিবারের কোনো অভিজ্ঞ নারী মেয়ের বর্ণনা ছেলের কাছে বলবে। এতে যদি সে সন্তুষ্ট হয় তহালে বিয়ের দিকে আগাবে। আর যদি সন্তুষ্ট না হয় তাহলে তাদের কাছে নিজেদের উজর পেশ করবে। তাদের কোনো দোষ দেয়া যাবে না। এটি লক্ষ করা উচিত, শরিয়ত কিছু বিষয় বিবেচনা করে মেয়েকে বিবাহের আগে একবার দেখার অনুমতি দিয়েছে। হ্যাঁ, তবে এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা, যেমন একটি পার্টির আয়োজন করা। মেয়েটিকে সুন্দর করে সাজানো। পার্লারে নিয়ে যাওয়া। এর পরে ছেলের সামনে উপস্থিত করা। এসব শরিয়ত সমর্থন করে না। অবশ্যই এসব বিষয় পরিহার করতে হবে। যাইহোক, এই জাতীয় ক্ষেত্রে, কোনও মেয়ে যদি সাধারণ পরিচ্ছন্ন কাপড় অলঙ্কার পরেন যেগুলো তিনি সবসময় ব্যবহার করেন এতে কোনো সমস্যা নেই।

এছাড়াও এ বিয়ের উদ্দেশ্যে মেয়েটির কোনো ছবি ছেলের পরিবারকে দেওয়া ঠিক নয়, কারণ ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে ছাড়াও অন্য কোনো গায়রে মাহরাম দেখে ফেলার আশঙ্কা থাকে। অযথা ছেলের ছবি চাওয়াও ঠিক হবে না। যদি মেরে বাড়ি গিয়ে দেখতে সমস্যা হয় তাহলে ছবি ইত্যাদী না পাঠিয়ে স্কইপি, ইমু ইত্যাদী ভিডিও চেটের মাধ্যামেও এক নজর দেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

চাচাত ভাই বোনো ও নিকটাত্মীয়দের বিয়ে করা

নিকটাত্মীয়দের ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে করা জায়েজ, শরীয়তে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, কিছু লোক বলে যে, এ সব বিয়ে সুখের হয় না। আসলে শরিয়তে এ বিষয়ে কিছু বলা নেই। এগুলো অভিজ্ঞতার বিষয়। যারা বলে হয়ত অভিজ্ঞতা থেকেই বলে। অভিজ্ঞতা সব সময় সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। যেহেতু শরিয়তে নিষেধাজ্ঞা নেই তাই এটা নিষিদ্ধ করা যাবে না। তবে কেউ যদি মনে করে এটা করলে সমস্যা হবে তাহলে এর থেকে বিরত থাকতে পারবে।

ছেলে বা মেয়ের ব্যপারে পরামর্শ করা

যে ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে আপনার সন্তানের সম্পর্ক করাবেন। উপর্যুক্ত গুণাবলীগুলো আছে কি না এ বিষয়ে পরামর্শ করে নিবেন। এটা সুন্নাত। মেয়ে বা ছেলের যে ভালো চায় এমন কারো সঙ্গে পরামর্শ করা। ছেলের বা মেয়ের কোনো সমস্যা থাকলে স্পষ্ট করে বলা। বাস্তবতা সম্পর্কে জানানোও আবশ্যক। এমনিভাবে যদি এক বা একাধিক সম্মন্ধ যদি সামনে থাকে। তারপরও পরামর্শ করে যেটা ভালো হয়, যার সঙ্গে সম্পর্ক করলে ভালো সেটাই গ্রহণ করা উচিৎ।

হজরত ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. কে তার স্বামী তালাক দেয়ার পর একই সময় হজরত মুআবিয়া ও হজরত আবুল জাহাম রা. বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। এক তালাক প্রাপ্তা ফাতেমা বিনতে কায়েসকে একই সঙ্গে কুরাইশের আমিরের ছেলে আমিরে মুআবিয়া আর আবুল জাহাম প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে হজরত ফাতেমা বিনতে কায়েস রাসুল সা. এর সঙ্গে পরামর্শ করলেন। রাসুল সা. বললেন, মুআবিয়া বড় ফকির। তাকে বিয়ে করার দরকার নেই। আর আবুল জাহাম এত কঠিন স্বভাবের মানুষ, যে তার কাঁধ থেকে লাঠি নামেই না। তাই এ দু’জনকে বাদ দিয়ে উসামা ইবনে জায়েদকে বিয়ে কর।

পছন্দের বিয়ে
ভারসাম্যপূর্ণ এক ধর্মের নাম ইসলাম। ইসলামে কোনো ধরণের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি নেই। মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো বিধান ইসলামে রাখা হয়নি। মানুষের স্বাভাবের সঙ্গে যায়, ও সহজে করতে পারে এমন বিষয়ই ইসলামের বিধান করা হয়েছে। এজন্যই ইসলাম মানুষের কুপ্রবিত্তির প্রশ্রয় দেয়নি। নারী পুরুষের মিলন ইসলামে নিষিদ্ধ করলেও শরিয়ত এর একটি বৈধ পন্থাও বলে দিয়েছে। পৃথিবীতে বংশ বিস্তারের জন্য এটি প্রয়োজনীয় ছিল। প্রাকৃতিক অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষা বাদ দিয়ে একটি বৈধ পদ্ধতি কুরআন ও সুন্নাহ অনুমোদন দিয়েছে। এর নামই বিবাহ। শরিয়ত পুরুষ ও মহিলাদের পছন্দ ও অপছন্দ করার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের বল প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। অন্যদিকে, পুরুষ ও মহিলাদেরকে অভিভাবকদের উপর আস্থা রাখতে উৎসাহিত করেছে।

পছন্দের বিয়ের অর্থ যদি এটা নেয়া হয় যে, আপনি যাকে ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন, বিয়ের আগে তার সঙ্গে মেলামেশা করেন তাহলে এটা নাজায়েজ। এটা হারাম হবে। উভয়ের পরিবার যদি একমত হয় তবে তাদের শীঘ্রই বিবাহ করা উচিত। ছেলে মেয়েরা বর্তমান সময়ে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেন। পরবর্তিতে তাদের ভালোবাসায় ঘাটতি দেখা দেয়। তাদের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তাই সবার উচিত পারিবারিকভাবে অভিভাবকদের মাধ্যমে খান্দানি মেয়েকে বিবাহ করা। সব দিক দেখে বিয়ে করা। অভিভাবকদের সম্মতিতে যে বিয়ে হয় তাতে বরকতও থাকে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ