মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

পারিবারিক কলহ নিরসনে ইসলামের নির্দেশনা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাজী আব্দুল্লাহ ।। মানুষের সামাজিক জীবনের প্রথম ভিত্তিই হলো পরিবার। পরিবার বলতে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, ভাইবোনদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একান্নভুক্ত পরিমণ্ডলকে বোঝায়।

এদের সবার সমন্বয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অত্যাধিক। এটি মহান আল্লাহ তায়ালার হিকমত যে, তিনি আদি পিতা হজরত আদম আ. ও আদি মাতা হাওয়ার আ. মাধ্যমে পৃথিবীতে পারিবারিক জীবনের সূচনা করেছিলেন, যা আজও বিদ্যমান।

এর ব্যাপারে সবাই একমত যে, পরিবার ও সমাজ ছাড়া নিজে একাকী বসবাস করা কষ্টকর ও বলতে গেলে অসম্ভব। ছোট থেকে যুব ও পরিণত বয়সে সুখ-দুঃখ, মায়া-মমতা, সেবা-শুশ্রূষাসহ সব কার্যক্রম পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। সুশৃঙ্খল ও স্বাভাবিক জীবন প্রবাহের জন্য প্রয়োজন পবিত্র ও সুসভ্য সামাজিক ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থার মধ্যে থাকা চাই পরিপূর্ণ ও সব পর্যায়ে মঙ্গলকর নির্দেশনা। এ নির্দেশনা পাওয়া যায় ইসলাম ধর্মে। যেহেতু ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।

মানুষকে দুনিয়ায় দেওয়া আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত হলো ঘর-সংসার। যাকে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলা চলে। যে নিকেতনের ছায়াতলে মানবগোষ্ঠী ভালোবাসা ও অনুকম্পা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা এবং মহৎ জীবন ও শালীনতা লাভ করে।

এই আশ্রয়ে শিশু-কিশোর ও তরুণরা বড় হয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিস্তৃত হয়- ফলে পারস্পরিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সংসারে নারী-পুরুষ একজনের অন্তরের সঙ্গে অন্যের অন্তর যুক্ত হয়। পবিত্র কোরআনে কারিমের ভাষায়- ‘তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ। ’ -সূরা বাকারা : ১৮৭

পোষাক যেমন শরীরকে আগলে রাখে, তেমনি সংসারকেও নারী-পুরুষ উভয়েই আগলে রাখে সব ধরনের বিপদাপদ ও সমস্যা থেকে। এই হলো একটি সুখি সংসারের চিত্র।

তবে এর ভিন্ন চিত্র আমাদের সমাজে অহরহ দেখা যায়। যাকে বলা হয় পারিবারিক কলহ, আর এর প্রধান কারণ গুলো হচ্ছে; স্বামী-স্ত্রীর অভিভাবক অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজনের অযাচিত হস্তক্ষেপ, স্বামী-স্ত্রীর সব কর্মকাণ্ডের পিছনে নজরদারী, পরিবারের বড়দের পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে।

আর এগুলো হয় ছোটো-খাটো বিষয়কে কেন্দ্র করে। যার উৎপত্তি অযাচিত হস্তক্ষেপ, কিংবা গুজব ও আজে-বাজে কথায় কান দেওয়া এবং সেটাকে বিশ্বাস করা।

উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে প্রতিকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, বিবেক ও বুদ্ধি দ্বারা বিষয় ও পরিস্থিতি অনুধাবন করা। সেই সঙ্গে আরেকটি জরুরি বিষয় হলো- মনের দিক থেকে উদারতার পরিচয় দেওয়া, কোনো কোনো বিষয় দেখেও না দেখার ভান করা। কারণ সব সময় সে যা পছন্দ ও কামনা করে, তার মধ্যে মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত থাকে না, বরং কখনও কখনও সে যা পছন্দ ও কামনা করে না, তার মধ্যেই মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত থাকে।

বিষয়টি কোরআনে কারিমে এভাবে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ। ’ -সূরা আন নিসা : ১৯

পারিবারিক দ্বন্দ্ব, কলহ নিরসনে ইসলাম কি বলে, নবীজি সাঃ এর শিক্ষা কি তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অবশ্যই নবী সাঃ এর ওয়ারিশ হিসেবে আলেম উলামাদের দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ পারিবারিক সমস্যা সঙ্গে নিয়ে কোনো মানুষই তার দ্বীনি খেদমত বা ইবাদত বন্দেগী পালন করতে পারবে না। এতে ব্যক্তি ক্ষতির চেয়ে ইসলামের ক্ষতি যে বেশি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আর হযরত আবু বকর রাযিঃ এর উক্তি আমি জীবিত থাকবো আর দ্বীনের সামান্যতম ক্ষতি হবে এমনটি কখনোই হতে দিবো না। সুতরাং বর্তমান উলামায়ে কেরামদেরও উচিৎ এই স্লোগান কে সামনে রেখে দ্বীন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী সাধারণ মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। নিজের স্ত্রী, সন্তান সন্ততিদের সাথে কেমন আচরণ করতে ইসলামে বলা হয়েছে সেগুলো এমন ভাবে উপস্থাপন করা যাতে তা মানুষের অন্তরে গেঁথে যায়।

নবীজি সাঃ পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম তৎকালীন আরব সমাজ কে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট রূপে পরিনত করেছিলেন। এই সমাজের নজির কেয়ামত পর্যন্ত আর কেউ দেখাতে পারবেনা। তাই রাসূলের ওয়ারিশ হিসেবে আলেম উলামাদের দায়িত্ব হলো সেই আলোকেই বর্তমান পরিবার-ভিত্তিক সমাজকে গড়ে তোলা। এ ছাড়া সমাজ গঠনের দ্বিতীয় আর কোনো পথ নেই।

লেখক: তরুণ সাংবাদিক ও অনুবাদক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ