মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

দান ও অপব্যয় বিষয়ে হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর নীতি-আদর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।

হারদুঈ হযরত আল্লামা আবরারুল হক হক্কী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা বলেন, হযরত মাওলানা মুআজ্জিম আলী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা অনেক বড় আলেম ছিলেন৷ দারুল উলুম দেওবন্দের মুবাল্লিগ ছিলেন৷ নতুন প্রজন্মরা তাকে চিনে না, তাঁর বিষয়ে জানে না৷ পুরাতন লোকেরা তাকে চিনে জানে৷ তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন৷ এখন আমি সেই ঘটনাটি শুনাইতেছি৷

একবার এক সাহাবী হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে এসে নিজের জরুরত পেশ করে কিছু অনুগ্রহ চাইলেন৷ হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুর কাছে যাও৷ সে তোমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে৷ তোমার যা প্রয়োজন ব্যবস্থা করে দিবে৷

ফলে সেই সাহাবী মাগরিবের নামায পড়ে হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুর বাড়িতে গেলেন৷ ঘর থেকে আওয়াজ আসতেছিলো৷ হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুর আওয়াজ৷ তিনি তাঁর স্ত্রী হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেয়েকে বাতির সলতা মোটা দেয়ার কারণে শাসন করতেছিলেন৷

বলতেছেন, পাতলা সলতা হলেই কাজ চলে যে জগায়, সেখানে মোটা সলতা কেনো? এই কথাটি বাহির থেকে ঐ সাহাবী শুনে চিন্তা করতে লাগলেন, যিনি এই সামান্য বিষয়ে শাসন শুরু করলেন, তিনি আমার হাজত কীভাবে পুরা করবেন৷ আমার প্রয়োজন পুরা করার জন্যে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন৷ এইভেবে তিনি নিজের হাজতের কথা না বলে, সেখান থেকে চলে আসেন৷

হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈশিষ্ট ছিলো, তিনি সকলের খোঁজখবর রাখতেন৷ সকলের চিন্তাফিকির করতেন৷ তাদের কাজ হলো কী না? খোঁজখবর নিতেন৷ তিন চার দিন পর যখন ঐ সাহাবী আবার মজলিসে আসেন৷ তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাস করেন, তাঁর প্রয়োজন পুরা হয়েছে কী না?

তখন তিনি বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তার কাছে যাইনি৷ তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আবার যেতে বলেন৷ ঐ সাহাবী এইবার গেলেন৷ এবং নিজের প্রয়োজনের কথা বললেন৷

হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু তার কথা শুনে ঘরে গেলেন৷ এবং এক ব্যাগ ভর্তি দেরহাম নিয়ে তাঁকে দিলেন৷ এই দেখে ঐ সাহাবী আবারো পেরেশান হয়ে গেলেন৷

যিনি বাতির সলতা মোটা দেয়ার কারণে শাসন করলেন, তিনিই আবার একজন অভাবগ্রস্তের কথা শুনে তাঁকে এক ভর্তি দেরহাম দিয়ে দিলেন৷ তখন ঐ সাহাবী বললেন, অনুমতি দিলে একটি কথা বলতাম৷

তিনি বললেন, ঠিক আছে বলুন৷ তখন ঐ সাহাবী বলতে লাগলেন, এর আগেও একবার আপনার বাড়িতে আমি এসেছিলাম৷ সেই দিন আপনি বাতির সলতা মোটা দেয়ার কারণে আপনার স্ত্রীকে শাসন করতেছিলেন৷ অথচ, আজ আমাকে অনেক দেরহাম কোন সংকোচতা ছাড়াই অকপটে দিয়ে দিলেন৷ বিষয়টির কারণ কী?

হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, দেখো ভাই! বাতি জ্বালানোর উদ্দেশ্য হলো- আলো পাওয়া৷ আর আলো পাওয়ার কাজটি সলতা পাতলা হলেও চলে৷ তো, এই ক্ষেত্রে যদি মোটা সলতা ব্যবহার করা হয়, তাহলে অপব্যয় হয়৷ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যবহার হয়৷ এই জন্যে সেদিন আমি শাসন করেছিলাম৷

আর তোমাকে যে দেরহাম দিলাম, সেটি তো উপযুক্ত স্থানে দিয়েছি৷ প্রয়োজনের খাতে ব্যবহার হবে৷ যা হবে আমার জন্যে সওয়াব ও প্রতিদানের কারণ৷

হযরত বলেন, প্রবাদ আছে, بخشش سو سو حساب جو جو অর্থাৎ, দানের বেলায় শতভাগ, আর হিসেবের বেলায় কড়ায় গন্ডায়৷

এই ঘটনা বলার কারণ হলো, যখন নিজের প্রয়োজনের বেলায় এতো সতর্কতা অবলম্বণ করতে হয়, তাহলে যেক্ষেত্রে সর্বজনের হকের বিষয় এবং জটিল বিষয়, সেক্ষেত্রে আরো কতো বেশি সতর্কতা অবলম্বণ করা উচিত৷ মাদরাস, মসজিদ সমূহে যারা যে সহযোগীতা করেন, সেগুলো ব্যবহারেও সতর্কতা অবলম্বণ করা উচিত৷ এমন যেনো না হয় যে, অপ্রয়োজনীয় খাতে তা ব্যয় হয়ে গেছে৷ অপব্যয় করা হয়েছে৷ উদাহরণস্বরুপ, আমরা বাড়িতে যখন পাখা ব্যবহার করি, তখন কী প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা একটি করে পাখা ব্যবহার করি? না এক পাখাতেই সকলেই কাজ করি?

ঠিক এমনি যেনো হয় আমাদের তরিকা মসজিদ-মাদরাসার পাখা ব্যবহার করার বেলায়৷ এক পাখার নিচে যেহেতু অনেক মানুষ কাজ করা যায়, তখন যেনো এমন না হয় যে, প্রত্যেকেই একটি একটি করে আলাদা আলাদা পাখা চালু করে দিয়েছি৷ এমন কাজ করা ঠিক নয়৷ এমন কাজ করা থেকে সকলেই সতর্কতা অবলম্বণ করা জরুরি৷

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ