মুহাম্মাদ মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
হারদুঈ হযরত আল্লামা আবরারুল হক হক্কী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা বলেন, হযরত মাওলানা মুআজ্জিম আলী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা অনেক বড় আলেম ছিলেন৷ দারুল উলুম দেওবন্দের মুবাল্লিগ ছিলেন৷ নতুন প্রজন্মরা তাকে চিনে না, তাঁর বিষয়ে জানে না৷ পুরাতন লোকেরা তাকে চিনে জানে৷ তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন৷ এখন আমি সেই ঘটনাটি শুনাইতেছি৷
একবার এক সাহাবী হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে এসে নিজের জরুরত পেশ করে কিছু অনুগ্রহ চাইলেন৷ হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুর কাছে যাও৷ সে তোমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে৷ তোমার যা প্রয়োজন ব্যবস্থা করে দিবে৷
ফলে সেই সাহাবী মাগরিবের নামায পড়ে হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুর বাড়িতে গেলেন৷ ঘর থেকে আওয়াজ আসতেছিলো৷ হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুর আওয়াজ৷ তিনি তাঁর স্ত্রী হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেয়েকে বাতির সলতা মোটা দেয়ার কারণে শাসন করতেছিলেন৷
বলতেছেন, পাতলা সলতা হলেই কাজ চলে যে জগায়, সেখানে মোটা সলতা কেনো? এই কথাটি বাহির থেকে ঐ সাহাবী শুনে চিন্তা করতে লাগলেন, যিনি এই সামান্য বিষয়ে শাসন শুরু করলেন, তিনি আমার হাজত কীভাবে পুরা করবেন৷ আমার প্রয়োজন পুরা করার জন্যে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন৷ এইভেবে তিনি নিজের হাজতের কথা না বলে, সেখান থেকে চলে আসেন৷
হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈশিষ্ট ছিলো, তিনি সকলের খোঁজখবর রাখতেন৷ সকলের চিন্তাফিকির করতেন৷ তাদের কাজ হলো কী না? খোঁজখবর নিতেন৷ তিন চার দিন পর যখন ঐ সাহাবী আবার মজলিসে আসেন৷ তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাস করেন, তাঁর প্রয়োজন পুরা হয়েছে কী না?
তখন তিনি বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তার কাছে যাইনি৷ তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আবার যেতে বলেন৷ ঐ সাহাবী এইবার গেলেন৷ এবং নিজের প্রয়োজনের কথা বললেন৷
হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু তার কথা শুনে ঘরে গেলেন৷ এবং এক ব্যাগ ভর্তি দেরহাম নিয়ে তাঁকে দিলেন৷ এই দেখে ঐ সাহাবী আবারো পেরেশান হয়ে গেলেন৷
যিনি বাতির সলতা মোটা দেয়ার কারণে শাসন করলেন, তিনিই আবার একজন অভাবগ্রস্তের কথা শুনে তাঁকে এক ভর্তি দেরহাম দিয়ে দিলেন৷ তখন ঐ সাহাবী বললেন, অনুমতি দিলে একটি কথা বলতাম৷
তিনি বললেন, ঠিক আছে বলুন৷ তখন ঐ সাহাবী বলতে লাগলেন, এর আগেও একবার আপনার বাড়িতে আমি এসেছিলাম৷ সেই দিন আপনি বাতির সলতা মোটা দেয়ার কারণে আপনার স্ত্রীকে শাসন করতেছিলেন৷ অথচ, আজ আমাকে অনেক দেরহাম কোন সংকোচতা ছাড়াই অকপটে দিয়ে দিলেন৷ বিষয়টির কারণ কী?
হযরত উসমান রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, দেখো ভাই! বাতি জ্বালানোর উদ্দেশ্য হলো- আলো পাওয়া৷ আর আলো পাওয়ার কাজটি সলতা পাতলা হলেও চলে৷ তো, এই ক্ষেত্রে যদি মোটা সলতা ব্যবহার করা হয়, তাহলে অপব্যয় হয়৷ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যবহার হয়৷ এই জন্যে সেদিন আমি শাসন করেছিলাম৷
আর তোমাকে যে দেরহাম দিলাম, সেটি তো উপযুক্ত স্থানে দিয়েছি৷ প্রয়োজনের খাতে ব্যবহার হবে৷ যা হবে আমার জন্যে সওয়াব ও প্রতিদানের কারণ৷
হযরত বলেন, প্রবাদ আছে, بخشش سو سو حساب جو جو অর্থাৎ, দানের বেলায় শতভাগ, আর হিসেবের বেলায় কড়ায় গন্ডায়৷
এই ঘটনা বলার কারণ হলো, যখন নিজের প্রয়োজনের বেলায় এতো সতর্কতা অবলম্বণ করতে হয়, তাহলে যেক্ষেত্রে সর্বজনের হকের বিষয় এবং জটিল বিষয়, সেক্ষেত্রে আরো কতো বেশি সতর্কতা অবলম্বণ করা উচিত৷ মাদরাস, মসজিদ সমূহে যারা যে সহযোগীতা করেন, সেগুলো ব্যবহারেও সতর্কতা অবলম্বণ করা উচিত৷ এমন যেনো না হয় যে, অপ্রয়োজনীয় খাতে তা ব্যয় হয়ে গেছে৷ অপব্যয় করা হয়েছে৷ উদাহরণস্বরুপ, আমরা বাড়িতে যখন পাখা ব্যবহার করি, তখন কী প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা একটি করে পাখা ব্যবহার করি? না এক পাখাতেই সকলেই কাজ করি?
ঠিক এমনি যেনো হয় আমাদের তরিকা মসজিদ-মাদরাসার পাখা ব্যবহার করার বেলায়৷ এক পাখার নিচে যেহেতু অনেক মানুষ কাজ করা যায়, তখন যেনো এমন না হয় যে, প্রত্যেকেই একটি একটি করে আলাদা আলাদা পাখা চালু করে দিয়েছি৷ এমন কাজ করা ঠিক নয়৷ এমন কাজ করা থেকে সকলেই সতর্কতা অবলম্বণ করা জরুরি৷
-এটি