মাও.শামসুল আরেফীন।।
সারা বিশ্ব যখন করোনার মত কঠিন এক ভয়াল মহামারিতে আতঙ্ক। মৃত্যুর ভয়ে মানুষের অন্তর রীতিমত প্রকম্পিত হচ্ছে।প্রতিদিন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলছে লাশের যেনো এক বাহারি আয়োজন। চারিদিকে স্বজনহারাদের আর্তনাদ। এটা এমন একটি দূর্লভ ইঙ্গিত যা ইতিপূর্বে পৃথিবী কখনো অবলোকন করেননি।
পৃথিবী এমন দীর্ঘস্থায়ী মহামারি কখনো দেখেননি, যা আমাদের চোখের সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।সমগ্র পৃথিবীতে একই সাথে এত মানুষের আর্তনাদের চিৎকার। চারিদিকে শুধু করোনার ভয়।
কার আগে কে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তা জানা নেই কাহারো। এ-যাবত অনেক তরুণ বয়সের মানুষও মৃত্যু বরণ করেছেন। তারা কি জানতো যে করোনার এই ভয়াল থাবায় তারা আক্রান্ত হয়ে ইহকাল ত্যাগ করবে।এ-প্রশ্ন কখনোই তাদের মানসপটে উদয় হয়নি।
আমরা সবাই জানি যে,দিনদিন করোনা তার রূপ বদলাচ্ছে।বাস্তবিক পক্ষে এখনো গবেষকগণ করোনা থেকে পরিত্রাণ লাভ করার মেডিসিন বের করতে সক্ষম হয়নি।
এর দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায় যে, আমাদের প্রভু আল্লাহ তায়ালা তায়ালা আমাদের ওপর রাগান্বিত হয়ে আছেন।
এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য উচিৎ হচ্ছে ; আমরা যে যেই প্রান্তেই থাকি, বেশি থেকে বেশি আল্লাহ তায়ালার নিকট খুবই বিনয়ের সাথে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই নিবেদন জানানো, হে দয়ার সাগর।হে অসীম দয়ালু।হে ক্ষমার অধিকারী।আপনি আমাদের ওপর থেকে আরোপিত মহামারি উঠিয়ে নেন।আমরা এ ভয়াবহ পরীক্ষা দিতে পারবো না।
কারণ আমাদের ঈমান যে, অতি দুর্বল। আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো ;যদি আপনি আমাদেরকে পরীক্ষা করেন।এইভাবে বিনয়ীর সাথে প্রভুর নিকট দুর্বলতা পেশ করা।
সুন্দর পৃথিবী পেতে হলে হাদিসের ভাষ্যমতে সমাজ থেকে সকল প্রকার বেহায়াপনা, অশ্লীলতা মূলোৎপাটন করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় সর্ব প্রকার বালা-মসিবত খুব শীগ্রই এ-ভূপৃষ্ঠ থেকে বিদায় নেবে।
আমরা নিজেদের ব্যাপারে অনেক গাফেল হয়ে গেছি। নফসের আনুগত্যের মাঝে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছি।কথা ছিলো আল্লাহ এবং প্রিয় নবী সা. এর আনুগত্যের মাঝে যাপিত জীবনকে যাপন করা।আমাদের পাপের কারণে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে মহামারি নামক করোনা। চলুন দেখি এই ব্যপারে কুরআন কি বলে।
আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (আর রুম - ৩০/৪১) এই আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেলো যে, জলে স্থলে যত বিপর্যয় ঘটে সব মানুষের নিজ মন্দ কর্মের কারনেই।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে,তিনি একবার রাসুল সা. কে প্রশ্ন করে ছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল বিপদ কখন আসে। প্রতুত্তরে রাসুল সা. বলে ছিলেন যখন মানুষের মধ্যে নেশাদ্রব্যের ব্যবহার বেড়ে যায় এবং মানুষ প্রকাশ্যভাবে যিনায় লিপ্ত হয়।
তখন জমিনে নানারকম বিপর্যয় দেখা দেয়। আর সেই বিপর্যয় কখনো আসমান থেকে আল্লহ পাঠান আবার কখনো জমিন থেকে। আসমান থেকে যে বিপর্যয় আসে তা হচ্ছে কখনো প্রবল বৃষ্টির মাধ্যমে আবার কখনো শিলা বৃষ্টির দ্বারা আবার কখনো কঠিন বজ্রধ্বনি ইত্যাদি হয়ে থাকে।
আর জমিন থেকে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তা হচ্ছে কখনো বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের মাধ্যমে আবার কখনো হারিকেন কিংবা করোনা দ্বারা আবার কখনো ভূমিকম্পের দ্বারাও হতে পারে। উল্লেখিত সবগুলো হলো খোদাই গযব। এই গযব থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে তাওবা এবং ইস্তিগফার করা।নিজে গুনাহ পরিহার করে বেশি থেকে বেশি তাওবা ইস্তিগফার করা এবং অন্যকে এব্যাপারে আহ্বান করা।নতুবা হতে পারে আযাব গযব একের পর এক আসতেই পারে।
মুয়াত্তায়ে মালেক ও ইবনে মাজাহ শরীফে ইবনে উমর এবং ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে,রাসুল সা. এরশাদ করেন যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে বেহায়াপনা এবং অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি দেখা দেয়। আসুন সবাই নিজেদের বিবেক জাগিয়ে অনুতপ্ত হই আমাদের প্রভুর নিকট। তিনি যেনো আমাদের উপর থেকে করোনা নামক মহামারী উঠিয়ে নেন। আমিন।
আল্লাহ তায়া’লা আপনাকে সঠিক বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক,আমীন।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া আনওয়ারিয়া (মাদরাসা বরমী)। শ্রীপুর গাজীপুর।
-এটি