শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী

একমাত্র ইসলামেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আ.স.ম আল আমীন

মানবাধিকার বলতে বুঝানো হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার, আর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে যুগে যুগে আল্লাহ তায়লা অনেক নবী রাসুলদের কে পাঠিয়েছেন।

সর্বশেষ প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সা. কে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সময় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য পাঠিয়েছেন। তখনকার লোকদের কাছে মানবাধিকার বলতে কিছুই ছিলনা।তিনি ইসলামের সুমহান বিজয়ের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে ইসলামকে বিশ্বের কাছে মানবাধিকারের মডেল হিসেবে তুলে ধরেন।

মানবাধিকার বর্তমান বিশ্বে খুবই আলোচিত একটি শব্দ। বিশ্বে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের মধ্যে রয়েছে- জীবন ধারনের অধিকার, ধর্মের অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার, পরিবার গঠনের অধিকার, ন্যায়বিচার লাভের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, এই অধিকার লঙ্ঘিত হলে মানুষের বেঁচে থাকা অর্থহীন ও অসম্ভব হয়ে পড়বে।

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ ঘোষিত হয় এবং এ সনদ কার্যকারী করার জন্য মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়। ইসলামী মানবাধিকার পৃথিবীর কোন অপশক্তি নেই যে সে সকল মানবাধিকার কখনো রহিত করতে পারে। ইসলামে মানবাধিকার ধারণা শুধু কোনো ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর প্রত্যেকটি মুসলমানের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ইসলাম মানুষের মর্যাদার অধিকার। সৃষ্টি কুলের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানব, তাকে অন্যান্য সকল সৃষ্টির তুলনায় উত্তম কাঠামোর সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং জগতের সমস্ত নিয়ামত ও শক্তিসমূহ মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন করে তার সেবায় নিয়োজিত করেছেন। মহান আলাহতায়ালা বলেন, তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহ তায়ালা আকাশ এবং জমিনের মাঝে যা কিছু আছে সবই তোমাদের কল্যাণে নিয়ন্ত্রণাধীন রেখেছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাম্য ও অপ্রকাম্য অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন। (সূরা লোকমান-২০)

ইসলাম মানবজাতিকে জন্মগতভাবে সমানভাবে সমান মর্যাদায় অভিসিক্ত করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ও মানবজাতি! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি।

তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন গোত্র ও বংশে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাবান যে অধিক মুক্তাকী। (সূরা হুজরাত-১৩) ইসলামে মানুষের বাক স্বাধীনতার অধিকার- মানুষের জীবন, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সাথে ইসলামে বিবেচনা করা হয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজীবন অতি পবিত্র এক সম্পদ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ যে জীবনকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না। এবং যদি কেউ অন্যায়ভাবে মারা পড়ে। তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি ক্ষমতা দিয়েছি প্রতিকার করার। কিন্তু সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা অতিক্রম না করে। কেননা সে সাহায্য পেয়েছে। (সূরা বনী ঈসরাঈল-৩৩)

ইসলাম মানবজীবন অসঙ্গত কারণে হরণ করতে নিষেধ করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, নর হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে, অভিযুক্ত কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীর প্রাণ রক্ষা করলো। (সূরা মায়েদা-৩২)

ইসলামে ন্যায্য বিচার পাবার অধিকার রয়েছে খুনের বদলে খুন, ব্যভিচারের শাস্তি আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ঠুর মনে হলেও সমাজে স্থায়ী শান্তি আনার জন্য সুষ্ঠু বিচারের বিকল্প নেই। ইনসাফ এবং সাম্যনীতি ইসলামী বিচার ববস্থার অন্যতম মূল বৈশিষ্ট। মহান আলাহতায়ালা বলেন, তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায় পরায়ণতার সাথে করবে। (সূরা নিসা-৫৮)

ইসলামে মানুষের সম্পদের অধিকার। অর্জিত ও ব্যক্তিগত সম্পদের স্বীকৃত। তবে এ ক্ষেত্রে শরিয়ত নির্ধারিত সমস্ত অধিকার ও কর্তব্য পালন করতে হবে। মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, নিকটাত্মীয়ের লালন-পালন ও দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে। অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা যাবে না। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। (সূরা বাকারা-১৮৮) ইসলামে মানুষের বিবেকের অধিকার।

ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে। দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। (সূরা বাকারা-২৫৬)

রাসূল সা. তার কথা ও কর্মের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চূড়ান্ত ও বাস্তবরূপে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করে সফলকাম হয়েছে। বিদায় হজে রাসূল সা. যে ভাষণ দান করেন কোরআনের ভাষায়। অদ্য আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতের সমাপ্তি ঘোষণা করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।

লেখক: মা'হাদুল ইকতিসাদ ওয়াল ফিকহীল ইসলামী ঢাকা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ