নুর আহমেদ সিদ্দিকী।।
বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে ইসলামী সংস্কৃতির যে আলো তিনি জ্বেলে গেছেন তা যুগ যুগ ধরে জ্বলবে বাংলায়। বাংলাদেশের যুব সমাজ যখন পশ্চিমাদের নগ্ন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার, ঠিক তখনই ইসলামী সংস্কৃতিকে নতুন করে উপস্থাপন করেন কাজী নজরুল পরবর্তী একজন তরুণ আলেম মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ। তাঁর চিন্তা, চেতনা ছিল সুদূরপ্রসারী। মুসলিম উম্মাহকে পশ্চিমাদের নগ্ন সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে নিজেকে বিলিয়ে দেন ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে। যার লক্ষ্য ছিল অপসংস্কৃতির বিনাশে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ। নির্মোহ মানসিকতা, উম্মাহর দরদ নিয়ে ইসলামী সংগীত জগতে পা বাড়িয়েছিল বাংলাদেশের সফল ইসলামী সংগীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ। তাঁর সংগীতে কখনো কেঁদে উঠতো যুবকের প্রাণ, কখনো সুরের ঝংকারে আন্দোলিত হত তরুণ সমাজ। কখনো বিপ্লবী কণ্ঠে অন্যায়, অনাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতো বিপ্লবী আইনুদ্দীন।
আইনুদ্দীন আল আজাদ যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ইসলামী সংগীত চর্চা করে গেছেন তার সুফল এ জাতি পাচ্ছে। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে, প্রত্যেকের মোবাইলে ইসলামী সংগীত স্থান করে নিয়েছে। ইংলিশ, হিন্দু অশ্লীল গানের যখন জয়জয়কার তখন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইসলামী সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন আইনুদ্দীন আল আজাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব। বাংলাদেশে কলরব মানে ভিন্ন কিছু। জাতীয় পর্যায়ে কলরব এখন আলোচিত, আলোড়িত এবং সুপরিচিত। শিশুদের মুখে এখন কলরবের ইসলামী সংগীত শুনতে পাই। গাড়ি, বাড়ি, দোকানে সর্বত্র এখন কলরবের ইসলামী সংগীত। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নির্মোহ মানসিকতা নিয়ে গড়ে তোলা সেই ছোট্ট সংগঠন আজ কোটি মানুষের প্রাণে স্থান করে নিয়েছে। কলরবের প্রতিটি সংগীতে রয়েছে সাহিত্যের ছোঁয়া।
আইনুদ্দীন আল আজাদের সংগীতের প্রতিটি কথা ছিল অসাধারণ। সহজ সরল প্রাঞ্জল ভাষায় ইসলামী সংগীত গেয়ে ইসলামী সংস্কৃতিকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য চূড়ায়। সংগীতের শব্দচয়ন, প্রকাশভঙ্গী, রচনাশৈলী ছিল অতুলনীয়। নিস্তেজ প্রাণে জাগিয়ে তুলতো বিপ্লবের সুর। কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠতো তার সুরের ঝংকার, কখনো মানবতা, বন্ধু, স্বজন, স্বজাতির জন্য কেঁদে উঠতো প্রাণ।
১৯৭৭ সালো ঝিনাইদহ জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন কিংবদন্তি মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ। অপসংস্কৃতির প্রতিরোধে এবং সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। তাঁর সংগীতে সাহিত্যের ছোঁয়া ছিল স্পষ্ট। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে ইসলামী সংগীত কে জনপ্রিয় করে তুলেছেন এই কিংবদন্তি। ২০১০ সালের ১৮ জুন তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় শাহাদত বরণ করেন। আজ ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এই মহান কিংবদন্তির রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
-এএ