শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

মাদক মরণ নেশা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক।।

মাদকাসক্তি হচ্ছে সব অপরাধের মূল। একজন মানুষ যখন অপরাধজগতে পা বাড়ায়, প্রথম সিঁড়িটি হলো মাদকদ্রব্য। সিগারেট হলো মাদকাসক্তির মূল কারণ। একজন মানুষ প্রথমেই কিন্তু মাদক সেবন করে না। প্রথমে যেটা করে সেটা হলো সিগারেটের নেশা। এই নেশা থেকে আস্তে আস্তে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মাদকের নেশায় আসক্ত বেশির ভাগই শুরু হয় বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যে।

মাদক গ্রহণের ফলে প্রাথমিক সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী স্বস্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর মরণ ফাঁদ। এই মরণ ফাঁদে একবার পড়লে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, সৃজনীশক্তি শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যহানি বলতে কেবলই দৈহিক স্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে না। দেহের পাশাপাশি বিশৃঙ্খল ও বিধ্বস্ত হয় মনের স্বাস্থ্য, ক্ষয় হয় নৈতিক মূল্যবোধ, মাদক কেড়ে নিচ্ছে তরুণদের একাংশের সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনা। যার ফল সমাজ-জীবনে দুর্যোগ নেমে আসে।

মাদকাসক্তি দেশে সংঘটিত অপরাধের একাংশের প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারিবারিক বিপর্যয়গুলো বিশেষজ্ঞদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এই সর্বনাশ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রকে মোটেও বিচলিত করে না। তারা কেবলই বোঝে ব্যবসা। তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিচ্ছে মরণনেশার উপকরণ মাদক।

তরতাজা তরুণদের মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে ইয়াবার ভয়াবহ নেশা। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক সুবন্ধন। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে অহরহ বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম হত্যার শিকার হচ্ছে। নেশাখোর বাবা মাদক সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে প্রিয় সন্তানকে খুনও করছে অবলীলায়। নেশার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, মাকে জবাই করা, আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো জগন্য ঘটনাও ঘটছে।

আশির দশকে আমাদের দেশে হেরোইনের আগ্রাসন ঘটে। ওই দশকের শেষ দিকে ফেনসিডিল মাদক রাজ্যের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ইয়াবার আগমন ঘটে মাদক রাজ্যে।

প্রথম দিকে এ আগ্রাসনকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন ইয়াবার থাবায় আক্রান্ত দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকা। রাজধানীর অভিজাত তরুণ-তরুণীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইয়াবা নেশায় আসক্ত। যেকোনো পরিবার এবং সমাজের জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তি হুমকিস্বরূপ। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা বোধ করে না। তারা সমাজের অনেক ক্ষতি করে থাকে।

মাদকাসক্তির কারণেই চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, ডাকাতি ও খুনখারাবির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে; যা সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধিসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

দেশের যুবসমাজকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে এ অপব্যবসার শিকড় উৎপাটনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে ধ্বংসের স্রোতে ভেসে যাচ্ছেন অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী। মাদকাসক্তির কারণে স্নায়ুতন্ত্র, হৃদ্যন্ত্র, যকৃৎ, ফুসফুস, প্রজননতন্ত্র, কিডনি, পাকস্থলীসহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

শিরায় মাদক গ্রহণের কারণে হেপাটাইটিস বি, সি, যৌনবাহিত রোগ ও এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু অনেক প্রচারণা সত্ত্বেও মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে না। বরং দিনকে দিন বাড়ছে। মনোভাবে পরিবর্তন না এলে কিছু হবে না। মাদকসক্ত সমাধানে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া জরুরি।

জনসচেতনতার বিকল্প নেই। মাদকের চাহিদা, সরবরাহ, চিকিৎসা অনেক দিক বিবেচনা করে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। একক কোনো উপায়ে এ সমস্যার মোকাবিলা করা অসম্ভব। জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ