ড.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বর্তমানে বেঁচে থাকার তাগিদে কিংবা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে কোমলমতি শিশুদেরও প্রচুর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে। ফলে তারা নানা রকম শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এমনকি মৃত্যুবরণও করছে।বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস আজ শনিবার (১২ জুন)। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০২ সাল থেকে জুন মাসের ১২ তারিখে দিবসটি পালন করা শুরু করে।করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিশুশ্রম বাড়ছে এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
পৃথিবীর বহু মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে নেমে আসছে। ফলে তারা শিশুদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। এতে জীবন ও জীবিকার জন্য বহু শিশুকে কাজ করতে হয়।বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১৫২ মিলিয়ন শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে।
যাদের মধ্যে প্রায় ৭২ মিলিয়ন শিশু বিপজ্জনক কাজে জড়িত। বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন শিশু বিভিন্ন শ্রমে জড়িত।আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তাঁর প্রবন্ধে লিখেন শিশুশ্রম দেশব্যাপী একটা বড়ো সমস্যা। শিশুরা শ্রমের হাতিয়ার নয়, জাতির ভবিষ্যৎ; শিশুদের হাতে ভিক্ষার থলে নয়, চাই বই ও কলম। তারা বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রি করেও প্রকৃত মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুদের কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে আসছে।
শিশু শুধু মাতা-পিতা নয় জাতির আশা, আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নের অপর নাম। সাধারণভাবে জন্ম থেকে আঠারো বছরের কম বয়সি মানুষের পরিচয় হলো শিশু। সে আগামী দিনের একজন প্রত্যাশিত কর্মক্ষম মানবসম্পদ। সঠিক পরিচর্যায় প্রাপ্য সকল মৌলিক অধিকার আর মর্যাদা নিয়ে তার বেড়ে ওঠার কথা। কিন্তÍ আর্থসামাজিক টানাপোড়েন আর জীবনের বাস্তবতায় কোনো কোনো শিশুকে শৈশব আর কৈশোরের সব চাওয়া-পাওয়া, আনন্দকে বিসর্জন দিতে হয়। পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে হয় অনেক সময়।শিশুশ্রম শিশুর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, শিশুর শৈশব কেড়ে নেয় এবং শিশুকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও শিশুশ্রম বলতে বুঝিয়েছে এমন শ্রম যা শিশুকে শৈশব থেকে বঞ্চিত করে তাদের সকল সম্ভাবনা ও মর্যাদা নষ্ট করে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।যে বয়সে একজন শিশুর বই, খাতা, পেন্সিল নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া এবং আনন্দিত চিত্তে সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সেই শিশুকে নেমে পড়তে হয় জীবিকার সন্ধানে।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেক মাতাপিতা ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। স্বল্পশিক্ষিত মাতাপিতা দারিদ্র্যের কষাঘাতে যখন পরিবারের ভরণপোষণে ব্যর্থ হন তখন তারা সন্তানকে স্কুলে পাঠানো এবং লেখাপড়ার খরচ জোগাতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তারা মনে করেন, সে যদি কাজে নিয়োজিত থাকে তাহলে সংসারের আয় সংকুলানে সহায়ক হয়।শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম বন্ধের অঙ্গিকার করেছে।
বাংলাদেশে শিশুশ্রমের প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে অর্থনীতি। তাছাড়া নদীভাঙন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক শিশু মাতাপিতার সাথে ছিন্নমূল মানুষ হিসেবে শহরে আসে কাজের সন্ধানে। এমন বাস্তবতায় কিছু মুনাফালোভী লোক স্বল্প মজুরির বিনিময়ে শিশুদের কাজে লাগায়। আবার সুযোগ পেয়ে অধিক সময় কাজে নিয়োজিত রাখে।প্রধানত দুটি সেক্টরে বাংলাদেশে শিশুশ্রম বিরাজমান।
আনুষ্ঠানিক খাত যেমন শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, জাহাজভাঙা ইত্যাদি এবং অনানুষ্ঠানিক খাত যেমন- কৃষি, পশুপালন, মৎস্যশিকার/ মৎস্যচাষ, গৃহকর্ম, নির্মাণকর্ম, ইটভাঙা, রিকসা-ভ্যান চালানো, দিন মজুরি ইত্যাদি। কিন্তু সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করার ক্ষেত্রেও শর্ত আরোপ করা হয়েছে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা ২০১০ এ।
এতে ১৮ বছরের নীচে শিশুকে কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে অল্প মজুরি দিয়ে অধিক কর্মঘণ্টায় নিয়োজিত রাখা যায় বলে তাদের কাজে নিয়োগ দিতে মালিকপক্ষের আগ্রহ বেশি থাকে। অনেক সময় কোনো মজুরি ছাড়াই পেটেভাতে কিংবা সামান্য মজুরিতে শিশুদের কাজে রাখা হয় ।বাংলাদেশ সংবিধানে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমসহ সবধরনের শ্রমসাধ্য কাজ থেকে শিশুদের প্রত্যাহার করে তাদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলাই জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালার লক্ষ্য। এ নীতিমালায় শিশু বিকাশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো শিশু দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করে; নিরাপত্তাহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে; সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে; বিশ্রাম বা বিনোদনের কোনো সুযোগ না পায়; যা তার শিক্ষাজীবন ব্যাহত করে এবং এমন কোনো কাজে নিয়োজিত হয় যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অমর্যাদাকর তবে মালিক বা নিয়োগকর্তা শিশু অথবা তার অভিভাবকের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হবে।
চুক্তি অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুকে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কাজের সম্পূর্ণ শর্ত থাকতে হবে, যাতে দৈনিক কর্মঘণ্টা, কর্মতালিকা, নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত বেতনসহ সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন ছুটির উল্লেখ থাকবে। লেখাপড়া অথবা দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং চাকরিচ্যুতির কমপক্ষে একমাস পূর্বে অবহিত করতে হবে। শিশুরা সহজেই কারিগরি বিষয় রপ্ত করতে পারে, এজন্য শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রচলিত আইনের আলোকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ নীতিমালায়। যাতে আগামী দিনে তারা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজেদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।সাধীনতার পর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রবর্তন করা হয় শিশু আইন ১৯৭৪।
পরবর্তীতে জাতীয় শিশুনীতি-১৯৯৪ প্রণয়ন করা হয়।শিশুদের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০০৫-২০১০ গ্রহণ করাসহ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুসমর্থনে বাংলাদেশিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং তৈরি পোশাক শিল্প থেকে শিশুশ্রম প্রত্যাহারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তারপরও শিশুশ্রম নিরসন তথা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে শিশুদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এখনো সম্ভব হয়নি। সরকার প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন হবে আশা করা যায়।
আর ২০২৫ সালের মধ্যে নিরসন হবে সব ধরনের শিশুশ্রম। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ এবং যথাযথ বাজেট বরাদ্দের পূর্ণ ব্যবহার হলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশল আজ তৃতীয় বিশ্বের বহুদেশের জন্য একটি মডেল। আজকে যে শিশু বা কিশোর, আগামী দিনে সেই হবে এ উন্নয়ন কৌশলের মূল চালিকাশক্তি। তাই শিশু অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তেমনি দারিদ্র্য দূরীকরণে আরো মনযোগী হতে হবে। সবাই মিলে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে একটি সুন্দর দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হবে। দেশ ও জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে এবং শিশুশ্রমের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে।
শিশুশ্রম নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোন- শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ইসলামে শিশুশ্রম পরিত্যাজ্য। শিশুশ্রমের ফলে তাদের মননশীলতা ও দৈহিক ক্ষতি হয়। আজ যারা শিশু, ভবিষ্যতে তারাই যুবক। তারাই সুশোভিত ও গৌরবময় ভবিষ্যতের পথনির্দেশক। আজকের শিশুর মাঝেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবী।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।’ (সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ৪৬)নবীজি (সা.) অবহেলিত শিশুদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা ও বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ধর্মে-কর্মে যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি শিশুদের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। শিশুদের প্রতি কোমল ব্যবহার নিজে করেছেন এবং অন্যদের সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ আধুনিক যুগে শিশুশ্রমিকরা কতই না অবহেলিত!
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিশুদের স্নেহ করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৩)সমাজজীবনে বাস্তবতার নিরিখে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও কম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি পাড়াশোনার সুযোগও রাখতে হবে। দারিদ্র্যের কারণে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া শিশুদের জানাতে ও বোঝাতে হবে যে তাদের দারিদ্র্য দূর করার মোক্ষম হাতিয়ার হলো শিক্ষা।ইসলামের বিধান হলো, পিতা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের উপার্জনের জন্য বাধ্য করতে পারবেন না। তিনি উপার্জন করতে পারলে করবেন, নতুবা ঋণ করে তাদের খরচের ব্যবস্থা করবেন, যেন তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও শিক্ষা চলাকালে পিতা তাদের খরচ চালিয়ে যাবেন। (ফাতাওয়া আলমগীরী : ১/৫৬১, রদ্দুল মুহতার : ৫/৩৪১)
প্রতিটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ইসলামে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। অথচ সমাজে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে শিশুদের কাজ করতে দেখা যায় না। শিশুশ্রমের ফলে শিশুদের মননশীলতা ও দৈহিক ক্ষতি হয় এবং মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, শিশুরা আয়ের লক্ষ্যে তাদের বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী বিপদ, ঝুঁকি, শোষণ, বঞ্চনা ও আইনগত জটিলতার সম্মুখীন হয়ে নিজেকে নিয়োজিত করে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে জড়িয়ে পড়ে। চরম দারিদ্র্য ও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে নৈতিক আদর্শের বৈশিষ্ট্য এর মুখ্য কারণ। হতদরিদ্র পরিবার সংসারের ব্যয় নির্বাহে অসমর্থ হয়ে বা অভিভাবকদের কর্মহীনতার কারণে মা-বাবার স্থলে শিশুরা অর্থ উপার্জনে অগ্রসর হয়। তাই শিশুশ্রম বন্ধ করতে না পারলে যতটা সম্ভব শিশুর কর্মস্থল ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ করা প্রয়োজন। ইসলামের শ্রমনীতিমালা অনুসারে কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব প্রদান করা সমীচীন নয়। সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান কোনো সময় বড় ধরনের জুলুমের পর্যায়ে চলে যায়। তাই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ কারও ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬)
অথচ দেশে কঠিন দারিদ্র্যের কারণে অসংখ্য শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় ও কায়িক শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। শিশুরা অস্বাস্থ্যকর ও প্রাণসংকটাপন্ন পরিবেশে কাজ করায় তাদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে এবং তারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। শিশুদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, যেমন উটের জকি, অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করা হয়। এ ধরনের প্রতিটি কাজ ইসলামে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সামগ্রিকভাবে শিশুদের নিপীড়নমূলক এসব কাজ থেকে মুক্তি দিতে ধর্মীয় সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইসলামে কাউকে সামর্থ্যের বাইরে কোনো দায়িত্বের নির্দেশ প্রদান করা হয়নি।
যে শিশুদের প্রতি দয়া-স্নেহ করে না, সে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য নয়। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তাদের সামর্থ্যের অধিক কাজ করাতে চাইলে তাদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করো এবং তাদের ওপর শক্তির অধিক কাজ চাপিয়ে দিয়ো না।’ (বুখারি)শিশুশ্রম প্রতিরোধ বিষয়ে সর্বমহলে চিন্তাভাবনা চলছে। কারণ, আজ যারা শিশু, আগামী দিনে তারাই যুবক।
শিশুরাই সুশোভিত ও গৌরবময় আগামীর পথনির্দেশক। উন্নত ও ধনী দেশে শিশুরা সব ধরনের অধিকার পেলেও দরিদ্র দেশে তারা মানবাধিকারবঞ্চিত থেকে যায়। শহরে বা গ্রামে প্রায়ই শিশুশ্রমিকদের অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যুমুখেও পতিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। দেশে বিপুলসংখ্যক শিশু শ্রমে নিযুক্ত থাকায় একদিকে যেমন তারা সুন্দর ও নিরাপদ শৈশব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। শিশুরা যখন তাদের সোনালি জগতের বাইরে অন্য জগতে প্রবেশ করে, বেঁচে থাকার রসদ জোগান দেয়, তখন তাদের শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক ও নৈতিকতার অবনতি ঘটতে থাকে।পরিশেষে নতুন বাজেটে এই শিশুদের কথা মাথায় রেখে স্কুলকেন্দ্রিক বিশেষ ভাতা বা আর্থিক প্রনোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী সমাজ ও সচেতন ব্যক্তিদেরকে তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে কোন শিশুকে কোন কর্মস্থলে নিয়োগ দেয়া না হয়।
লেখক, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
-এটি