শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সেই বিতর্কিত ব্যক্তি আটক জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নাম নির্ধারণ

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক শিক্ষার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উসমান বিন আব্দুল আলিম।।

১৭ মার্চ ২০২০ থেকে করোনা মহামারিজনিত কারণে সারাদেশের স্কুল-কলেজগুলোর সরাসরি শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ভার্সিটির হলগুলো বন্ধ রয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা যার যার বাড়িতেই অবস্থান করছে। একসঙ্গে অনেকটা সময় বাড়িতে থাকায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অপকর্ম বা জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার বিভিন্ন অসামাজিক কাজ ও পর্নোগ্রাফিতেও আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের চলাচল ও চরিত্রে ফাটল ধরেছে। শুধু তাই নয়, করোনায় শিক্ষার্থীরা বইবিমুখ হয়ে পড়েছে অধিকাংশে। আশপাশের ও বিভিন্ন জায়গায় বা মিডিয়া থেকে খোঁজখবর নিয়ে যা দেখা ও শোনা যাচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।

উদাহরণ হিসেবে যদি বলি তাহলে আমাদের এলাকার ইন্টার পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে দেখেছি খেলার সামগ্রী কেনার জন্য নিজ ঘর থেকে দেড় হাজার টাকা চুরি করেছে। আরেক শিক্ষার্থী নেশা করার জন্য একজনের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। এক বড় ভাই বলেছে যে, তার অনেক ফ্রেন্ড বা পরিচিত শিক্ষার্থী ডিপ্রেশন সইতে না পেরে মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আত্মহত্যা করতে গিয়েও ফিরে আসছে। কেউবা আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে। কিছুদিন আগে দেখা গেছে যে, এক শিক্ষার্থীকে মোবাইল কিনে দেয়নি দেখে তার বাবা-মার সঙ্গে অভিমান করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না ঝুলিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব হচ্ছে শিক্ষার্থীরা বাসায় অনেকটা সময় থাকার কারণে। স্টুডেন্টরা একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে, আর যত আজেবাজে চিন্তাভাবনা তাদের মাথায় আসছে। আর সেটাই তারা করছে। এই লকডাউনে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীরা। কারণ এসব ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত টিউশনি বা টুকটাক কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। ঢাকার শহরে এ রকম অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা টিউশনি বা ছোটখাটো কাজ করে নিজ পড়ার খরচ ও ছোট ভাই-বোনদের পড়ার খরচ চালাত। কিন্তু এই করোনা ভাইরাসের কারণে অভিভাবকরা টিউশনির শিক্ষককে পড়াতে না বলে দিয়েছে। অনেক প্রাইভেট কোম্পানি বন্ধ হয়েছে বিধায় হাজারো শিক্ষার্থী চাকরিচ্যুত হয়েছে।

এর ফলে সেসব শিক্ষার্থী যার যার বাড়িতে এসে বসে আছে অনেকটা মাস ধরে। এদিকে তাদের সামনে ফ্যামিলির আর্থিক সমস্যা, নিজের পড়াশোনা, অনেকটা সময় একজায়গায় থাকা, পকেট খরচ না থাকা সবমিলিয়ে এরা মানসিক ভারসাম্যে ভুগছে। এই ডিপ্রেশনের কারণে বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজ বেছে নিচ্ছে। যারা বাবা-মায়ের তদারকিতে আছে তারা ঠিক থাকলেও অনেকেই সঠিক রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছে। কেউ নেশা করা শুরু করে দিয়েছে, কেউ খারাপ লোকদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে, বাসায় অনেকটা সময় থাকার কারণে অনেকে আবার পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী এই ডিপ্রেশনে ভুগছে যে, তাদের পড়াশোনার বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই অনার্স প্রথম বছরের ছেলেটা তিন বছর হচ্ছে এখনো প্রথম বছরেই রয়ে গেল। কারোর সরকারি চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে বিধায় পেরেশানিতে আছে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের এখন নিত্যসঙ্গী হতাশা। যা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অনেক অনেক ক্ষতিকর।

অনেক শিক্ষার্থীর ভালো কাজও করতেও দেখা যাচ্ছে, আবার দেখা যায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে নিজ নিজ ধর্মের শিক্ষাও নিয়ে ফেলছে। অনেকে নিজ বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে সহযোগিতা করছে। সুতরাং ফ্যামিলিকে তাদের সন্তানদের নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের তদারকি করতে হবে, নজরদারিতে রাখতে হবে। যাতে করে তারা সঠিক রাস্তা রেখে ভুল পথে না যায়। দেশের সরকারকেও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবতে হবে, বিশেষজ্ঞদের ভাবতে হবে। কীভাবে কী করলে এসব শিক্ষার্থীর সঠিক পরিচালনা হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। এভাবে মাসকে মাস কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকলে হাজারো শিক্ষার্থী ভুল পথে চলে যাবে। ডিপ্রেশনে বা হতাশায় থেকে থেকে তারা নেশা বা আত্মহত্যার পথ বেছে ওনবে।

এদের নিয়ে ভেবে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিগুলো সচেতনতার সঙ্গে খুলে দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীরা এভাবে থাকলে শিক্ষাঙ্গন ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। আর এর প্রভাব আমাদের দেশের ওপর পড়বে। আদর্শ সমাজ গড়তে সঠিক শিক্ষার্থীদের বিকল্প নেই। এখন শিক্ষার্থীরা যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে সমাজ ও দেশ ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার, শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবার। কারণ এর ভয়াবহতা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। কাজেই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনই। -লেখক ও শিক্ষক

-এএ


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ