সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে সারাদেশের সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সে হিসেবে দুই বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকলেও দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত না থাকায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদগণ।
অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, বিষিয়ে উঠেছে তাদের জীবন। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে। কেউ কেউ আবার সর্বনাশা মাদকের দিকেও ঝুঁকেছে।
অন্যদিকে বিশেষ বিবেচনায় বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে কিছুদিনের জন্য খোলা রাখা হয়েছিল দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো। পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সফলতার সাথে শিক্ষাবর্ষ শেষ করেছেন তারা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় মাদ্রাসাগুলোও বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বলবৎ।
এদিকে ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে। বিভিন্ন মহল থেকে কওমী মাদ্রাসাগুলো খোলার দাবিও উঠছে জোরেশোরে। তবে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানাননি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি যেহেতু শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট, তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি একটু বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি বেশ কয়েকজন মাদ্রাসার মুহতামিম ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞের সাথে। তারা মনে করেন, স্বাস্থ্য বিধি মানার শর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া দরকার।
বেফাকের সহ সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু বলেন, বেফাকের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীলরা আলোচনা করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে। আমরা আশাবাদী খুব শিগগিরই ভালো ফলাফল পাবো। তবে, নির্দিষ্ট কোন তারিখ বা সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা কিছুই বলতে পারছি না। আমাদের সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। সুনিশ্চিত তারিখ পেলে জানানো হবে।
আনন্দপুর দারুল উলুমের প্রিন্সিপাল মুফতি আলী আজম মনে বলেন, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দূরে। এটা তাদের মস্তিষ্কের একেবারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিক্ষার্থীদের যখন শিক্ষকদের সান্নিধ্যে দিনের কিছুটা সময় ব্যয় করে, তখন তাদের মনোবিকাশ হয়। তারা ভালো মন্দের তফাৎ বুঝতে পারে। অপকর্ম বা মাদক থেকে দূরে থাকা সহজ হয়।
কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি ও মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের থেকে দূরে। অনলাইন কখনোই বাস্তব জীবনের মত হয় না। যার ফলে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এবং তাদের মানসিক বিকাশ ঘটছে না।
তাহাফফুজে কুরআন বাংলাদেশের ঢাকা জেলার দায়িত্বশীল ও হিফজুল কুরআন ইনষ্টিটিউটের প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা আশরাফ তানভীর বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকার পর ওলামায়কেরামের একান্ত প্রচেষ্টায় প্রায় ৭ মাস পর গতবছর হিফজুল কোরআন বিভাগ খুলে দেওয়া হয়েছিল। হিফজুল কোরআন মাদ্রাসার প্রতি সরকারের বিশেষ বিবেচনা অবশ্যই এক্ষেত্রে প্রশংসার যোগ্য।
তবে সাত মাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের আরো অন্তত তিনমাস সময় লেগেছিল। এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকতায় আসে।
কিন্তু এবছর আবারো যখন করোনার সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করল, তখন সরকার আবারো মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে তিন মাস অতিবাহিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আবারো পিছিয়ে পড়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব, মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়া দরকার। তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমবে। কিন্তু যদি আরো দেরি হয়, তাহলে হয়তো এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবেনা কোনদিন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি থাকবে অনতিবিলম্বে আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিন।
-কেএল