শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন

সাইয়্যেদ কারী উসমান রহ., নিজ কর্মগুণে বেঁচে থাকবেন যিনি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমী
আলেম ও মাদরাসা পরিচালক

একটি বেদনার কথা দিয়ে শুরু করছি। গতকাল শুক্রবার আমাদের ছেড়ে মহান প্রভূর সান্নিধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন আমীরে হিন্দ আল্লামা কারী সাইয়েদ উসমান মানসুরপুরী রহ.। ৭৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

যেভাবে আমাদের ছেড়ে বড়রা পাড়ি জমাচ্ছেন পরপাড়ে। তাতে আমরা এতিমই হয়ে যাচ্ছি। তেমনি গতকাল শুক্রবার ছিলো উপমহাদেশের ইসলামী অঙ্গনের জন্য অত্যন্ত শোকের। পবিত্র এই দিনে এ অঞ্চলের মুসলমানরা হারালো তাদের একজন সংগ্রামী নেতা, দায়িত্বশীল রাহবার ও যোগ্য অভিভাবক। দারুল উলুম দেওবন্দের কার্যনির্বাহী মুহতামিম ও জমিয়তে উলঅমায়ে হিন্দের সভাপতি সাইয়্যেদ কারী উসমান মানসুরপুরী রহ.।

তার আরো একাধিক পরিচয় ছিল; ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা সাইয়েদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.- এর সুযোগ্য শাগরিদ ও জামাতা ছিলেন। একই সঙ্গে অল ইন্ডিয়া মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের প্রধান হিসেবেও দায়িত্বরত পালন করছিলেন।

মহান এই মানুষটির বর্ণাঢ্য জীবনের সঙ্গে আমি অধমেরও কিছু স্মৃতি আছে। দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনার প্রেক্ষিতে হজরতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। সেদিনের দিনগুলো আমার খুব মনে পড়ছে- ‘হুজুর দাওরায়ে হাদীসে আমাদের মুআত্তা ইমাম মালেক পড়াতেন। আদব বিভাগে পড়ার সময়ও হুজুরকে দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখেছি। আদবে দিনের প্রথম ঘন্টা ছিল আসালিবুল ইনশা। রাজনৈতিক ও সামাজিক মানুষ হিসেবে সাধারণত হুজুর সবসময়-ই ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু খুব কম-ই হুজুর সবক নাগাহ দিতেন; ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে খুব যত্নবান ছিলেন তিনি। ছাত্রদের যিন্দেগী ও জীবন উস্তাদের কাছে আমানতস্বরূপ-ক্বারী সাহেব নিজ সত্ত্বায় এই অনুভূতি লালন করতেন। এজন্য আদবেও ছাত্রদের থেকে নিয়মিত সবক শুনতেন। সবক শোনাতে ব্যত্যয় করলে মুশফিকানা শাসন করতেন। নিয়মানুবর্তিতার এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি । কথা কাজ আর আচার ব্যবহারে ছিলেন আদীমুল মিছাল শরীফ ইনসান। ছিলেন অল্পভাষী কিন্তু অত্যন্ত জাগ্রত ও সচেতন। তাকে যতই দেখেছি বিমুগ্ধ হয়েছি।

আগে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের নায়েবে মুহতামিম ছিলেন। এসময় গোটা প্রশাসন তিনিই দেখাশোনা করতেন। নরম ও কোমল স্বভাবের এই শরীফ মানুষটার রো’বে সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা তটস্থ থাকতেন। তার সেই আমলে দারুল উলুম দেওবন্দের হাতছাড়া হওয়া বহু সম্পদের তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করেছিলেন।

ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ও জেলায় জেলায় দারুল উলুম দেওবন্দের কুক্ষিগত হওয়া আওকাফকে দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি ছিলেন جلوت میں خلوت-এর এক বাস্তব নমুনা। মাদানীর জামাতা হিসেবে তার জীবনেও বাজতে দেখা যেত বৈচিত্রের মাঝে ঐক্যের সুর।

২০০৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামের সভাপতির আসন অলংকৃত করেছেন। সভা-সেমিনার, সমাপনী বা উদ্ভোধনীর বক্তব্যে শ্রোতাদের তিনি ইখলাস ও লিল্লাহিয়াতের সবক দিতেন। আমি নিজে তার এরকম একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সরাসরি তা শুনেছি। কারো কারো কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও মূলত এটাই একজন মুমিনের জীবনের আসল প্রসঙ্গ- قل إن صلوتي و نسكي و محياى و مماتي لله رب العالمين

তার তিরোধান শুধু মাদারে ইলমী দারুল উলুম দেওবন্দের তাদরীস ও প্রশাসন অঙ্গনে শুন্যতা তৈরি হয়েছে তা নয়; বরং গোটা পৃথিবী, বিশেষত ভারত উপমহাদেশের মুসলমানরা তার মতো একজন মানুষের অভাব দীর্ঘদিন টের পাবে। আমি তার একজন ক্ষুদ্র শাগরিদ হয়ে সবার কাছে তার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করেন এবং তার দীর্ঘ তাদরীসি, তানজীমি ও মিল্লী খেদমতের উত্তম থেকে উত্তম প্রতিদান দান করেন, আমীন।

লেখক, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক-মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ-ঢাকা ও সিনিয়র মুহাদ্দিস-জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া-ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ