আমিনুর রহমান হাসান: ইসলাম যেভাবে খারাপ সঙ্গী পরিত্যাগ করতে আদেশ করেছে, তেমনিভাবে সৎ সঙ্গী গ্রহণেও ইসলাম উৎসাহিত করেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী হিসেবে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহুকে সিলেক্ট করেছিলেন।
সঙ্গী হিসেবে হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু ছিলেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তাঁরা পরস্পরের বন্ধু ছিলেন। নবী করীম (সাঃ) এর হিজরতের ঘটনা থেকে সেটা স্পষ্ট বুঝা যায়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘যখন তাঁরা গুহার মধ্যে ছিলেন তখন তিনি স্বীয় সঙ্গীকে বললেন বিষন্ন হয়ো না আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’। (সুরা তাওবাহ)।
সাওর পর্বতে যখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবু বকর সিদ্দিক রাঃ ছিলেন, তখন তিনি চিন্তিত ছিলেন।
তখন নবী করীম সাঃ আবু বকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহুকে চিন্তিত না হওয়ার জন্য বললেন।
সুরা তাওবার এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আবু বকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহু ছিলেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী তথা বন্ধু।
বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে নবী করীম সাঃ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন,
মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।’ (সহীহুল মুসলিম)।
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে’। (আল হাদিস)।
সৎ সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কুরআনের ভাষ্য হলো, ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও’। (সুরা তাওবাহ)।
অসৎ বন্ধু পরিত্যাগের ক্ষেত্রে কুরআনের ভাষ্য হলো,হাশরের ময়দানে একদল জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে এনেছে? জবাবে তারা কয়েকটি কারণ বলবে। তারমধ্যে একটি হলো, আমরা এমন লোকদের সাথে চলাফেরা করতাম যারা ছিল অসৎ। (সুরা মুদ্দাসসির)।
পবিত্র কোরআনে আরোও বলা হয়েছে, ‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবেন না।
যারা দুনিয়াতে খারাপ লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা কিয়ামতের দিন আফসোসের সুরে বলবে ‘হায়! আমরা যদি অমুক ব্যাক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম’। (সুরা ফুরকান)।
উপরোল্লিখিত কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, সৎ সঙ্গী যেভাবে আমাদের জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হবে, তেমনিভাবে অসৎ বন্ধু ও আমাদের জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম হবে।
তাই বলে একেবারে বন্ধুহীন থাকা যাবে না। কারণ বন্ধুহীন জীবন নাবিক বিহীন জাহাজের মতো। একজন প্রকৃত বন্ধুই সুখ-দুঃখ, হাসি- কান্নার অংশীদার হয়। প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্মার আত্মীয় হয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে।
মাতাপিতা আত্মীয়স্বজন যতোই আপন হোন, তাঁদের সাথে হৃদয়ের সব কথা শেয়ার করা যায় না। যার সাথে হৃদয়ে জমানো সব কথা অকপটে বলা যায় সেই বন্ধু। ইংরেজি একটা প্রবাদের অর্থ হচ্ছে- ‘বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু’। আরবি একটা প্রবাদের অর্থ হচ্ছে- ‘মূর্খ বন্ধুর চেয়ে জ্ঞানী শত্রু উত্তম’। নিটসে বলেছেন, ‘বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছে রক্ষাকারী ছাঁয়ার মতো। যে তা খুঁজে পেলো, সে একটি গুপ্তধন পেলো’।
কাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে প্রশ্ন করা হলে, ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, সবাইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
যাদের মাঝে নিম্নোক্ত তিনটি গুণ পাওয়া যাবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
গুণগুলো হলো- (১) বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ। (২) বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়। (৩) বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৎ সঙ্গী গ্রহণ ও অসৎ সঙ্গী পরিত্যাগের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাউফীক দান করুন।
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক
-এটি