মোঃ হুসাইন আহমদ
ঈদ মানেই আনন্দ বা খুশি। ঈদ আসে খুশির জোয়ার আর আনন্দের বান নিয়ে। খাওয়া-দাওয়া, নতুন জামা কাপড় আর ঘোরাঘুরি, ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্করা সবাই ঈদের আনন্দকে বরণ করে নেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব থাকে। কারণ ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। তাই যুগ যুগ ধরে এই সংস্কৃতি চলে আসছে। কিন্তু গতবছরের ন্যায় এবারও তাতে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস মহামারি। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য এমন বিবর্ণ ঈদ এসেছে, যা আগে কখনো আসেনি।
করোনাভাইরাস মহামারী'র কারণে গতবছরের ঈদের উচ্ছলতা মানুষের জীবনকে ছুঁয়ে যায় অন্যভাবে। কারণ ঈদ সবার জীবনে খুশি, আনন্দ, উল্লাস হাজারো মানুষের মুখে হাসি এনে দেয়। কিন্তু গতবছরের ঈদও কেটেছে একেবারেই নিস্তেজ, আনন্দ-উল্লাসহীন। আর তাই তো ঈদের কথা মনে হলে, মনে পড়ে যায় নতুন জামা, অনেক কেনা-কাটা ও সাঁঝগোজহীন, সবার আনন্দে উল্লাসে মেতে না উঠার সেই স্মৃতি। আর এবারের ঈদেও সেই অদৃশ্য ভাইরাসের কারণে থমকে দাড়িঁয়েছে সবকিছু। বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। যা থেকে এখনো রেহাই পায়নি বাংলাদেশও। যে ঈদ এলে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব মানুষ মেতে ওঠে উৎসবে। সব বৈষম্য ও ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে সৃষ্টি হয় সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ। ধনী -গরিব নির্বিশেষে সব মানুষ একটি দিনের জন্য হলেও ভুলে যায় সকল হিংসা-বিদ্বেষ। সে ঈদ এখন কেমন কাটে,,,,,!
ঈদ আসলেই মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার ঈদের স্মৃতি। ছেলেবেলার ঈদগুলো সত্যি অন্যরকম ছিল। ঈদের দিনকয়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত ঈদের আনন্দ। ভাই-বোন সবাই মিলে ঈদের চাঁদ দেখতাম। বিশেষ করে এই রমজানের ঈদে ২৯ তারিখ ইফতারের পর সবাই মিলে আকাশে চাঁদ খোঁজতাম। সবাই চেষ্টা করতাম, কে সবার আগে চাঁদ দেখবো। যখন আকাশে ঈদের চাঁদ দেখতে পেতাম, তখন সবাই মিলে যে হৈ-চৈ করতাম। তা স্মরণ করলে আজও অতীতে ফিরে যাই। আজ অনেক বছর হলো এখন আর আকাশে চাঁদ দেখতে হয় না। অনলাইন মিডিয়ার বদৌলতে সব দেখতে পাই। তবে আগের মত ঈদের সেই আনন্দটা আর পাচ্ছি না।
আসলে ঈদের সব আনন্দ হচ্ছে ছোটবেলায়। হাতে মেহেদী দেওয়া,পাজ্ঞাবী পরা, ঈদের সালামির টাকা দিয়ে বন্দুক গুলিসহ আরো কত খেলনা কিনা! খুব ইচ্ছে করে ছোটবেলার সেই মুহূর্তগুলোতে ফিরে যেতে। ঈদের জামা পেয়েই তাড়াতাড়ি এসে আলমারিতে ঈদের জামা লুকিয়ে রাখতাম আর ভাবতাম ইস্ যদি কেউ দেখে ফেলে পুরনো হয়ে যাবে। কাউকে জামা দেখাতে চাইতাম না কিন্তু অন্যদের জামা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম। জুতা পায়ে লাগছে কীনা! তা পরখ করার জন্যে জুতা পরে বিছানায় এক-দুবার হেঁটে দেখতাম। ঈদের নতুন জুতা বালিশের তলে রাখতাম। আর ফজর নামাজ শেষে আব্বু আম্মুকে সালাম করতাম আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে কোলা কুলি করতাম। ছোটবেলার এরকম বহু স্মৃতিগুলো আজো স্পষ্ট মনে পড়তেই কেবল হাসি পাচ্ছে।
ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিলো বন্ধুদের সাথে সারাদিন ঘুরে ঘুরে বড়দের কাছ থেকে সালামি গ্রহণ করা। তখনকার একটা ঈদের আনন্দ অনেক বেশি ছিল। সারাদিন টো টো করে ঘুরা ও আত্মীয়-স্বজন বাড়ীতে ঘুরা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে দিনটিকে আনন্দমধুর করতাম। সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যখন ঘরে ফিরতাম, তখনও বাকি আছে হাসির বাক্স মানে সবাই মিলে আড্ডা দেবার। ঈদ উপলক্ষ্যে পরিবারের সবাই বাড়িতে উপস্থিত থাকতো ফলে বেশ কয়েকদিন মজায় সময় কাটতো।
আহ্ যদি আবার ফিরে পেতাম আগের সবকিছু!!! প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ঈদগাহে গতবারের ঈদের নামাজ হয়নি। এবারও হয়তো হবে না। স্বাস্থ্যগত বিধিনিষেধের কারণে কোলাকুলিও করা যাবে না। এরকম একটি নিরানন্দময় ভার্চুয়াল ঈদ আমাদের আরও দূরে সরিয়ে দিল যেন। করোনাভাইরাস ঈদের উৎসব নির্জীব করে দিয়েছে। মানুষের বিষণ্ন চেহারায় মিলিয়ে গেল উৎসবের আনন্দ। আর শূন্যতায় ঈদের আনন্দ হারিয়ে গেল। এভাবে ঈদের ছন্দপতন ঘটাল করোনাভাইরাস। এমন সাদামাটা ও একঘেয়ে ঈদ আর কখনো পালন করছে কিনা জানা নেই। বৈশ্বিক এই মহামারি লন্ডভন্ড করে দিয়েছে পুরো পৃথিবী। ফলে মুসলমানদের হাজার বছরের গড়া ঈদ সংস্কৃতিও ঐতিহ্যে দেখা দিয়েছে ছন্দপতন।
অতঃপর, যা না বললেই নয়, চলমান এই পরিস্থিতিতে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো খুব বেশি বেশি পড়ুন, "আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম" এই দোয়াটাও পড়ুন। আর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। একবারেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যান। বিপদে একে অন্যর পাশে দূর থেকে হলেও দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের যত্ন করুন। সবাই ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সকলকে এই অন্য রকম ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন। ঈদ মোবারক!!
শিক্ষার্থী, দাওরায়ে হাদিস, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল।