মুফতী জামিল মাসরূর।।
ইতিকাফ আমাদের সমাজে প্রসিদ্ধ একটি পরিভাষা। প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে প্রতিটি মসজিদে ইতিকাফ করা হয়। কিশোর-তরুণ-বৃদ্ধ সববয়সী মুসল্লীগণ ইতিকাফে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
ইতিকাফ কী?
আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে মনে করি, ইতিকাফ মানে হলো, "মহান আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজেকে আল্লাহর ঘরে আবদ্ধ রাখা। ইতিকাফ যেনো অনশনের মতো । দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙ্গবো না। ইতিকাফেও আল্লাহর বিশেষ রহমত, ভালোবাসা, মাগফিরাত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর ঘর মসজিদ থেকে বের হবো না।" ইতিকাফের মর্ম উদ্ধারে আমার কাছে এই ভাবটিই ফোটে উঠে।
এদিকে আল্লাহর ঘরে লাগাতার দশ দিন সময় ব্যয় করলে দিলের বিরাট খোরাক তৈরি করে। আল্লাহর সাথে ভালোবাসা, অন্তরঙ্গ প্রেম তৈরী হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিকাফের ভূমিকা অনেক বেশি। ইতিকাফ জাহান্নাম থেকে বাঁচার অন্যতম একটি আমল।
এ সম্পর্কে আল্লাহর হাবীব সা. বলেন :
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من مشى في حاجة أخيه؛ كان خيرا له من اعتكاف عشر سنين، ومن اعتكف يوما ابتغاء وجه الله عز وجل؛ جعل الله بينه وبين النار ثلاث خنادق، كل خندق أبعد مما بين الخافقين. (بيهقي، طبراني، حاكم، مجمع الزوائد ٨/١٩٢)
অর্থ: যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের যে কোনো প্রয়োজন পূর্ণ করে দিবে, আল্লাহ তাকে দশ বছর নফল ইতিকাফের সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করবে; আল্লাহ পাক তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক সমপরিমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। আর এক খন্দকের দূরত্বের পরিমাণ হলো আসমান-জমীনের দূরত্ব সমপরিমাণ। (বায়হাকী, তাবরানী)
মূলকথা তো এটাই যে, জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে। অর্থাৎ জাহান্নামে যাবে না।
একদিন ইতিকাফের যদি এতো লাভ হয়; তাহলে দশ দিন ইতিকাফের লাভ ও ফযীলত কতো বেশি হবে তা অনুমান করুন। আর রমযানে তো প্রতিটি আমলের সওয়াব ৭০ গুণ বেশি। তাও আবার শেষ দশ দিন । এ সৌভাগ্য অর্জনে সবার এগিয়ে আসা দরকার।
ইতিকাফ করলে দুটি হজ ও দুটি উমরার সওয়াব পাওয়া যায়:
من اعتكف عشرا في رمضان كان كحجتين وعمرتين
(الترغيب والترهيب: ٢/٩٦)
অর্থ: "রমযানে দশদিন ইতিকাফ করলে দুটি হজ ও উমরার সওয়াব হবে”। (তারগীব-তারহীব ২/৯৬)
আমাদের সবাই তো হজ ও উমরা করার এ সৌভাগ্য অর্জন হয় না। সামর্থবান অল্প মানুষই এ সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাই
হজ-উমরার সুযোগ না থাকলেও তার সওয়াব থেকে মাহরুম না হওয়ার অন্যতম পদ্ধতি হলো ইতিকাফ করা।
মহান আল্লাহ কতো দয়াবান! সামান্য দশ দিন মসজিদে থাকলেই এতো সওয়াব ও বিনিময় দিচ্ছেন। এতো ভালোবাসা দিচ্ছেন।
এটাকে হাতছাড়া করা যায় না। এই সুযোগ আমার জীবনে আর নাও আসতে পারে। তাই এতেকাফে বসার চেষ্টা করি। অন্যকেও উৎসাহ দেওয়ার প্রয়াস রাখি।
ইতিকাফ করলে প্রচুর নেক আমলের সওয়াব:
ইতিকাফে থাকাকালে জানাযায় শরীক হওয়া যায় না; কিন্তু তার পূর্ণ সওয়াব ইতিকাফকারী এমনিতেই পেয়ে যায়। ইতিকাফের কারণে রোগী দেখা, মসজিদের বাইরে গিয়ে মানবসেবা করা, নানাবিধ ধর্মীয় কাজসহ অনেক বড় বড় আমলে শরীক না থাকলেও এই আমলগুলোর পূর্ণ সওয়াব ইতিকাফকারী অর্জন করবে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে:
إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال في المعتكف هو يعتكف الذنوب ويجزى له من الحسنات كعامل الحسنات كلها. (مشكاة: ١/١٨٣)
অর্থ: ইতিকাফকারী সমস্ত গোনাহ থেকে নিরাপদ থাকে। নেক আমলকালীর ন্যায় সমস্ত নেক আমলের সওয়াব লাভ করে।
(মিশকাত ১/১৮৩)
ইতিকাফে বসার বড় আরেকটি উপকার হলো, নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ রাখার কারণে বাইরের সমস্ত গোনাহ থেকে নিরাপদ রাখা যায় । গীবত, চোগলখুরী, সমালোচনা, মানুষকে কষ্ট দেওয়া, চোখের গোনাহসহ যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত থাকা যায় মসজিদের নূরানী পরিবেশের উসিলায়।
মসজিদ হেদায়াতের জায়গা। তাই অনায়াসেই মন নরম থাকে। আমল করার জন্য মন প্রস্তুত থাকে।
তাই আসুন, রমযানের শেষ দশকে মসজিদের নূরানী পরিবেশে নিজের জীবনের মাত্র দশটি দিন কাটাই। জীবনের পরম পবিত্র দশটা দিন আখিরাতের জন্য জমা রাখি।
وفقنا الله سبحانه وتعالى
লেখক: প্রধান আদীব, শামীমাবাদ মাদরাসা, সিলেট।
এনটি