মূল : মুফতি মুহাম্মাদ তাকি উসমানী
ভাষান্তর : মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম
দান ছদকার আধিক্যও মানুষের আমলনামায় নেকির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ছদকা গুনাহের ক্ষমা এবং দোযখের আযাব থেকে বাঁচার এক কার্যকরী মাধ্যম। কুরআনুল কারিম ও হাদিসের মধ্যে ছদকা এবং কল্যাণকর কাজে সম্পদ খরচ করার অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। যা একত্রে জমা করা হলে একটি স্বতন্ত্র কিতাব রচিত হবে। শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া কান্ধলভী রহ. ‘‘ফাযায়েলে ছাদাকাত’’ নামে এ বিষয়ের উপর যে কিতাব রচনা করেছেন তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব। এজন্য এখানে কুরআন হাদিসে বর্ণিত ফযিলতগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। কেউ চাইলে ঐ কিতাবটি অধ্যয়ন করতে পারেন।
কিন্তু এখানে যেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, তা হলো, দান ছদকার ফযিলত হাসিল করার জন্য এটা জরুরি নয় যে, অনেক বেশি টাকা পয়সা খরচ করতে হবে। বরং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান ছদকা করে এ ফযিলত অর্জন করতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির নিকট একটি মাত্র টাকা থাকে, আর সে সেখান থেকে একটি পয়সা দান করে, তাহলে আল্লাহর দরবারে এক লাখ টাকার মালিক এক হাজার টাকা দান করার মত ছাওয়াব সে লাভ করবে। আল্লাহর দরবারে মৌলিকভাবে ইখলাসই গ্রহণযোগ্য। ইখলাসের সাথে সামান্য থেকে সামান্য পরিমাণ ছদকাও আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য। আর এভাবেই দান ছদকার সমস্ত ফযিলত অর্জিত হতে পারে।
এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.
(صحيح البخاري، رقم الحديث : 1417 ، و مسلم، رقم الحديث : 1016)
একটি খেজুরের অর্ধেক দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। (সহিহ বুখারি : ১৪১৭, সহিহ মুসলিম : ১০১৬)
অর্থাৎ কারো নিকট যদি ছদকা করার মত কোন জিনিস না থাকে এবং সে এই অর্ধেক খেজুর কোন অসহায় ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়, তাহলে এর দ্বারাও ছাওয়াব অর্জিত হবে। এতটুকুও গুনাহ মাফের মাধ্যম হতে পারে।
অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের সম্পদের যাকাত দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যায়। যাকাতের বাইরে একটি পয়সাও খরচ করতে প্রস্তুত নয়। বরং সমস্ত কল্যাণ যাকাতের খাত থেকেই হাসিল করতে চায়। এমন করা উচিত নয়। যাকাত একটি ফরজ দায়িত্ব। আর এ ফরজ বিধানের খাত নির্দিষ্ট। কল্যাণমূলক এমন অনেক কাজ আছে যেখানে যাকাত দেওয়া যায় না। যেমন মসজিদে চাঁদা দেওয়া। এজন্য যাকাতের বাইরে কিছু সম্পদ এজাতীয় কল্যাণমূলক নেক খাতে ব্যয় করা উচিত। এ উদ্দেশ্যে বুযুর্গানে দীনের কর্মপন্থা এমন ছিল যে, তারা উপার্জনের শতকরা কিছু অংশ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতেন। যখনই কোন আয়-ইনকাম হতো ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি থলি বা ফাইলের মধ্যে রেখে দিতেন। হযরত হাকিমুল উম্মত মাওলানা থানভী রহ. নিজ উপার্জনের এক পঞ্চমাংশ (শতকরা ২০%) এমন কাজের জন্য পৃথক করে রাখতেন। অন্যান্য অনেক বুযুর্গ বিশ ভাগের এক ভাগ অথবা দশ ভাগের এক ভাগ পৃথক করে রাখতেন। এর উপকারিতা এই হতো যে, যখনই কোন দানের ক্ষেত্র সামনে আসত তখন এর জন্য চিন্তা করতে হতো না। বরং ঐ বিশেষ থলি স্মরণ করিয়ে দিত যে, আমার জন্য ভাল কোন দানের ক্ষেত্র অনুসন্ধান করো। আর সময় মত দান করার জন্য টাকার কোন চিন্তা করতে হতো না। সহজেই কল্যাণমূলক খাতে খরচ করার তাওফিক হতো।
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ সম্পদের অবস্থা অনুযায়ী যদি বিশেষ একটি অংশ এ কাজের জন্য পৃথক করে রাখে, তাহলে ছাওয়াব ও নেকি অর্জনের ধারাবাহিক স্বতন্ত্র একটি পন্থা তৈরি হয়। প্রত্যেক ব্যক্তিই পাঁচভাগের একভাগ বা দশভাগের একভাগ নির্ধারণ করবে এটা জরুরি নয়। নিজ নিজ সম্পদের প্রয়োজন মোতাবেক যতটুকুই হোক, একটি অংশ নির্ধারণ করতে পারলে তাতেই ইনশা-আল্লাহ কল্যাণই কল্যাণ।
দান খয়রাতের মধ্যে মৌলিক নিয়ত হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি। কিন্তু যারা দান ছদকা সর্বদা করে থাকে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়াতেও অনেক কিছু দান করেন। হাদিসে আছে ছদকা করার দ্বারা সম্পদ কমে না। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা এমন লোকদের রিযিকের মধ্যেও বরকত দান করেন। (সূত্র : আসান নেকিয়াঁ)
-কেএল