।।মাওলানা মো. আব্দুল মান্নান।।
রমজানের রহমতের ১০ দিন চলে গেছে। এখন মাগফিরাতের সময় চলছে। এরপরই শুরু হবে নাজাতের দশক বা রমজানের শেষ দশক। ওই দশকেই ই’তিকাফ করতে হয়। কাজেই সময় আর বেশি নেই। যারা ই’তিকাফ করতে আগ্রহী তাদেরকে ২০ রমজানের ফজর থেকেই মসজিদে অবস্থান নিতে হবে। শাওয়াল বা ঈদের চাঁদ দেখা গেলে ই’তিকাফ শেষ হবে। এজন্যে মসজিদে থাকতে যা যা প্রয়োজন আগেভাগেই এর ব্যবস্থা করতে হবে।
ইফতার ও সাহরী কে পৌঁছাবে, বাজার করবে কে? ঈদের বাজার, ফিতরা আদায়ের ব্যবস্থা, ছেলেমেয়ের আবদার রক্ষা, কেউ কোন টাকা পয়সা পেয়ে থাকলে উহা পরিশোধের চেষ্টা করা ও আত্মীয় স্বজনকে ঈদের অগ্রিম দাওয়াত দেওয়াসহ রয়েছে নানা প্রস্তুতি। এগুলো এখনই সারতে হবে। আগেভাগে এসব কাজ সেরে আগ্রহীরা ই’তিকাফের জন্য প্রস্তুতি নিন।
রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে ই’তিকাফে রয়েছে অনেক ফজিলত। এই রমজানে না, ই’তিকাফ করব হেই রমজানে, হেই রমজানে না তারপরের রমজানে করব। এভাবে আর কত পিছাবেন? করোনার ভয়ে তো ঠিকই ১৪ দিন কিংবা তার চেয়েও বেশি দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রইলেন। এতে কি ই’তিকাফের সাওয়াব পাওয়া যাবে? পাওয়া যাবে না। তারপরও ক্ষণিকের জীবনের নিরাপত্তার লক্ষ্যে মাসকে মাস নিজেকে ঘরে বন্দি রেখে চলেছেন। এখন আসুন দুনিয়া ও পরকালের জীবনের সুখ শান্তির আশায় অল্প ১০দিন ই’তিকাফ করি।
মিশকাত ও ইবনে মাজাহ শরীফে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ই’তিকাফকারী যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে। আর মসজিদে থাকার কারণে মু’তাকিফের যেসব নেকির কাজ ছুটে যাবে, যা সে ই’তিকাফে না বসলে করতো ওইসব ভাল কাজের নেকিও আল্লাহ তা’য়ালা তাকে দান করবেন। তাবরানী ও বায়হাকী শরীফে আছে, আল্লাহর সন্তোষ্টির জন্য যে ব্যক্তি একদিন ই’তিকাফ করবে আল্লাহ পাক তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন। এই হিসেবে ১০ দিনে মুমিন বান্দাহ থেকে জাহান্নামের ৩০ খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি হবে।
প্রত্যেক খন্দকের পরিমাণ হলো আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও বেশি। এক জায়গায় আছে, আসমান ও জমিনের দূরত্ব ৫ শত বৎসরের রাস্তা। মা’আরিফ ও কাশফুল গুম্মাহ কিতাবে আছে, হুজুর (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন ই’তিকাফ করবে সে দুটি হজ্ব ও দুটি উমরাহের সাওয়াব লাভ করবে। ই’তিকাফ আসলে তিন প্রকার। ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল। কেহ যদি মান্নত করে যে, আমার অমুক কাজটি হলে আমি এতদিন ই’তিকাফ করব।
তবে সেটা ওয়াজিব ই’তিকাফ। আর আমরা রমজানের শেষ দশকে যে ই’তিকাফ করছি এটা সুন্নাত। নবী কারীম (সা.) রমজানের এই দিনগুলিতে ই’তিকাফ করতেন। আর নফল ই’তিকাফের কোন সময় নির্দিষ্ট নেই। যার যতটুকু মন চায়, যখন মন চায় তখন ততটুকু সময় সে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে ই’তিকাফ করতে পারবেন। আর মহিলারা তাদের ঘরে নিরিবিলি কোন কুঠুরী বা পৃথক কক্ষে ই’তিকাফ করবেন। নফল ই’তিকাফের কোন সময় নির্ধারিত নেই। ই’তিকাফের আগে আল্লাহর কাছে মনে মনে কিছু দাবি-দাওয়া স্থির করে নিলে ভাল হয়। যেগুলো আমরা মসজিদে অবস্থান নিয়ে আল্লাহর নিকট চাইব। নীরবে নিভৃতে কান্নাকাটি করে ওইসব দাবি পেশ করব। দাবি আদায়ে আল্লাহর নিকট জোরালো দরখাস্ত করব।
দুনিয়াতে যেমন বিশেষ দাবিতে মানুষ রাস্তায় অবস্থান নেয় বা কারো ঘরের দরজায় লুটিয়ে পড়ে থাকে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওই জায়গা ছাড়বে না ভাব ধরে। ই’তিকাফটাও এমনই একটা বিষয়। ই’তিকাফ মানে দুনিয়ার যাবতীয় সংস্রব ছিন্ন করে মাওলার নিকট বিশেষ দাবিতে মাওলার ঘরে বা মসজিদে আছড়ায়ে পড়া বা অবস্থান নেওয়া। এমনভাবে আবেদন করা যে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে সরবো না। আর দাবির আগে কিছু আমলও করতে হবে।
ই’তিকাফে বসে সৎ ও ভাল কথাবার্তা বলতে হবে। কুরআন তিলাওয়াত, যিকির আযকার, তাহাজ্জুদ ও বিভিন্ন নফল নামাজ, দরুদ শরীফ ও ধর্মীয় কিতাবাদি পাঠ করতে হবে। বিশেষ করে হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও বেশি সাওয়াবের রাত্রি শবে কদর লাভের আশায় ২১ রমজান থেকে ২৯ রমজান পর্যন্ত বেজোড় রাত্রিগুলো ও ঈদের রাত্রিতে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। তাহলে ইনশা-আল্লাহ কামিয়াব হওয়া সম্ভব। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী ই’তিকাফ করার ও ই’তিকাফের প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফীক দান করুন।
-কেএল