আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জেরুসালেমে ভোট গ্রহণের অনিশ্চয়তায় আগামী মে ও জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচন ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন স্থগিত করেছেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। শুক্রবার নির্বাচন স্থগিতের এই ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ ও সাধারণ মানুষ।
মাহমুদ আব্বাস শুক্রবার এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের ভোট গ্রহণের অনুমোদন পাওয়া না গেলে তিনি নির্বাচন এগিয়ে নিতে পারেন না।
তিনি বলেন, ‘জেরুসালেমে নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া না পর্যন্ত আমরা তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জেরুসালেমে ভোটের অনিশ্চয়তায় ফিলিস্তিনি নির্বাচন স্থগিত করলেন আব্বাস
নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীর ও গাজায় ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভের আয়োজন করেন। তারা জানান, ১৫ বছরের দীর্ঘ ব্যবধানের পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচন যথা সময়েই অনুষ্ঠিত হতে হবে।
হেবরনের বাসিন্দা ওয়ায়েল দেইস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'তরুণ ফিলিস্তিনি নাগরিক হিসেবে আমি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানাচ্ছি এবং আমি আমার নির্বাচন করার অধিকার চাচ্ছি যাতে নতুন মুখ, তরুণ মুখ ও নতুন রাজনৈতিক অবস্থান আমরা দেখতে পারি।'
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার কাছে অপর এক ফিলিস্তিনি ভোটার বলেন, যদি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আসলেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়, তবে কোনো না কোনো উপায় তারা খোঁজ করে নিতো।
এদিকে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিন্দা জানিয়েছে।
হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, 'আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি যেটি জাতীয় ঐক্যমত লঙ্ঘন করেছে। ফাতাহ এই পরিস্থিতির ধারাবাহিকতার জন্য দায়ী।'
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দফতরের এক মুখপাত্র এক সপ্তাহ আগে জানিয়েছিলেন, জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের নির্বাচনে ভোটের আয়োজনে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবে না। বৃহস্পতিবারও একই সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
এর আগে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ফিলিস্তিনের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ফাতাহ ও হামাসসহ অন্য রাজনৈতিক পক্ষগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে নতুন এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ১৫ বছর পর অনুষ্ঠানের ঘোষণা হওয়া এই নির্বাচনে নতুন করে হাজার হাজার ভোটারকে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য ৩৬ রাজনৈতিক দলকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
গাজার রাজনৈতিক বিশ্লেষক তালাল ওকাল বলেন, 'এই বিলম্ব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রচণ্ড হতাশা তৈরি করবে, যারা আশা করেছিলেন সকল প্রকার বিভেদ শেষ করে পরিবর্তনের সময় এখন এসেছে।'
আলজাজিরার সাথে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হাসান আইয়ুব ইসরাইলি অজুহাতে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিকল্প পথও ছিল। কিন্তু নিজের অনিচ্ছার কারণে ইসরাইলকে আব্বাস এই বিষয়ে কোনো চাপ দেননি।
এর আগে ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জেরুসালেমে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা ডাকবিভাগের মাধ্যমে ভোট দিয়েছিলেন। তবে এই বছর ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এই ধরনের কোনো অনুমোদন দিচ্ছে না।
নির্বাচন বাতিলের জন্য ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ওপর ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ চাপ দিয়ে আসছিল বলে এর আগে খবর প্রকাশিত হয়।
সর্বশেষ ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিস্ময়কর বিজয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ফাতাহ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করে। দুই দলের মতবিরোধ থেকে ওই সময় প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক কর্মীদের বের করে দিয়ে ফাতাহ পশ্চিম তীর ও হামাস গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
সূত্র: আলজাজিরা
এনটি