মুফতী রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী
রমজান মাসে আমরা যারা তারাবির নামাজ অতি তাড়াতাড়ি করে আদায়ে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছি তাদেরকে বিষয়টা ভালোভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন।
অতি দ্রুত তারাবির নামাজ শেষ করার প্রতিযোগিতার কারণে সওয়াব অর্জনের প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। হচ্ছে না রমজানের শ্রেষ্ঠ ফজিলত অর্জনের প্রতিযোগিতা । অনেকক্ষেত্রে নামায ভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত
عن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من قام رمضان ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه
সাহাবী আবু হুরায়রা র. বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ স.বলেন, যে ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমজানে দাঁড়াবে আল্লাহ তাআলা তার অতিবাহিত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।
রমজান মাসে দাঁড়ানোর আমলটি আমরা তারাবির নামাজের মাধ্যমেই আদায় করে থাকি। অথচ ওই তারাবির নামাজে দাঁড়ানোর সময়টা কত দ্রুত শেষ করা যায় সেই প্রতিযোগিতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অথচ এখানে মূল আমলটি ছিল দাঁড়ানো । অতএব যত বেশি সময় দাঁড়ানো যায় সেটাই বেশি বরকত এবং সওয়াব লাভের জন্য সহায়ক ছিল । আর সে কাজটিই আমরা অনেক দ্রুত শেষ করার প্রতিযোগিতায় থাকি।
বস্তুত অতি দ্রুত এবং তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করার কারণে আমাদের রমজান মাসের ক্বিয়াম পালন এবং দাঁড়ানোর আমলটি পরিপূর্ণভাবে আদায় হয় না।
এ পরিসরে অনেক ক্ষেত্রে অতি দ্রুত কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। যার ফলে কোরআনে কারিমের হক আদায় হয় না। ভুল ত্রুটিরও সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নামাজ ভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হয়।
সাহাবায়ে কেরামের তারাবির নামাজের অবস্থা কেমন ছিল!
كانوا يقومون علي عهد عمر بن الخطاب في شهر رمضان بعشرين ركعة، وكانوا يقرؤون بالمئين ،و كانوا يتوكؤون على عصيهم في عهد عثمان بن عفان من شدة القيام
তারা ওমর ইবনে খাত্তাব র. এর যুগে রমজান মাসে ২০ রাক আত পড়তেন। তারা নামাজে শতাধিক আয়াত পড়তেন এবং ওসমান র. এর যুগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তারা লাঠিতে ভর করে থাকতেন ।
আস সুনানুল কুবরা বায়হাকি।( ৪৬১৭) সহীহ।
রমজান মাসে মহানবী স.এর নামাজ, এবাদত অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক গুরুত্ব পেত । রমজান ছাড়াও মহানবী স.অত্যন্ত ধীর স্থিরভাবে নামাজ আদায় করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে,
عن عائشه ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يقوم من الليل حتى تتفطر قدماه قل
আয়েশা রা. বলেন, নবীজি সা. রাতে এত দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতেন যে এতে তার পা দুটি ফুলে যেত । তখন আমি বললাম আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ তো আপনার সামনের এবং পিছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন ?
উত্তরে তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞ গোলাম হওয়া পছন্দ করব না?
এই ছিল সাহাবায়ে কেরাম এবং নবীজির স. নামাজের আংশিক বিবরণ। আমারা যারা সাহাবায়ে কেরাম এবং রাসূলের অনুসৃত আদর্শ অনুসরণ করতে আগ্রহী তারা এ হাদীস দুটি থেকে শিক্ষা নিতে পারি । আল্লাহ আমাদের সহায় হোন! তাওফীক দিন! কবুল করুন! আমীন!
লেখক, গবেষক, কলামিষ্ট ও মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ।
-এটি