মাসউদুল কাদির।।
সিয়াম সাধনার আজ এগারতম দিন। মাগফেরাতের প্রথম দিবস। অতিক্রম করেছি রহমতের প্রথম দশক। রহমতের প্রথম দশকের শেষ দিনে ইন্তেকাল করেন নবীজীর সবচেয়ে বেশি সেবা-সহযোগিতাকারী ইসলামের প্রথম নারী মুসলমান হযরত খাদিজা রা.। তিনি তাঁর সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিলেন ইসলামের তরে। ইসলামের প্রচারে প্রসারে তার ধন সম্পদ অকাতরে দান করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে পঁচিশ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি। নবুয়তের দশ বছরের দশই রমজান ৬৫ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তাঁর মরদেহ কবরে নামান। তাঁর মৃত্যুর সময় জানাযার নামাজের বিধান ছিল না, তাই তাঁকে জানাযা ছাড়াই মক্কার জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয়।
হযরত খাদিজা অনন্য সাধক এক মহিয়সী নারী ছিলেন। তিনি আমুল ফিল বা হস্তি বর্ষের পনের বছর আগে ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র মক্কা নগরিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মক্কার উচ্চ শিক্ষিত ও বিখ্যাত ব্যবসায়ী খুয়াইলিদের দ্বিতীয় সন্তান। মাতার নাম ফাতিমা বিনতে যায়িদ। তাঁর কুনিয়াত ছিল ‘উম্মুল হিন্দ’ এবং উপাধি ছিল ‘তাহিরা’।
হযরত খাদিজার আরও দুই ও তিন বোন থাকলেও বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি। উত্তরাধিকার সূত্রইে খাদিজা ছিলেন একজন বিত্তবান, প্রভাবশালী ও বিদুষী নারী। ছিলেন খুব সুন্দরীও। তিনি ছিলেন প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও বুদ্ধিমতী। নিজের ব্যবসার প্রতিনিধি হিসেবে হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বানিয়ে তিনি চমকিত হন। তাকে জানার জন্য তার বিশ্বস্ত দাস মায়সারাকে বিশ্বনবির সঙ্গ পাঠান। নবীজীর বিশ^স্ততা, আমানতদারী, ব্যবসায়িক কৌশল, আচরণ এবং অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি মুনাফা লাভের গল্প শোনে অভিভূত হন খাদিজা। শেষে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণে মুগ্ধে হয়ে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান।
হজরত খাদিজার বয়স যখন ৪০ বছর। বিশ্বনবির বয়স তখন ২৫ বছর। আল্লাহ তাআলা জাহেলি যুগের তাহিরার সঙ্গে ঐ যুগেরই সাদিক বা আলআমিনের সঙ্গে বিবাহের ব্যবস্থা করবেন। বিয়ের উভয় পক্ষের খরচও হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা বহন করেন। এবং তাঁদের উভয়ের পোশাকের জন্য দুই উকিয়া স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ব্যয় করেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঔরসেই তাঁর দুই ছেলে চার মেয়েসহ ছয় সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম সন্তান কাসিম অল্প বয়সে মক্কাতেই ইন্তেকাল করেন। তৃতীয় সন্তান আবদুল্লাহ বিশ্বনবির নবুয়ত প্রাপ্তি পর জন্ম লাভ করেন এবং অল্প বয়সেই ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় সন্তান হজরত যয়নব, চতুর্থ সন্তান রুকাইয়া, পঞ্চম সন্তান উম্মু কুলসুম এবং ৬ষ্ঠ সন্তান হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা।
হজরত খাদিজার ইসলাম গ্রহণ তার পিতৃকূলের ওপর বিশাল প্রভাব পড়ে। ইসলামের আর্বিভাবের সময় তাঁর বংশের ১৫ জন বিখ্যাত ব্যক্তি জীবিত ছিল। যাদের ১০ জনই ইসলাম গ্রহণ করে।
হযরত খাদিজা মহানবীর জীবনে একজন সাধক মহিয়সী জগৎ কাঁপানো নারী হিসেবে সমধিক পরিচিত। নবীজীর জীবন ও ইসলামের প্রচারের প্রতিটি পরতে পরতে হযরত খাদিজার অবদান ছিল। তিনি তার ত্যাগের মতো সবকিছুই নবীজীর জন্য ত্যাগ করেছেন। আল্লাহ তাআলা তার জান্নাতকে নূর দিয়ে ভরপুর করে দিন। আমীন।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, দৈনিক আমার বার্তা ও প্রেসিডেন্ট, শীলন বাংলাদেশ (শিক্ষা, সাহিত্য ও সামাজিক আন্দোলন)।
-এটি