মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সৌদির সেবা কোম্পানির সঙ্গে হজ এজেন্সির চুক্তির নির্দেশনা মহেশখালী থানার বিশেষ অভিযানে পরোয়ানাভুক্ত ১১ জন আসামি গ্রেফতার বৃষ্টির সময় কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় ওমরা পালনকারীদের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন মাওলানা আতহার আলীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারে না: ধর্ম উপদেষ্টা জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারে উৎসবমুখর পরিবেশে রোপা আমন ধান কাটা শুরু চাঁদপুর হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহর সাফল্য বগুড়ায় আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত

খাদ্য জাতীয় জিনিস অথবা এর মূল্য উভয় পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা বৈধ আছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী রফীকুল ইসলাম আল-মাদানী

সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা বিষয়ে রাসূলুল্লাহ স. থেকে বর্ণিত হাদীসের সারমর্ম হলো- যব, কিসমিস, খেজুর ও পনির ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম এবং আটা, গম ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আদায় করা তিনি ধার্য করেছেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিম

এই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী কিছু লোক বলে থাকে হাদীসের মধ্যে যে সমস্ত দ্রব্য উল্লেখ করা হয়েছে তা-ই ফিতরা হিসেবে আদায় করতে হবে। এর মূল্য বা টাকা পয়সা ফিতরা হিসেবে আদায় করা যাবে না।

অথচ রাসূলুল্লাহ স. সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের মতানুসারে হাদীসে উল্লেখিত জিনিস দ্বারা যেভাবে ফিতরা আদায় করা যাবে এগুলোর সমমূল্য আদায় করা হলেও ফিতরা আদায় হবে। বরং মানুষের জন্য সহজ এবং তাদের প্রয়োজন সমাধানের জন্য অনেক ক্ষেত্রে মূল্য প্রদান করা আরো শ্রেষ্ঠতম বলে বিবেচিত।

তা ইমাম বুখারী, উমর ইবনে আব্দুল আজিজ, হাসান বসরী এবং আরবের প্রখ্যাত গবেষক ইবনে তাইমিয়া ও ইউসুফ আল কারযায়ীর মতামত। ফাতহুল বারী ৩/৩৯৮ মাজমুউল ফাতাওয়া২৫/৭৯ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮৩ -৪-৩৭ বাদাইউস সানায়ী ২/৭২

যারা বলে মূল্য আদায় করা যাবে না তাদের সুস্পষ্ট কোনো দলীল নেই। তাদের কথা হলো ‌হাদীসের মধ্যে এ সমস্ত জিনিস উল্লেখ করা হয়েছে এজন্যই এই জিনিসগুলো আদায় করতে হবে।

কিন্তু হাদীসে এই জিনিস গুলোর মূল্য আদায় করা যাবে না তাও কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া আরো সুস্পষ্ট কয়েকটি দলীলের ভিত্তিতে বিজ্ঞ গবেষকগণের মতামত হলো: হাদীসে উল্লেখিত জিনিস এবং এগুলোর সমমূল্য উভয় পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করা যাবে।

১ .ইমাম বুখারী একটি অধ্যায়ের নাম করন করেছেন باب العرض في الزكاة যাকাত হিসেবে কোনো জিনিস আদায় করা সম্পর্কিত অধ্যায়।

সেখানে তিনি একটি হাদীস বর্ণনা করেন, মায়াজ র. ইয়েমেন বাসীদের বলেন, যব ভুট্টার পরিবর্তে আমার নিকট ছোট পরিহিত কাপড় প্রদান করো। (বুখারী হা. ১৪৬৮) ইবনে হাজার বলেন তালীক সহীহ। ফাতহুল বারী ৩/৩৯৮

২. মহানবী স. থেকে বর্ণিত একটি হাদীস, তিনি মহিলাদের বলেন تصدقن ولو من حليكن তোমরা সাদকা (যাকাত ফিতরা) আদায় করো যদিও তোমাদের অলংকার হয়। সহীহ বুখারী হা. ৯৭৭ এখানে তিনি খাদ্যদ্রব্য ব্যতীত অন্য জিনিস দ্বারা যাকাত ফিতরা আদায় করার অনুমতি দিয়েছেন।

৪. সহীহ বুখারি আনাস র. থেকে বর্ণিত বিস্তারিত হাদীসের সারমর্ম , যাকাতের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়সের পশু আদায় করা সম্ভব না হলে যদি ছোট পশু আদায় করে সাথে ২০ দিরহাম অথবা সমমূল্যের দুটি ছাগল আদায় করবে। বড় পশু আদায় করা হলে যাকাত উসলকারি ২০ দিরহাম বা সমমূল্যের দুটি ছাগল ফেরত দিবে। সহীহ বুখারি ২/৮২ বাইতুল আফকার। এতেও মূল্য নির্ধারণ করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

৫. সাহাবাগণ র. থেকে বর্ণিত বেশ কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায় দ্রব্যের পরিবর্তে মূল্য হিসেবে ফিতরা আদায় করা যাবে। ইমাম ইবনে আবী শাইবা তার প্রসিদ্ধ কিতাবে এ বিষয়ে একটি শিরোনাম করেন।
باب اخراج الدراهم في زكاة الفطر

এতে তিনি উল্লেখ করেছেন

ক. উমর ইবনে আবদুল আজিজ প্রখ্যাত তাবেয়ি আদীর নিকট লিখেন সদকায়ে ফিতর অর্ধ দিরহাম গ্রহণ করো। ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০৭ হা.১০৪ ৬৯

খ. তাবেয়ি ক্বুররা বলেন, আমাদের কাছে উমর ইবনে আবদুল আজীজের নির্দেশ আসে অর্ধ ছা, অথবা এর মূল্য হিসাবে ফিতরা গ্রহণ করার জন্য ।প্রাগুক্ত।

গ. প্রসিদ্ধ তাবেয়ি আবু ইসহাক বলেন, আমরা সাহাবাগণ র. কে খাদ্য জাতীয় দ্রব্যের মূল্য দ্বারা ফিতরা‌ আদায় করতে পেয়েছি। প্রাগুক্ত।

সাহাবাগণ র. খেজুর ও যবের পরিবর্তে এসবের সমমূল্যের গম দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। মায়াবিয়া রা. এমন করতেন বিশেষভাবে উল্লেখ আছে।
(সহীহ বুখারি হাদীস ১৫০৮)

ফিতরার সমতুল্য আরেকটি বিষয় হলো যাকাত। কোনো ধরনের মতভেদ ছাড়াই নগদ টাকা দিয়ে যে কোন দ্রব্যের যাকাত আদায় করা যায়। অতএব ফিতরাও এভাবেই নগদ টাকা দিয়ে আদায় করা যাবে।

সাহাবাগণ র. থেকে এ মর্মে ১২ টিরও বেশি সহীহ হাদীস রয়েছে। মুরসাল মাওকুফ হাদীস তো অসংখ্য ।বিস্তারিত জানার জন্য পড়েন
تحقيق الآمال في اخراج صدقة الفطر بالمال

লেখক: গবেষক, কলামিষ্ট ও মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ