হাফেজ মুফতি আহসান শরিফ।।
মানুষ স্বপ্নপ্রিয়। স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। স্বপ্ন মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। স্বপ্ন মানুষকে ঘুমোতে দেয় না। স্বপ্ন মানুষকে অবিরত পরিশ্রম করতে সাহায্য করে। সাধনায় উচ্ছ্বাস যোগায়। কিন্তু একজন আদর্শ মানুষের স্বপ্ন কী হবে বা কী হওয়া উচিৎ, পবিত্র কোরআন এবং রাসূলের হাদিস মানুষকে তা শিখিয়েছে। একজন মানুষের চরম লক্ষ হবে তার স্রষ্টা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ।
মানুষ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছুলেই বলা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভ হয়েছে। এ জন্য একমাত্র উপায় সংযম সাধনা ও আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এতে শারীরিক কিছু ক্ষতি হতে পারে।
যে ক্ষয় বা ক্ষতি মানুষকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌছুতে অগ্রসর করবে। যে কারণে আল্লাহর প্রেম অর্জিত এবং বর্ধিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন। [সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৯]
সিয়াম মানে সংযম। সিয়াম মানে সাধনা। সিয়াম মানে মহান আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্ব। এ সংযম, সাধনা কিংবা আল্লাহর ইবাদত অর্জনের জন্য ভালো মন্দ, কল্যাণ এবং অকল্যাণের ব্যবধান এবং বোধ সৃষ্টি করতে হবে। যে বোধ ভালোকে অর্জন এবং মন্দকে বর্জন করতে সাহায্য করবে।
আমরা নদীর মোহনায় দেখি, পাশাপাশি দুটি নদীর পানি। একটি নোনা, অপরটি মিষ্ট। একটি পরিচ্ছন্ন, অপরটি ঘোলাটে। একটি আরেকটির সঙ্গে মিশে না। পবিত্র কোরআনের সুরা আর রাহমানের ১৯, ২০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এর দৃষ্টান্ত দিয়ে বান্দাকে শিখিয়েছেন। দেখ আমার বান্দা, ভালো মন্দ একসঙ্গে থাকবে। কখনো একই রকম মনে হবে। তাই বলে মন্দকে গ্রহণ করা যাবে না।
আল্লাহ তায়ালা দোষ এবং গুণ দুটিই সৃষ্টি করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষ দুটিকে একই রকম দেখা যায়। যেমন বদান্যতা ও অপব্যয়, নম্রতা ও হীনতা, অহঙ্কার ও আত্মমর্যাদাবোধ, আল্লাহর জন্য সম্পর্ক নষ্ট করা এবং রাগের বশবর্তী হয়ে সম্পর্ক নষ্ট করা।
এ সব বিপরিতমুখি দোষ এবং গুণ দেখতে একরকম মনে হলেও এর প্রভাব, প্রতিক্রিয়া উদ্দেশ্য এবং ভিত্তির মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবধান। যেমন দানশীলতার উদ্দেশ্য হয় অন্যের সেবা ও উপকার আর অপব্যয়ের উদ্দেশ্য হয় নিজের ভোগ-বিলাস ও বাবুগিরি। নম্রতার ভিত্তি হয় শিষ্টাচার ও ভদ্রস্বভাব আর হীনতার ভিত্তি হয় লোভ লালসা বা লজ্জাশূন্যতা।
অহঙ্কারের ভিত্তি হয় অপরকে হেয় মনে করা, এর প্রতিক্রিয়া হয় ন্যায় ও সত্যকে উপেক্ষা করা আর আত্মমর্যাদাবোধের ভিত্তি হয় অপমানজনক বিষয়কে এড়িয়ে চলা। যার প্রতিক্রিয়া হয় হীনস্বভাব পরিহার করা। আল্লাহর জন্য রাগান্বিত হওয়া, যার প্রতিক্রিয়া হয় নিজের পছন্দনীয় হলেও আল্লাহ বিরোধী বিষয় পরিহার করা আর ব্যক্তিগত রাগের কারণে সম্পর্ক নষ্ট হলে তা হীনস্বার্থ বিরোধী ভেবে সম্পর্ক নষ্ট হয়, যদিও সে ব্যক্তিটি দোষী না হয়।
ভালো মন্দ দুটিই মানুষের সামনে আসবে। সায়েমের কাজ হবে মন্দ স্বভাব পরিহার করে ভাল গুন অর্জন করা। ভালো গুন চেনার জন্য কোথায়ও যাওয়া লাগে না। মানুষের রুচিবোধ এবং কল্বই বলে দেয়Ñ কোনটি ভালো। কোনটি মন্দ। কোনটি গ্রহণীয়। কোনটি বর্জনীয়। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদিসের বর্ণনা রয়েছে।
সাহাবি ওয়াবেছা রা. নবীজির দরবারে হাজির হলেন। নবীজি বললেন, হে ওয়াবেছা! তুমি নেক-বদ ও ভালো-মন্দের ব্যবধান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসছো? সাহাবি বললেন, জী, ইয়া রাসূলাল্লাহ। নবীজী তার বুকে আলতো থাপ্পর দিয়ে বললেন, ইসতাফতি কল্বাকা। অর্থাৎ ন্যায়-অন্যায় ও ভালো-মন্দের বিচার তোমার বিবেকের কাছে জিজ্ঞেস করো। এ কথাটি তিনবার বলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নেক, সওয়াব এবং ভালো হচ্ছেÑ যার ওপর বিবেক আশ্বস্ত হয়। অন্তর শান্তি পায়। খারাপ ও গুনাহ হচ্ছে, যে ব্যাপারে বিবেকে খটকা লাগে, অন্তরে দ্বিধা ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়।
ভালো স্বভাব অর্জনের জন্য। সুবোধ হওয়া এবং এর ওপর অবিচল থাকার জন্য নবীজী সা. দোয়া করতেন। আল্লাহুম্মা আরিনালহাক্কা হাক্কাও, ওর্য়াজুকনাত্তিবাআ। ওয়া আরিনিল বাতিলা বাতিলাও ওয়ারজুকনাজতিনাবা। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাকে ভালোকে ভালো করে দেখাও, এর ওপর আমল করার তৌফিক দাও এবং মন্দ ও খারাপকে খারাপ করে দেখাও, এর থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দাও।
এভাবে প্রতিদিন সায়েম দোয়া করবে আর নিজের ভেতরকার মন্দ স্বভাবগুলা পরিহার করবে। তাহলেই তো রোজার সুফল পাওয়া যাবে। আল্লাহ আমাদের মন্দ গুন পরিহার করে, ভালো গুন সৃষ্টি করে এবং বেশি বেশি আমল অর্জনের তৌফিক দান করুন।
লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা, ঝাউচর বাজার, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।
আওয়ার ইসলামে লেখা পাঠাতে মেইল করুন- [email protected]
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম