।।মুহাম্মদ হাসান মুরাদ।।
আজ ১০ রমজান। জীবন থেকে দশটি রোজা গত হল। একসময় রমজান মাসই গত হবে। আমাদের অনেকের জীবনে হয়ত রমজানের নতুন হেলাল আর উদতি হবে না। সময় বহতা নদীর মত। বয়ে চলেছে আপন গতিতে অবিরত। বুদ্ধিমান যারা তারা সময়কে মূল্যয়ান করে। অলস-অবহেলায় নষ্ট করে না।
রমজান হলো বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসের প্রতিটি সময় অতিমূল্যবান। জীবনের পাপ-তাপ থেকে পবিত্র হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। জাহান্নাম থেকে নিজেকে মুক্ত করার অপার সম্ভাবনাময় সময়। মুমিনের একটু দৃঢ় সংকল্পই পাল্টে দিতে পারে জীবনের গতিধারা প্রকল্প। আমরা রোজা পালন করি; আল্লহর সন্তুষ্টির আশায়। জাহান্নাম থেকে পরিত্রানের প্রেরণায়। কিন্তু শুধু রোজা রাখাই কি যথেষ্ঠ? উত্তর না। রোজাকে ফলপ্রসূ করতে দুটি বিষয়ে যথাযথ মনোযোগী হতে হবে।
হযরত আবু উবাউদা ইবনু জাররা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, রোজা ঢাল স্বরুপ, যাবৎ না রোজাদার তা নষ্ট করে দেয়। বলা হল হে আল্লাহর রাসুল কিভাবে রোজাদার তা নষ্ট করে ফেলে। বললেন, মিথ্যা বা গীবতের মাধ্যমে।-সহীহ ইবনে খুযাইমা-১৮৯২, নাসাঈী শরীফ-২২৩৫, মাজমাউঝ ঝাওয়ায়েদ
উল্লিখিত হাদীস থেকে বুঝা যায়, রোজা জাহান্নাম থেকে রোজাদারকে ঢালের মত আত্মরক্ষা করবে। তবে রোজাদারকে দুটি বিষয়ে সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। এক. মিথ্যা। দুই. গীবত। রোজাদার এ থেকে বিরত না হলে রোজা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না।
মিথ্যা: যা সত্য নয় তাই মিথ্যা। যা বাস্তব বিবর্জিত তাও মিথ্যা। রাসুল সা. বলেছেন, কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ যে, সে যা শোনে তাই বলে। সুতরাং কোন কথা বিচার-বিবেচনা না করে বলাই মিথ্যা। মিথ্যা বড় অপরাধ। কবিরা গুনাহ। আর রোজা থেকে মিথ্যা বলা পরিমানে আরো বড় অপরাধ। সুতরাং রোজাদার মিথ্যা পরিত্যাগ না করলে সে রোজা থেকে উপকৃত হতে পারবে না। আমরা প্রতিনিয়ত মিথ্যার সাথে মিশে আছি। সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রচার। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মিথ্যার অপপ্রচার। ব্যবস্যা-বাণিজ্য,লেনদেনে সত্য গোপন। জীবনে চলার পথে একে অপরের সাথে নানা অজুহাতে মিথ্যা বলা। সবই এর অর্ন্তভুক্ত।
গীবত: অন্যের অগোচরে,অনুপস্থিথিতিতে তার দোষ চর্চা করার নামই গীবত। গীবত করা, শোনা দুটোই ভয়াবহ অপরাধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত: তোমরা তো একে ঘৃণাই কর।’-সুরা আল-হুজরাত:১২
আয়াতে গীবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাতে তুলনা করা হয়েছে। একেতো মানুষের গাশেত হারাম। তারপর মৃত মানুষ। সুতরাং গীবতের ভয়াবহতা আয়াত থেকে যথেষ্ট অনুমেয়।
হাদীসেও এর দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই। রাসুল সা. এর যমানাতে দুজন মহিলা রোজা রাখল। দিন শেষে তারা খুব ক্লান্ত হয়ে গেল। রাসুল রা. এর কাছে বলা হল ,ইয়া রাসুলাল্লাহ দুুজন মহিলা রোজা রেখেছে। দিন শেষে তারা খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। রাসুল সা. বললেন, তাদেরকে আমরা কাছে নিয়ে আসো। তাদেরকে নবীজির সামনে আনা হল। রাসুল সা. তাদের বমি করতে বললেন। তারা বমি করল। তখন তাদের বমিতে রক্ত বের হল। সবাই অবাক হলেন। তারাতো রোজ ছিল। অনাহারে ছিল। রক্ত মিশ্রিত কোন খাদ্যও খাইনি। তাহলে বমির সাথে রক্ত বের হলে কিভাবে? তখন রাসুল সা. বললেন, এরা দুজন ওই কাজগুলো থেকে তো বিরত থেকেছে, যা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য সময় আল্লাহ হালাল করেছেন। কিন্তু ওই সব কাজ থেকে বিরত থাকেনি, যা সব সময়ের জন্য তাদের উপর হারাম করেছে।-মুসনাদে আহমদ: ২৩৬৫৩। অর্থাৎ তারা দুজন গীবত করেছে।
গীবত করলে মৃত ভায়ের গোশত খাওয়া হয়, এর বাস্তব প্রমান রাসুল সা. নিজে দিলেন। যেন উম্মত এর ভয়াবহতা থেকে দুরে থাকে।
এদুটো সর্ব সময়ে হারাম। তবে রোজাদারের জন্য বাড়তি সতর্কতা। সুতরাং রোজার পুরস্কার হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এ মুক্তি পেতে হলে প্রতিটি রোজাদারকে মিথ্যা,গীবত,পরনিন্দা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ প্রতিটি রোজাদারকে মিথ্যা, গীবত থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করেন । আমিন।।
লেখক: খতিব,ভিমরুল্লা শাহী জামে মসজিদ,চুয়াডাঙ্গা।
-কেএল