।।হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ।।
এতোদিন রহমতের ঝর্ণাধারায় সিক্ত ছিলাম আমরা। এবার মাগফিরাতের স্নিগ্ধ জোয়ার আসছে আমাদের মাঝে। রহমতের ঝর্ণা থেকে আমরা কতটুকু সিক্ত হলাম; আমরা নিজেরাই নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছি। এখন আমাদের সামনে আসছে মাগফিরাত।মাগফিরাতের জোয়ারে তার কোমল ঢেউয়ে আমাদের সকল পাপ-পঙ্কিলতাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার দিতে।
তাই আমরা সকলে মাগফিরাতের এই পবিত্র সময়ে নিজেদের যতভুল, যত গোস্তাখী, যত অপরাধ আর যত গুনা পাপাচার সব কিছু এই সময়ে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নিবো। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টির সূচনাতেই আরশের উপর লিখে দিয়েছেন- ‘নিশ্চয় আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে।’
প্রথম কথা হলো মাগফিরাত শব্দের মুল অর্থই হলো, ‘ক্ষমা’, অর্থাৎ রমজানের মাঝখানের এই দশটি দিন আমাদের সকলের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নিজ গুনাসমুহ ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে।
এজন্যই এই মাসের ক্ষমার সুসংবাদ প্রদান করে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে,যেমন সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির জন্য বদ দোয়া করেছেন, যে রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনা ক্ষমা করাতে পারেনি।
এছাড়াও সিহাহ সিত্তার বেশির ভাগ হাদীস গ্রন্থে রমজানের সুসংবাদ পূর্ণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে এভাবে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি এই মাসের দিনের বেলা রোজা রাখলো, রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পূর্বাপরের সকল গুনা ক্ষমা করে দিবেন। অন্য এক হাদীসে এসেছে আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রতি রাতে প্রথম আকাশে কুদরতি ভাবে আসেন এবং বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য ডাকতে থাকেন। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজানের প্রতিরাতে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। দোয়া করি, আল্লাহ পাক যেনো আমাদের সকলকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।
এছাড়াও বহু হাদিসে পাকে এই রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, এস্তেগফার, কালিমায়ে শাহাদাত পড়া, জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দোয়া, জান্নাত হাসিলের জন্য প্রার্থনা করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। আর রোজাদারের দোয়াতো আল্লাহপাক সব সময় কবুল করেন। এজন্য বেশি বেশি আমরা সকলে দোয়ায় মশগুল থাকার চেষ্টা করবো এবং নিজের কৃত কর্মের জন্য বেশি বেশি এস্তেগফার ও তেলাওয়াতে মনোনিবেশের চেষ্টা করবো।
নৈরাশ্য কিংবা হীনমন্যতায় ভোগার কোন কারন নেই। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও কোরআনুল কারীমের বহু জায়গায় বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষনা দেওয়ার সাথে সাথে বলেন, বরং গুনা সমুহকে নেকী দ্বারাও পরিবর্তন করে দিবেন।সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ পাক সূরা আল ফুরকানের ৭০ নং আয়াতে বলেন, ‘কিন্তু যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
সুরা মারইয়ামের ৬০ নং আয়াতে বলেন, ‘কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন জুলুম করা হবে না।’
সুরা ফুরকানের ৭১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকেই ফিরে আসে।’
মাগফেরাতের এই সময়ে নিজের সকল গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে খালেস দিলে প্রভুর দরবারে তাওবা করা আমাদের জন্য কর্তব্য। কারন, উক্ত আয়াতসমুহের মধ্যেও তওবা করার জন্য আল্লাহ পাক বান্দাকে উৎসাহিত করেছেন। আর তওবার একটি সুন্দর পদ্ধতি আলেমগন বলে থাকেন, তা হলো এভাবে, ‘প্রথমে কৃত গুনাহের কারনে আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হওয়া। তওবার সাথে সাথে ওই গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা। ভবিষ্যতে কখনো এমন গুনাহের মধ্যে লিপ্ত না হওয়ার ব্যাপারে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। কৃতগুনাহ যদি বান্দার হক্ব সম্পর্কীয় হয়; তাহলে যথা সম্ভব তা আদায় করে দেওয়ার চেষ্টা করা।
অতএব আল্লাহ পাক উক্ত আয়াত ও হাদিস অনুযায়ী সংকলক ও তার পাঠক সকলকে বেশী উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুক। আমীন।।
লেখক, ইমাম ও খতীব।
-কেএল