মুফতি আহসান শরিফ।।
মহান আল্লাহ সৃষ্টিজীবের সবাইকে সমান মর্যাদা দেননি। কাউকে কারো ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি ক্ষমতা ও মর্যাদার মালিক। রহমত ও বরতককে বিভাজন তিনিই করেন। তার রহমতের তাওয়াজ্জুহ যে ব্যক্তি বা বস্তুর ওপর পড়ে তা সম্মানিত হয়ে যায়। তার অসন্তুষ্টির দৃষ্টি যার বা যে বস্তুর ওপর পড়ে, তা ধ্বংশ হয়ে যায়।
তিনি আরবের জনমানবহীন অনাবাদ মরুভুমিকে নির্বাচন করেছেন, তা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শহরে পরিণত হয়ে গেছে। তিনি আজরের মতো মূর্তিপুজকের বংশের দিকে রহমতের দৃষ্টি দিয়েছেন, সেখান থেকে নবী ইবরাহিম খলিলুল্লাহর জন্ম হয়েছে। তিনি জিবরাঈল, ইসরাফিল, মিকাইল ও আজরাঈল ফেরেশতাকে অন্যসব ফেরেশতা থেকে মর্যাদা দিয়েছেন। নবী হজরত ইবরাহিম, হজরত মুসা, হজরত ঈসা এবং হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অন্যান্য নবীগণ থেকে বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। রজব, শাবান, মুর্হারম এবং রমজান মাসকে অন্যসব মাস থেকে মর্যাদা দিয়েছেন। হজরত আবু বকর রা., হজরত উমর রা., হজরত উসমান রা. এবং হজরত আলী রা.কে অন্যসব সাহাবি থেকে বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা রহ., ইমাম মালিক রহ., ইমাম শাফেয়ি রহ. এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.কে অন্যসব মানুষ থেকে মর্যাদা দিয়েছেন। এমনিভাবে কদরের রজনি, বরাতের রজনি, দ্ ুঈদের রজনি এবং জুমার রজনিকে তিনি অন্যসব রজনি থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
এখানেও আবার জীবরাঈল আ.কে অন্য সব ফেরেশতার ওপর মর্যাদা দিয়েছেন। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অন্যসব নবী থেকে মর্যাদা দিয়েছেন। কুরআনুল কারিমকে অন্যসব কিতাব থেকে মর্যাদা দিয়েছেন। হজরত আবু বকর রা.কে অন্যসব সাহাবি থেকে মর্যাদা দিয়েছেন। এভাবে জুমার দিনকে সপ্তাহের অন্যসব দিন থেকে মর্যাদা দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ, জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হলে দ্রুত আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। অর্থাৎ বেচাকেনায় প্রকাশ্য লাভ থাকলেও নামাজে রয়েছে এরচেয়ে অধিক লাভ। যা তোমরা দেখ না। [সুরা জুমআ, আয়াত : ০৯]
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সূর্য উঠিত হওয়া দিনগুলোর সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। কেননা, এ দিনে হজরত আদম আলাইহিসসালামের সৃষ্টির পূর্ণতা লাভ করেছে, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।
এই জুমার দিনেই কেয়ামত সংগঠিত হবে। রমজানে জুমার বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে পবিত্র হাদিসে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রতিদিন ইফতারের সময় এমন দশ লাখ পাপিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন যাদের পাপের কারণে জাহান্নাম অনিবার্য হয়ে গেছে। একইভাবে পবিত্র রমজানের জুমার রাতে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মাগরিব থেকে এবং জুমার দিনের মাগরিবের আগ পর্যন্ত জাহান্নাম অনিবার্য ও শাস্তির উপযোগী বলে সাব্যস্ত এমন দশলাখ পাপিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। [কান্জুল উম্মাল]
বহু হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। রমজানের এই জুমার দিনকে মুমিন বড় নেয়ামত মনে করে আমলে জুড়ে থাকবে। দান সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। নফল ইবাদত বেশি বেশি করবে। কুরআন তিলাওয়াতে মনযোগী হবে। কুরআনের অনুবাদ ও তাফসির নিয়ে গবেষণা করবে। কুরআনের হাফেজ আলেমদের খেদমতের চেষ্টা করবে। নবীজীবনী এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে মনিমুক্তা আহরণের চেষ্টা চালাবে। বুজুর্গদের জীবনী থেকে আমলের রশদ সংগ্রহ করবে। দোয়ার আমল করবে। এদিনের বিশেষ একটি মুহূর্তে দোয়া কবুল হয়। তা যে কোন সময়ে হতে পারে। রমজানে তো এমনিতেই সারাদিন দোয়া কবুল হয়। এ জন্য নিজের, বাবা মা, ভাই বোন, স্ত্রী, ছেলে মেয়ে ও আপন পর সবার জন্য দোয়া করা চাই। নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা চাই। রমজানের জুমআ মুমিনের জন্য পরম প্রাপ্তি। আল্লাহ আমাদেরকে আমলের তাওফিক দান করুন।
লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা, ঝাউচর বাজার, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।
-এটি