মুফতি মুহাম্মদ ওসমান সাদেক ।।
পবিত্র মাহে রমযান এলে কুরআনের একজন জীবন্ত বাহক বাহরুল উলূম হযরত মাওলানা মুফতি যর ওয়ালী খানের কথা (রাহিমাহুল্লাহ) খুব বেশি মনে পড়ে। বস্তুত তিনি ছিলেন হাদীস ও তাফসীর জগতের বড় পন্ডিত এবং ফিক্হ শাস্ত্রের বিদগ্ধ একজন আলেম।
ইলমী ময়দানের এই অশ্বারোহীকে খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। মন বাগানে হযরতের অনেক স্মৃতির কথা জমা আছে।
করাচীর অভিজাত এরিয়া গুলশান ইকবালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি মাদরাসা রয়েছে। জামেয়া আহসানুল উলূম নামে যার সুখ্যাতি রয়েছে। এখানে তিনি প্রতি রমযানে মাস ব্যাপি কুরআনুল কারীমের নিয়মিত তাফসীর করতেন। দূর দুরান্ত থেকে পঙ্গপালের মতো সর্ব শ্রেণীর মানুষ ছুটে আসতো কুরআনের সেই আলোকিত আসরে। আলেম উলামা ছাড়াও ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার , ব্যারিষ্টারসহ নানা পেশার লোকদের মিলনমেলায় পরিণত হতো এই আসর।
মাঝে মধ্যে আমি অধম ও এই দরসে শরীক হতাম। পবিত্র রমযানের সাথে মহাগ্রন্থ আলকুরআনের কতো গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক তা এই ঐতিহাসিক দরসের পরতে পরতে ফুটে উঠতো।
শ্রোতারা হযরত মাওলানার জ্ঞানগর্ব মজলিশে বসে কুরআনপ্রেমের গভীর জলে হাবুডুবু খেতেন। হৃদয় তাদের কুরআনের ভালোবাসায় সিক্ত হতো।
এক মজলিশে তিনি وآتينا داوود زبورا উপরোক্ত আয়াতটি তাফসীর করার সময় সকল আসমানী কিতাবের উপর কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও তার মু'জেযার কথা বয়ান করতে গিয়ে এক প্রসঙ্গে বলেন, শরীয়তের নিয়ম হলো তারাবীহতে হাদর তথা কুরআন তেলাওয়াতকে সাধারণ নিয়মের চেয়ে একটু দ্রুত পড়া। ফরজ নামাজের মতো যদি ধীরে তেলাওয়াত করা হয় তবে এতে সাধারণ মুসল্লীদের কষ্ট হবে। অনেক সময় তারা এতে বিরক্তবোধ করতে পারে।
অতঃপর তিনি বলেন, কুরআনকে দ্রুত পড়তে পারা এটাও কুরআনের অন্যতম মু'জিযাহ। সালাফ সালেহীনদের মধ্যে অনেকেই তেলাওয়াতকে খুব দ্রুতভাবে করতেন। এর ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে। অবশ্য তাঁরা তারতীলের রেআয়ত ও করতেন।
কুরআনের পাখী হযরত শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহিমাহুল্লাহর ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে মুফতি যার ওয়ালি খান বলেন, শাহ সাহেব আছর নামাজের পর কুরআন তেলাওয়াতে বসতেন। আর মসজিদে মাগরিবের আযান ধ্বনিত হওয়ার পূর্বেই এক খতম আদায় করে ফেলতেন। (সুবহানাল্লাহ!)
আশ্চর্যের বিষয় হলো সেই মজলিশে বড় বড় আলেমরাও উপস্থিত থাকতেন। তারাও বিষয়টিকে আশ্চর্যজনক মনে করতেন এবং এটাকে তাঁর যিন্দা কারামত বলে জানতেন।
আরেকজন বুযুর্গ সাধক যিনি শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী নামে খ্যাত তিনি নাকি ঘন্টায় 65 বার কুরআন খতম করতে সক্ষম হতেন। (সুবহানাল্লাহ)
এ দুটি ঘটনা উল্লেখ করে মুফতি যার ওয়ালি খান বলেন, এভাবে আরো অনেক মণীষীর কথা ইতিহাসের পাতায় রয়েছে, যাঁরা অতি অল্প সময়ে অনেক গুলো কুরআনের খতম আদায় করেছেন। একদিকে এটা যেমন পবিত্র কুরআনের মু'জেযা ও অলৌকিকত্বের প্রমাণ বহন করে একি সাথে তা সে সব সালেহীনদের জীবন্ত কারামাত বলে ও প্রতীয়মান হয়।
লিখক: পরিচালক, মারকাযুর রাশাদ মাদরাসাদ, চট্টগ্রাম
আওয়ার ইসলামে আপনার মূল্যবান লেখাটি পাঠাতে মেইল করুন[email protected]
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম